গর্ভাবস্থায় একজন নারীর শরীরে ঘটে হাজারো পরিবর্তন। এই সময়টিতে একজন মায়ের শরীরকে যেমন প্রস্তুত হতে হয়, তেমনি গর্ভের শিশুকেও পুষ্টির মাধ্যমে গড়ে তুলতে হয় সঠিকভাবে। তবে, শুধুমাত্র খাবারের মাধ্যমেই এই পুষ্টি চাহিদা পূরণ অনেক সময় সম্ভব হয় না। এ কারণেই ফলিক এসিড ট্যাবলেট খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। বিশেষ করে গর্ভাবস্থার শুরু থেকে সন্তান জন্মের পরে কিছু সময় পর্যন্ত এই ট্যাবলেট খাওয়ার সঠিক নিয়ম মেনে চলা মা ও শিশুর জন্য জীবন রক্ষাকারী ভূমিকা রাখতে পারে।

এখন প্রশ্ন—ফলিক এসিড ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম কী? কেন এটি খাওয়া দরকার? কখন শুরু করতে হবে? কোন ব্র্যান্ডের ট্যাবলেট ভালো? আজকের এই লেখায় এসব প্রশ্নের উত্তরসহ অনেক কিছুই থাকছে।

Table of Contents

ফলিক এসিড কী এবং এর ভূমিকা কী?

ফলিক এসিড আসলে হলো ভিটামিন বি৯ এর একটি কৃত্রিম রূপ। এটি আমাদের শরীরের কোষ বিভাজন, রক্ত তৈরির মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোতে সরাসরি অংশ নেয়। প্রাকৃতিকভাবে ভিটামিন বি৯ পাওয়া যায় ‘ফোলেট’ নামে, যা পাওয়া যায় শাকসবজি, ফলমূল এবং বাদামে।

তবে গর্ভাবস্থায় শরীরের ফলিক অ্যাসিডের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়, যা শুধুমাত্র খাবার থেকে পূরণ করা বেশ কঠিন। এজন্য চিকিৎসকেরা পরামর্শ দেন ফলিক এসিড ট্যাবলেট গ্রহণের।


কেন গর্ভাবস্থায় ফলিক এসিড জরুরি?

ফলিক এসিড গর্ভধারণের শুরুতেই গর্ভের শিশুর নিউরাল টিউব গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই টিউব থেকেই শিশুর ব্রেইন এবং স্নায়ুতন্ত্র তৈরি হয়।

ফলিক অ্যাসিডের অভাব হলে হতে পারে মারাত্মক কিছু সমস্যা:

  • অ্যানেনসেফালি: শিশুর ব্রেইন এবং মাথার খুলি সঠিকভাবে গড়ে না ওঠা

  • স্পাইনা বিফিডা: মেরুদণ্ড সঠিকভাবে না গঠানো

এছাড়া গর্ভাবস্থায় ফলিক এসিড নিয়মিত না খেলে হতে পারে:

  • রক্তশূন্যতা বা মেগালোব্লাস্টিক অ্যানিমিয়া

  • শিশুর জন্মের সময় কম ওজন

  • প্রসবের সময় জটিলতা


ফলিক এসিড ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম

এটাই আমাদের মূল আলোচনার বিষয়। সঠিক নিয়মে না খেলে ফলিক অ্যাসিডের কার্যকারিতা অনেক কমে যেতে পারে।

প্রতিদিন কতটুকু খাবেন?

  • গর্ভবতী নারীদের প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৬০০ মাইক্রোগ্রাম ফলিক এসিড প্রয়োজন

  • কিছু ক্ষেত্রে ডাক্তার ৫ মিলিগ্রাম ডোজও দিতে পারেন

কখন খেতে হবে?

  • সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা শুরু করার সাথে সাথে খাওয়া শুরু করা উচিত

  • চালিয়ে যেতে হবে সন্তান জন্মের পর ৩ মাস পর্যন্ত

কিভাবে খেতে হবে?

  • খালি পেটে খেলে ফল বেশি দেয়

  • খাবারের ১ ঘণ্টা আগে বা ২ ঘণ্টা পরে খাবেন

  • পেটে সমস্যা হলে খাওয়ার পরেও খাওয়া যায়

  • চা, দুধ ও ক্যালসিয়ামের সাথে একসাথে খাবেন না

  • কমলার রস দিয়ে খেলে আয়রন ভালোভাবে শোষিত হয়

গুরুত্বপূর্ণ টিপস:

  • অ্যান্টাসিড ও ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট খেলে ১ ঘণ্টা আগে বা ২ ঘণ্টা পরে ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট খেতে হবে।

মূল বিষয় হাইলাইট:
“ফলিক এসিড ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম” মানে হলো – সঠিক সময়ে, সঠিক ডোজে এবং সঠিক খাদ্য ব্যবস্থার সাথে ফলিক অ্যাসিড গ্রহণ করা।


আয়রন ফলিক এসিড ট্যাবলেট এর কাজ কি?

এই ট্যাবলেট শুধুমাত্র ফলিক এসিড নয়, অনেক সময় এতে ফেরাস ফিউমারেট (আয়রন) যোগ করা থাকে।

এটি একসাথে শরীরকে:

  • রক্তশূন্যতা থেকে রক্ষা করে

  • মায়ের শরীরে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করে

  • শিশুর কোষ গঠন এবং অক্সিজেন সরবরাহে সহায়তা করে

ফেরাস ফিউমারেট ও ফলিক এসিড ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম ও অন্যান্য আয়রন সাপ্লিমেন্টের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য।


ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট কোথায় পাবেন?

বাংলাদেশের বেশিরভাগ সরকারি হাসপাতালে এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-এ গর্ভবতী নারীদের বিনামূল্যে দেওয়া হয় আয়রন-ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট।

আর ফার্মেসিতে যেসব ব্র্যান্ড পাওয়া যায়:

ব্র্যান্ড নাম কোম্পানি
ফেরো প্লাস এমিকো ল্যাবরেটরিজ
ফিওফল সিআই এস কে এফ ফার্মাসিউটিক্যালস
ফেরিগান মেডিমেট ফার্মা
ফেরোস্প্যান ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল
জিফ সিআই স্কয়ার ফার্মা
প্রিনিড সিআই ইনসেপ্টা ফার্মা

আপনি চাইলেই নিকটস্থ ফার্মেসিতে গিয়ে এগুলো পেতে পারেন।


ভুল ধারণা ভেঙে দেওয়া যাক

অনেকেই মনে করেন, গর্ভধারণের প্রথম ৩ মাসে আয়রন খাওয়া যাবে না। এই ধারণা ভুল। বরং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) বলছে, গর্ভধারণের পরপরই আয়রন ও ফলিক এসিড খাওয়া শুরু করা উচিত।

এই ট্যাবলেট:

  • রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ করে

  • প্রি-ম্যাচিউর বেবি হওয়ার ঝুঁকি কমায়

  • শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশে সাহায্য করে


সংক্ষিপ্তভাবে কিছু পয়েন্ট

  • ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম জানতে ডাক্তারকে জানানো বাধ্যতামূলক

  • ফলিক অ্যাসিড খাওয়া শুরু করুন সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনার সাথে সাথেই

  • ফলিক অ্যাসিড ও আয়রনের ডোজ ঠিকঠাক মেনে চলুন

  • খালি পেটে খাওয়া ভালো, তবে সমস্যা হলে খাবারের পরেও খাওয়া যায়

  • চা, দুধ, ক্যালসিয়াম এবং অ্যান্টাসিড এড়িয়ে চলুন ট্যাবলেট খাওয়ার সময়

অতিরিক্ত ফলিক এসিড কখন প্রয়োজন?

সব সময় যে ৪০০-৬০০ মাইক্রোগ্রাম ফলিক অ্যাসিড যথেষ্ট হবে তা নয়। কিছু ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্রে বেশি ডোজ প্রয়োজন হতে পারে। এক্ষেত্রে সাধারণত ৫ মিলিগ্রাম (৫০০০ মাইক্রোগ্রাম) পর্যন্ত ডোজ প্রেসক্রাইব করেন ডাক্তার।

এই অবস্থায় বেশি ডোজ লাগতে পারে:

  • আপনি যদি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন

  • আপনার ওজন যদি অতিরিক্ত হয়

  • আপনার থ্যালাসেমিয়া বা সিকেল সেল অ্যানিমিয়া থাকে

  • আপনি যদি এপিলেপ্সি বা খিঁচুনির ওষুধ খান

  • HIV চিকিৎসার অ্যান্টি-রেট্রোভাইরাল থেরাপিতে থাকেন

  • আপনার বা শিশুর বাবার পরিবারের কারো নিউরাল টিউব ডিফেক্ট এর ইতিহাস থাকলে

  • আগে কোনো সন্তান জন্মগত নিউরাল সমস্যা নিয়ে জন্ম নিয়েছে

এসব ক্ষেত্রে অবশ্যই রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ডোজ নির্ধারণ করতে হবে।


ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার: ট্যাবলেটের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সাপোর্ট

ট্যাবলেটের পাশাপাশি খাবারের মাধ্যমে ফোলেট গ্রহণ করাও জরুরি। তবে সমস্যা হলো, রান্না করলে খাবারে থাকা ফোলেট অনেকটাই নষ্ট হয়ে যায় এবং শরীর সহজে তা জমা রাখে না। তাই প্রতিদিন খাবারের তালিকায় ফোলেটসমৃদ্ধ খাবার রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবারের তালিকা

খাবার ফোলেটের উৎস
পালং শাক, পুঁইশাক, পাট শাক ফোলেট
ঢেঁড়স, ফুলকপি, ব্রকলি প্রাকৃতিক ভিটামিন বি৯
ডাল (ছোলা, মুগ, মাসকলাই) আয়রন ও ফোলেট
কমলা ভিটামিন C ও ফোলেট
চিনাবাদাম স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ও ফোলেট
  • প্রতিদিন খাবারের সঙ্গে এই উপাদানগুলো রাখলে শরীরে ফলিক অ্যাসিডের ঘাটতি কিছুটা পূরণ হয়।
  • তবে মনে রাখতে হবে—শুধু খাবারের উপর নির্ভর করলে প্রয়োজনীয় পরিমাণে ফোলেট পাওয়া সম্ভব না

গর্ভাবস্থায় কোন মাল্টিভিটামিন খাবেন?

অনেকেই গর্ভধারণের আগে থেকেই মাল্টিভিটামিন খেতে শুরু করেন। তবে গর্ভধারণ নিশ্চিত হওয়ার পর উচিত গর্ভাবস্থার জন্য উপযোগী স্পেশাল মাল্টিভিটামিন সাপ্লিমেন্ট নেওয়া।

গর্ভকালীন মাল্টিভিটামিনে থাকা উচিত:

  • ৪০০-৬০০ মাইক্রোগ্রাম ফলিক অ্যাসিড

  • আয়রন (প্রায় ৩০-৬০ মিলিগ্রাম)

  • ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক, ভিটামিন D ও B12

যদি মাল্টিভিটামিন সাপ্লিমেন্টে ইতোমধ্যে সঠিক পরিমাণে আয়রন ও ফলিক অ্যাসিড থাকে, তাহলে আলাদাভাবে এই ট্যাবলেট খাওয়ার প্রয়োজন নেই।


ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট এর দাম কত?

বাংলাদেশে এই ট্যাবলেট অনেকটাই বাজেট-ফ্রেন্ডলি। সরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। তবে ফার্মেসিতে কিনলে সাধারণত দাম হয়:

  • ২–৫ টাকা প্রতি ট্যাবলেট

  • পুরো মাসের প্যাকেট (৩০ ট্যাবলেট): ৬০–১৫০ টাকা, ব্র্যান্ডভেদে ভিন্ন হয়

দাম কম হলেও এর কার্যকারিতা অনেক বেশি—মায়ের ও শিশুর ভবিষ্যৎ নির্ভর করতে পারে এই ছোট্ট ট্যাবলেটের উপর।


ফলিক এসিড ট্যাবলেট এর ছবি দেখার দরকার?

অনেকে ট্যাবলেট কেনার সময় নিশ্চিত হতে চান সঠিক ট্যাবলেট কিনছেন কি না। তাই আপনি চাইলে এই ট্যাবলেটের ব্র্যান্ড নাম সার্চ করে ছবি দেখে নিতে পারেন।

নিচে কিছু জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের ছবি Google-এ খুঁজে পাবেন:

  • Fero Plus

  • Feofol CI

  • Ferospan

  • Jif CI

  • Prinid CI

আপনার সুবিধার্থে ফার্মাসিস্টকে ব্র্যান্ড নামটি লিখে দেখালেই হবে।


গর্ভাবস্থায় ফলিক এসিড ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম — এক নজরে

এই অংশটি আমরা সংক্ষিপ্ত বুলেট পয়েন্টে উপস্থাপন করছি যেন পাঠকের কাছে আরও পরিষ্কার হয়।

কখন থেকে খাওয়া উচিত?
সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা করার সাথে সাথে শুরু করুন

কতদিন খেতে হবে?
সন্তান জন্মের ৩ মাস পর্যন্ত খাওয়া উচিত

কত ডোজ প্রয়োজন?
প্রতিদিন ৪০০-৬০০ মাইক্রোগ্রাম, ঝুঁকি থাকলে ৫ মিলিগ্রাম

কিভাবে খাবেন?
খালি পেটে ভালো, সমস্যা হলে খাওয়ার পর
চা, দুধ, ক্যালসিয়াম, অ্যান্টাসিড এড়িয়ে চলুন
১ গ্লাস পানি/কমলার রস দিয়ে খেতে পারেন

সাবধানতা:
ডাক্তারকে না জানিয়ে কখনোই ডোজ বাড়াবেন না
অন্যান্য ওষুধের সঙ্গে যেন সংঘর্ষ না হয়, সেটিও লক্ষ্য করুন


সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQs)

১. সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা করার সময় থেকেই কেন ফলিক অ্যাসিড খেতে হয়?

কারণ গর্ভধারণের প্রথম সপ্তাহেই শিশুর স্নায়ুতন্ত্র গঠন শুরু হয়, তখন ফলিক অ্যাসিড ঘাটতি থাকলে জন্মগত সমস্যা হতে পারে।

২. গর্ভাবস্থায় ফলিক অ্যাসিড কতদিন খেতে হয়?

গর্ভধারণের শুরু থেকে সন্তান জন্মের পরে ৩ মাস পর্যন্ত খাওয়া উচিত।

৩. আয়রন ও ফলিক এসিড ট্যাবলেট কোথায় পাওয়া যায়?

সরকারি হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং ফার্মেসিতে পাওয়া যায়। অনেক ক্ষেত্রে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়।

৪. ফলিক অ্যাসিড খাওয়ার পর বমি বমি ভাব হলে কী করব?

এক্ষেত্রে খাবারের সাথে খেতে পারেন। অথবা ডাক্তার বিকল্প ফর্মুলা দিতে পারেন।

৫. ফলিক অ্যাসিড কি সব সময় দরকার?

না, শুধু গর্ভধারণের পরিকল্পনা, গর্ভকালীন সময় ও কিছু বিশেষ রোগের ক্ষেত্রেই দরকার পড়ে।

৬. ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট ছাড়াও প্রাকৃতিকভাবে কিভাবে পাব?

ফোলেট সমৃদ্ধ খাবার—শাকসবজি, ফল, বাদাম ইত্যাদি খেয়ে পাওয়া যায়।


উপসংহার

ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম জানা এবং তা মেনে চলা গর্ভবতী নারীর জন্য যেমন জরুরি, তেমনি গর্ভধারণের পরিকল্পনা করা নারীর জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। একটি ছোট্ট ট্যাবলেট প্রতিদিন খাওয়া—এই ছোট সিদ্ধান্তটিই আপনার শিশুর ভবিষ্যৎ বিকাশে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।

আমরা আশাবাদী, আপনি এই লেখাটি থেকে ফলিক অ্যাসিডের প্রয়োজনীয়তা, সঠিক খাওয়ার পদ্ধতি, সময়, ব্র্যান্ড, খাবারের তালিকা ও ভুল ধারণা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পেয়েছেন। আপনি যদি মা হতে চলেছেন অথবা কাউকে এই সময় সহায়তা করতে চান—তাহলে এই তথ্যগুলো অবশ্যই কাজে লাগবে।

Share.

At Doctorguideonline, we believe that everyone deserves access to reliable information. Our mission is to take better care of their bodies and minds by providing high-quality content on beauty care, digestive health, women’s wellness, natural remedies, lifestyle tips, and general health care advice.

Leave A Reply

Exit mobile version