পাইলস হলে কি কি খাওয়া নিষেধ
পাইলস হলে মশলাযুক্ত খাবার, মাংস, এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া নিষেধ। আঁশযুক্ত খাবার ও প্রচুর পানি পান করা উচিত। পাইলস একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা, যা মলদ্বারের আশেপাশে ফোলাভাব ও রক্তক্ষরণ ঘটায়। এই অবস্থায় খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক খাদ্যাভ্যাস পাইলসের উপসর্গ কমাতে সাহায্য করে। আজকে আমরা পাইলস হলে কি কি খাওয়া নিষেধ এই বিষয়ে জানবো।
আঁশযুক্ত খাবার হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে। প্রক্রিয়াজাত খাবার, মশলাযুক্ত খাবার এবং মাংস পাইলসের উপসর্গ বাড়াতে পারে। প্রচুর পানি পান করা শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে এবং মলকে নরম করে। তাই পাইলসের রোগীদের এই বিষয়গুলো মেনে চলা উচিত। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও সঠিক খাদ্যাভ্যাস পাইলস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক।
Table of Contents
পাইলস কি এবং এর প্রকারভেদ
পাইলস একটি সাধারণ সমস্যা যা মলদ্বারের চারপাশে রক্তনালী ফুলে ওঠা দ্বারা হয়। এটি অনেক কষ্টকর হতে পারে এবং এর বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে। নিচে আমরা পাইলসের পরিচিতি এবং এর প্রকারভেদ নিয়ে আলোচনা করব।
পাইলস পরিচিতি
পাইলস হল মলদ্বারের চারপাশের রক্তনালীগুলির ফোলা বা প্রদাহ। সাধারণত এটি মলত্যাগের সময় ব্যথা, রক্তপাত এবং অস্বস্তি সৃষ্টি করে। পাইলসের সমস্যা যেকোনো বয়সের মানুষের হতে পারে।
পাইলসের প্রকারভেদ
প্রকার | বর্ণনা |
---|---|
অভ্যন্তরীণ পাইলস | এই প্রকার পাইলস মলদ্বারের ভিতরে অবস্থান করে। এটি সাধারণত দেখা যায় না, কিন্তু রক্তপাত হতে পারে। |
বাহ্যিক পাইলস | এই প্রকার পাইলস মলদ্বারের বাইরের দিকে থাকে। এটি সহজেই দেখা যায় এবং ব্যথা ও অস্বস্তি বেশি হয়। |
প্রল্যাপ্সড পাইলস | এই প্রকার পাইলস মলদ্বারের বাইরে এসে যায়। এটি খুব কষ্টকর এবং চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। |
থ্রম্বোসড পাইলস | এই প্রকার পাইলসের মধ্যে রক্ত জমাট বাঁধে। এটি খুবই ব্যথাযুক্ত এবং তৎক্ষণাৎ চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। |
পাইলসের প্রকারভেদ জানলে এর চিকিৎসা সহজ হয়। সঠিক চিকিৎসা ও খাদ্যাভ্যাস মানলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
পাইলস হলে খাবারের গুরুত্ব
পাইলসের সমস্যা হলে খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক খাবার পাইলস উপশমে সাহায্য করে। ভুল খাদ্যাভ্যাস পাইলসের সমস্যা বাড়িয়ে তোলে। তাই সঠিক খাদ্য নির্বাচন অপরিহার্য।
খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন
পাইলসের সমস্যা থাকলে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। প্রথমেই ঝাল-মশলাদার খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। তৈলাক্ত এবং ভাজা খাবার পরিত্যাগ করা ভালো।
নিয়মিত সময়ে খাবার গ্রহণ করতে হবে। অতিরিক্ত পরিমাণে না খেয়ে অল্প পরিমাণে বারবার খাবার খাওয়া উচিত। তাজা সবজি এবং ফলমূল খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
আহারে ফাইবারের ভূমিকা
ফাইবার পাইলসের সমস্যা কমাতে অনেক কার্যকর। ফাইবারযুক্ত খাবার পায়খানাকে নরম করে, যা পাইলসের উপশমে সাহায্য করে।
- তাজা ফলমূল
- সবজি
- পুরো শস্য
- ডাল
ফাইবারযুক্ত খাবার খাবার পাইলসের সমস্যা কমাতে কার্যকর। প্রতিদিন অন্তত ২০-৩০ গ্রাম ফাইবার গ্রহণ করা উচিত।
খাবার | ফাইবারের পরিমাণ (গ্রাম প্রতি ১০০ গ্রাম) |
---|---|
অ্যাপল | ২.৪ |
ব্রকলি | ২.৬ |
ব্রাউন রাইস | ৩.৫ |
চিক পি | ৭.৬ |
পাইলস হলে নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য খাবারসমূহ
পাইলস হলে কিছু খাবার খাওয়া নিষেধ। এই খাবারগুলি রোগের সমস্যা বাড়ায়। নিচে নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য খাবারসমূহ নিয়ে আলোচনা করা হলো।
মশলাদার খাবার
পাইলস রোগীদের মশলাদার খাবার এড়ানো উচিত। মশলাদার খাবার অন্ত্রে জ্বালা তৈরি করে। এতে রক্তপাতের ঝুঁকি থাকে।
- লাল মরিচ
- গরম মসলা
- তরকারি গুঁড়া
উচ্চ চর্বি যুক্ত খাবার
উচ্চ চর্বি যুক্ত খাবার পাইলস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর। এই খাবারগুলি হজমে সমস্যা তৈরি করে।
খাবার | কারণ |
---|---|
ফাস্ট ফুড | অতিরিক্ত চর্বি |
ভাজা খাবার | হজমে সমস্যা |
চিজ | চর্বি বেশি |
পাইলস হলে প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলা
পাইলস হলে প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ধরনের খাবার হজমে সমস্যা সৃষ্টি করে এবং পাইলসের ব্যথা বাড়ায়। প্রক্রিয়াজাত খাবার সাধারণত ফাইবার কম এবং সল্ট, চিনি এবং প্রিজারভেটিভ বেশি থাকে। এগুলো পাইলসের জন্য ক্ষতিকর। নিচে কিছু প্রক্রিয়াজাত খাবারের উদাহরণ দেওয়া হলো যা এড়িয়ে চলা উচিত।
চিপস এবং স্ন্যাকস
চিপস এবং স্ন্যাকস প্রক্রিয়াজাত খাবারের মধ্যে অন্যতম। এই ধরনের খাবারে প্রচুর পরিমাণে লবণ এবং প্রিজারভেটিভ থাকে। চিপস এবং স্ন্যাকস কোনো ফাইবার সরবরাহ করে না। এটি পাইলসের ব্যথা বাড়িয়ে তোলে। প্রাকৃতিক ফল এবং সবজি খাওয়া ভালো। এই খাবারগুলো পাইলসের জন্য উপকারী।
ক্যান্ড খাবার
ক্যান্ড খাবার হজমে সমস্যা করে। এই ধরনের খাবার চিনি এবং প্রিজারভেটিভে পূর্ণ। ক্যান্ড খাবার পাইলসের ব্যথা বাড়িয়ে তোলে। প্রাকৃতিক মিষ্টি ফল খাওয়া ভালো। এই খাবারগুলো পাইলসের জন্য উপকারী।
প্রক্রিয়াজাত খাবার | বিকল্প |
---|---|
চিপস | তাজা ফল |
ক্যান্ড খাবার | প্রাকৃতিক মিষ্টি ফল |
পাইলস হলে ক্যাফেইন এবং অ্যালকোহলের প্রভাব
পাইলস রোগীদের জন্য খাদ্যাভ্যাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ক্যাফেইন এবং অ্যালকোহল পাইলসের জন্য ক্ষতিকর। এই উপাদানগুলো পাইলসের উপসর্গ বাড়িয়ে দেয়।
চা ও কফি
চা এবং কফি দুটোতেই প্রচুর ক্যাফেইন থাকে। ক্যাফেইন শরীরের পানির মাত্রা কমিয়ে দেয়। এতে কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়ে, যা পাইলসের জন্য ক্ষতিকর।
- কফি: দিনে এক কাপের বেশি না খাওয়া ভালো।
- চা: ক্যাফেইনমুক্ত চা খাওয়া উচিত।
অ্যালকোহল সেবন
অ্যালকোহল শরীরের পানির মাত্রা কমায়। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়িয়ে দেয়। পাইলসের জন্য এটি খুবই ক্ষতিকর।
- বিয়ার: বিয়ার বেশি পান না করাই ভালো।
- ওয়াইন: অল্প পরিমাণ ওয়াইন খেতে পারেন।
উপাদান | প্রভাব |
---|---|
চা | কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়ায় |
কফি | পাইলসের উপসর্গ বাড়ায় |
অ্যালকোহল | শরীরের পানির মাত্রা কমায় |
পাইলস হলে লবণ ও চিনির ব্যবহার সীমিত করা
পাইলসের সমস্যা থাকলে খাদ্যাভ্যাসে কিছু পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। লবণ ও চিনির ব্যবহার সীমিত করা পাইলসের উপশমে সহায়ক হতে পারে। নিচে এই বিষয়ে বিশদ আলোচনা করা হলো।
লবণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ
লবণ বেশি খেলে দেহে পানি ধরে রাখে। এতে মল কঠিন হয়ে যায়।
প্রতিদিন ৫ গ্রামের বেশি লবণ খাওয়া উচিত নয়।
লবণযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। বিশেষ করে প্রক্রিয়াজাত খাবার।
খাবার | লবণের পরিমাণ (গ্রাম) |
---|---|
প্রক্রিয়াজাত মাংস | ২-৩ গ্রাম |
চিপস | ১-২ গ্রাম |
তেলেভাজা খাবার | ২ গ্রাম |
চিনি সমৃদ্ধ খাবার
চিনি বেশি খেলে দেহে ফাইবারের অভাব হয়। এতে মল কঠিন হয়।
প্রতিদিন ২৫ গ্রামের বেশি চিনি খাওয়া উচিত নয়।
- সফট ড্রিঙ্ক
- মিষ্টি
- প্যাকেটজাত জুস
ফলমূল ও সবজি বেশি খান। এতে প্রাকৃতিক চিনি থাকে।
পাইলস এর জন্য ফল এবং সবজি
পাইলস রোগীদের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবারের গুরুত্ব অপরিসীম। বিশেষ করে ফল এবং সব্জি খাওয়া খুবই উপকারী। এগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরকে সুস্থ রাখে। পাইলসের জন্য ফল এবং সব্জি খাওয়ার বিষয়ে কিছু বিশেষ দিক রয়েছে যা রোগীদের মানতে হবে।
ফাইবার সমৃদ্ধ ফল
ফাইবার সমৃদ্ধ ফল পাইলসের জন্য খুবই উপকারী। এগুলো হজম প্রক্রিয়া সহজ করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। কিছু ফাইবার সমৃদ্ধ ফলের উদাহরণ নিচে দেওয়া হলো:
- আপেল – আপেলে প্রচুর ফাইবার থাকে যা হজম প্রক্রিয়া সহজ করে।
- পেয়ারা – পেয়ারা পাইলস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী।
- পেয়ারা – পেয়ারা পাইলস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী।
সবজি এবং সালাদ
সব্জি এবং সালাদ পাইলস রোগীদের খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। এগুলো শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়ক এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। নিচে কিছু সব্জি এবং সালাদ দেওয়া হলো:
- শাক – শাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে।
- গাজর – গাজরে ভিটামিন এবং খনিজ পাওয়া যায়।
- ব্রকলি – ব্রকলিতে প্রচুর ফাইবার থাকে যা হজম প্রক্রিয়া সহজ করে।
পাইলস রোগীদের জন্য ফল এবং সব্জি খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্যতালিকায় ফাইবার সমৃদ্ধ ফল এবং সব্জি অন্তর্ভুক্ত করলে পাইলসের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
পাইলস চিকিৎসায় জীবনযাপনের পরিবর্তন
পাইলস একটি যন্ত্রণাদায়ক সমস্যা। এর সমাধানে জীবনযাপনের কিছু পরিবর্তন প্রয়োজন। এই পরিবর্তনগুলি আপনার সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে।
শারীরিক ব্যায়াম
শারীরিক ব্যায়াম পাইলসের চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত ব্যায়াম করলে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। এতে পাইলসের ব্যথা কমে যায়।
- প্রতিদিন হাঁটা
- যোগব্যায়াম
- হালকা জগিং
পানি পানের গুরুত্ব
পাইলসের সময় পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। পানি শরীরের বর্জ্য দূর করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন অন্তত ৮ গ্লাস পানি পান করুন।
পানির পরিমাণ (লিটার) | প্রতিদিনের প্রয়োজন |
---|---|
২.৫ – ৩ লিটার | প্রাপ্তবয়স্ক |
১.৫ – ২ লিটার | শিশু |
Frequently Asked Questions
কি কি খাবার খেলে পাইলস বাড়ে?
পাইলস বাড়াতে মশলাদার খাবার, ফাস্ট ফুড, প্রক্রিয়াজাত খাবার, কম ফাইবারযুক্ত খাবার এবং অ্যালকোহল খাওয়া উচিত নয়। এসব খাবার কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়িয়ে পাইলসের সমস্যা বাড়াতে পারে।
দুধ কি পাইলসের জন্য ক্ষতিকর?
দুধ পাইলসের জন্য সাধারণত ক্ষতিকর নয়। তবে কিছু মানুষের জন্য দুধ হজমে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
পাইলসের জন্য কোন ডাক্তার দেখাতে হবে?
পাইলসের জন্য সাধারণত একজন প্রোক্টোলজিস্ট বা কোলোরেক্টাল সার্জনের পরামর্শ নিতে হবে। এছাড়া গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্টও সাহায্য করতে পারেন।
পাইলস হলে কি কি ক্ষতি হয়?
পাইলস হলে রক্তপাত, ব্যথা, খোসপাঁচড়া, মলদ্বারে অস্বস্তি এবং মল ত্যাগে সমস্যা হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে সংক্রমণও হতে পারে।
Conclusion
পাইলস হলে খাদ্যাভ্যাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তেল, মশলাদার ও মাংসজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। প্রচুর পরিমাণে পানি পান ও আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া প্রয়োজন। সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চললে পাইলসের সমস্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। সচেতন থাকুন, সুস্থ থাকুন।