আমাদের সবারই জানা উচিত অস্বাস্থ্যকর খাবারের তালিকা কোনটি। এই তালিকা অনুসরণ করে এবং স্বাস্থ্যকর খাবার বেছে নিয়ে আপনি দীর্ঘ ও সুস্থ জীবন লাভ করতে পারেন।
Key Takeaways
- পরিচিত হন অস্বাস্থ্যকর খাবারের সাথে।
- প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন।
- চিনি ও লবণযুক্ত খাবার সীমিত করুন।
- স্বাস্থ্যকর ভোজ্য তেল ব্যবহার করুন।
- নিয়মিত শরীরচর্চা করুন।
- পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া মানেই কি শুধু ফলমূল আর সবজি? অনেকেই মনে করেন। কিন্তু অস্বাস্থ্যকর খাবারগুলো কী কী, তা জানাটাও সুস্থ থাকার জন্য জরুরি। আমরা প্রায়শই অনেক পছন্দের খাবার খাই, যা আসলে আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এই অস্বাস্থ্যকর খাবারগুলো কখন, কেন এবং কীভাবে আমাদের স্বাস্থ্যের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে, তা নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে। তবে চিন্তা নেই! আজ আমরা সহজ ভাষায় অস্বাস্থ্যকর খাবারের একটি তালিকা নিয়ে আলোচনা করব। এর মাধ্যমে আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন কোন খাবারগুলো আপনার এড়িয়ে চলা উচিত। এই গাইডলাইন মেনে চললে আপনি নিজের ও পরিবারের জন্য একটি সুস্থ জীবন নিশ্চিত করতে পারবেন। তাহলে চলুন, জেনে নিই সেই অস্বাস্থ্যকর খাবারগুলো সম্পর্কে।
Table of Contents
- অস্বাস্থ্যকর খাবারের তালিকা: যা এড়িয়ে চলা উচিত
- অস্বাস্থ্যকর খাবার কেন এত সহজলভ্য?
- একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যতালিকা তৈরি করার উপায়
- অস্বাস্থ্যকর খাবার থেকে মুক্তি পাওয়ার কিছু কৌশল
- স্বাস্থ্যকর এবং অস্বাস্থ্যকর খাবারের তুলনা
- FAQ: আপনার সাধারণ কিছু প্রশ্ন
- উপসংহার
অস্বাস্থ্যকর খাবারের তালিকা: যা এড়িয়ে চলা উচিত
একটি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য প্রথমেই জানা প্রয়োজন কোন কোন খাবারগুলো আমাদের শরীরের জন্য ভালো নয়। অস্বাস্থ্যকর খাবারের তালিকা বেশ দীর্ঘ, তবে এদের মূল কয়েকটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা যায়। এই খাবারগুলো অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে কেবল ওজন বৃদ্ধিই নয়, বরং ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগও হতে পারে। WHO (World Health Organization) এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সংস্থাগুলো নিয়মিতভাবে এই ধরনের খাবার গ্রহণের ব্যাপারে সতর্ক করে থাকে।
প্রক্রিয়াজাত খাবার (Processed Foods)
প্রক্রিয়াজাত খাবার হলো এমন খাবার যা উৎপাদনের সময় বিভিন্ন ধাপে পরিবর্তন করা হয়। এই খাবারগুলিতে প্রায়শই অতিরিক্ত পরিমাণে নুন, চিনি, অস্বাস্থ্যকর ফ্যাট এবং কৃত্রিম প্রিজারভেটিভ যোগ করা হয়। এগুলি আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
প্রক্রিয়াজাত খাবারের উদাহরণ:
- ফাস্ট ফুড: বার্গার, পিৎজা, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, ফ্রাইড চিকেন।
- প্যাকেটজাত স্ন্যাকস: চিপস, ক্র্যাকার্স, কুকিজ, বিস্কুট।
- প্রক্রিয়াজাত মাংস: সসেজ, সালামি, বেকন।
- রেডি-টু-ইট মিল: ইনস্ট্যান্ট নুডলস, ফ্রোজেন পিৎজা, ক্যানড স্যুপ।
- মিষ্টি পানীয়: কোলা, সোডা, এনার্জি ড্রিঙ্কস।
এই খাবারগুলো কেন অস্বাস্থ্যকর?
- এগুলিতে থাকা অতিরিক্ত সোডিয়াম রক্তচাপ বাড়াতে পারে।
- অতিরিক্ত চিনি ডায়াবেটিস এবং ওজন বৃদ্ধির ঝুঁকি বাড়ায়।
- অস্বাস্থ্যকর ফ্যাট, যেমন – ট্রান্স ফ্যাট, হৃদরোগের কারণ হতে পারে।
- এগুলিতে পুষ্টিগুণ খুব কম থাকে।
প্রো টিপ: যেকোনো খাবার কেনার আগে তার পুষ্টি উপাদান (nutrition label) দেখে নিন। যদি সোডিয়াম, চিনি বা ফ্যাট বেশি থাকে, তবে সেটি এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।
অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার ও পানীয়
চিনির অতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের স্বাস্থ্যের ব্যাপক ক্ষতি করে। বিশেষ করে রিফাইন্ড সুগার (refined sugar) বা পরিশোধিত চিনি আমাদের শরীরের জন্য কোনো উপকারি উপাদান সরবরাহ করে না, বরং নানা রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবারের তালিকা:
- মিষ্টি পানীয়: সফট ড্রিংকস, জুস, এনার্জি ড্রিঙ্কস, মিষ্টি চা/কফি।
- মিষ্টি ডেজার্ট: কেক, পেস্ট্রি, আইসক্রিম, মিষ্টি দই, চকলেট।
- ক্যান্ডি বা লজেন্স।
- সকালের নাস্তার সিরিয়াল (সুইটেনার যোগ করা): কিছু ব্র্যান্ডের সিরিয়াল অতিরিক্ত চিনিযুক্ত হয়।
- কিছু সস ও ক্যান্ডিমেন্ট: যেমন – টমেটো সস, বারবিকিউ সস, জ্যাম।
অতিরিক্ত চিনি কেন ক্ষতিকর?
- ওজন বৃদ্ধি ও স্থূলতার মূল কারণ।
- টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
- হৃদরোগের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে।
- দাঁতের ক্ষয় (dental cavities) সৃষ্টি করে।
- লিভারে ফ্যাট জমাতে সাহায্য করে (fatty liver disease)।
According to the American Heart Association, men should consume no more than 9 teaspoons (36 grams or 150 calories) of added sugar per day, and women should consume no more than 6 teaspoons (25 grams or 100 calories) of added sugar per day.
অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার
লবণ ছাড়া খাবার প্রায় অচল, তবে অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক। উচ্চ রক্তচাপের অন্যতম প্রধান কারণ হলো অতিরিক্ত লবণ।
অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবারের উদাহরণ:
- প্রক্রিয়াজাত খাবার: চিপস, বেকড স্ন্যাকস, ইনস্ট্যান্ট নুডলস।
- আচার ও সস।
- শুঁটকি মাছ ও লবণ দিয়ে সংরক্ষিত খাবার।
- কিছু চিজ বা পনির।
- ফাস্ট ফুড।
অতিরিক্ত লবণ কেন ক্ষতিকর?
- উচ্চ রক্তচাপ (High Blood Pressure) সৃষ্টি করে।
- হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
- কিডনির উপর চাপ সৃষ্টি করে।
- শরীরে জল ধরে রাখে, যা ফোলাভাব (edema) সৃষ্টি করতে পারে।
ট্রান্স ফ্যাট (Trans Fats) ও স্যাচুরেটেড ফ্যাট (Saturated Fats)
কিছু ফ্যাট আমাদের শরীরের জন্য অপরিহার্য হলেও, ট্রান্স ফ্যাট এবং অতিরিক্ত স্যাচুরেটেড ফ্যাট স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। বিশেষ করে শিল্পোৎপাদিত ট্রান্স ফ্যাট (partially hydrogenated oils) এড়িয়ে চলা অত্যন্ত জরুরি।
ট্রান্স ফ্যাট ও স্যাচুরেটেড ফ্যাটযুক্ত খাবার:
- কৃত্রিমভাবে তৈরি ট্রান্স ফ্যাট: অনেক ফাস্ট ফুড, বেকারি পণ্য (বিস্কুট, কেক, পেস্ট্রি), মার্জারিন, ভাজা পোড়া খাবার।
- স্যাচুরেটেড ফ্যাট: লাল মাংস (গরু, খাসি), মাখন, ঘি, পূর্ণ ননীযুক্ত দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য, পাম তেল, নারকেল তেল (পরিমিত পরিমাণে না খেলে)।
এই ফ্যাটগুলো কেন ক্ষতিকর?
- খারাপ কোলেস্টেরল (LDL cholesterol) বাড়ায়।
- ভালো কোলেস্টেরল (HDL cholesterol) কমায়।
- হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
- শরীরে প্রদাহ (inflammation) বাড়াতে পারে।
প্রো টিপ: রান্নার জন্য অলিভ অয়েল, সানফ্লাওয়ার অয়েল, ক্যানোলা অয়েল বা সরিষার তেলের মতো স্বাস্থ্যকর তেল ব্যবহার করুন।
অতিরিক্ত ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় (Limited Caffeine)
ক্যাফেইন সহনীয় মাত্রায় শরীরের জন্য উপকারিতা দিলেও, অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ সমস্যা তৈরি করতে পারে।
অতিরিক্ত ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়:
- কফি: অতিরিক্ত পরিমাণে বা অতিরিক্ত চিনি মিশিয়ে।
- চা: অতি ঘন চা পান করা।
- এনার্জি ড্রিংকস: এগুলিতে প্রায়শই অনেক বেশি ক্যাফেইন ও চিনি থাকে।
- কোলা ও কিছু সফট ড্রিংকস।
অতিরিক্ত ক্যাফেইন কেন সমস্যা সৃষ্টি করে?
- অনিদ্রা বা ঘুমের সমস্যা।
- উদ্বেগ বা অস্থিরতা।
- হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া।
- পেটের সমস্যা।
- নির্ভরশীলতা তৈরি হতে পারে।
According to the Mayo Clinic, for healthy adults, up to 400 milligrams of caffeine a day appears to be safe for most people.
অ্যালকোহল (Alcohol)
অ্যালকোহল পান করা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এটি শরীরের প্রায় সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষতি করতে পারে।
অ্যালকোহলের ক্ষতিকর প্রভাব:
- লিভারের রোগ (যেমন – সিরোসিস)।
- হৃদরোগ।
- ক্যান্সার (mouth, throat, esophagus, liver, colon)।
- মস্তিষ্কের ক্ষতি।
- মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা।
- শারীরিক নির্ভরতা (addiction)।
WHO guidelines recommend that for cancer prevention, it is best not to drink alcohol. If you do drink, the less the better.
অতিরিক্ত ভাজাপোড়া খাবার
অতিরিক্ত তেল-মশলা দিয়ে ভাজা খাবার বাংলাদেশের মানুষের কাছে খুবই প্রিয়। কিন্তু এই খাবারগুলো হজমে সমস্যা তৈরি করে এবং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
অতিরিক্ত ভাজাপোড়া খাবারের ধরণ:
- তেলে ভাজা স্ন্যাকস: সিঙ্গারা, সমুচা, চপ, পিয়াজু।
- ভাজা মাছ বা মাংস।
- পরোটা, লুচি।
- ফ্রায়েড রাইস, ফ্রাইড চিকেন।
এগুলো কেন ক্ষতিকর?
- অতিরিক্ত ক্যালরি ও ফ্যাট থাকে, যা ওজন বাড়ায়।
- হজমে সমস্যা এবং অ্যাসিডিটি হতে পারে।
- এগুলিতে ট্রান্স ফ্যাট তৈরি হতে পারে যদি একই তেল বারবার ব্যবহার করা হয়।
- পুষ্টি উপাদানের অপচয় হয়।
অস্বাস্থ্যকর খাবার কেন এত সহজলভ্য?
আমাদের চারপাশে অস্বাস্থ্যকর খাবার এত সহজলভ্য হওয়ার পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে:
- স্বাদ: বেশিরভাগ অস্বাস্থ্যকর খাবারে লবণ, চিনি ও ফ্যাট বেশি থাকে, যা আমাদের জিভে লেগে থাকে এবং আমরা বারবার খেতে চাই।
- দাম: অনেক প্রক্রিয়াজাত খাবার, যেমন – চিপস বা ইনস্ট্যান্ট নুডলস, তৈরি করা স্বাস্থ্যকর খাবারের চেয়ে দামে কম হয়।
- সহজলভ্যতা: রাস্তার পাশের দোকান থেকে শুরু করে বড় সুপারমার্কেট, সবখানেই এগুলো সহজেই পাওয়া যায়।
- বিজ্ঞাপন: এগুলোর বিজ্ঞাপন আমাদের আকৃষ্ট করে।
- সময় সাশ্রয়: ব্যস্ত জীবনে ফাস্ট ফুড বা রেডি-টু-ইট খাবারগুলো সময় বাঁচায়।
প্রো টিপ: খাবার তৈরির সময় লবণ ও চিনির ব্যবহার কমান। খাবারে টাটকা মশলা ও ভেষজ ব্যবহার করুন।
একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যতালিকা তৈরি করার উপায়
অস্বাস্থ্যকর খাবারের তালিকা জানার পর আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে, তাহলে আমরা কী খাব? একটি সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যতালিকা তৈরি করা কঠিন কিছু নয়। নিচে কিছু সহজ উপায় দেওয়া হলো:
১. টাটকা ফল ও সবজি
প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় বিভিন্ন রঙের ফল ও সবজি রাখুন। এগুলিতে প্রচুর ভিটামিন, মিনারেলস এবং ফাইবার থাকে, যা শরীরকে সুস্থ রাখে।
- ফল: আপেল, কলা, কমলা, পেয়ারা, আম, জাম্বুরা, বেরি জাতীয় ফল।
- সবজি: পালং শাক, ব্রোকলি, গাজর, টমেটো, শসা, লাউ, কুমড়া, মিষ্টি আলু।
২. হোল গ্রেইন (Whole Grains)
পরিশোধিত শস্যের (refined grains) বদলে হোল গ্রেইন বেছে নিন। এগুলি ফাইবার এবং পুষ্টিগুণে ভরপুর।
- উদাহরণ: লাল চালের ভাত, আটার রুটি (whole wheat bread), ওটস, বার্লি, কিনোয়া।
৩. প্রোটিন উৎস
শরীরের জন্য প্রোটিন অপরিহার্য। স্বাস্থ্যকর প্রোটিনের উৎস বেছে নিন।
- উদ্ভিজ্জ প্রোটিন: ডাল, মটরশুঁটি, ছোলা, বাদাম, বীজ।
- প্রাণিজ প্রোটিন: মাছ, মুরগি (চামড়া ছাড়া), ডিম, কম ননীযুক্ত দুধ ও দই।
৪. স্বাস্থ্যকর ফ্যাট
কিছু ফ্যাট আমাদের শরীরের জন্য দরকারি। বেছে নিন স্বাস্থ্যকর ফ্যাট।
- উৎস: অ্যাভোকাডো, বাদাম, বীজ (যেমন – চিয়া বীজ, ফ্ল্যাক্সসিড), অলিভ অয়েল, মাছের তেল।
৫. পর্যাপ্ত পানি পান
প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। এটি হজমশক্তি বাড়ায়, শরীরকে সতেজ রাখে এবং ডিহাইড্রেশন রোধ করে।
৬. পরিমিত মশলা ও হার্বস
খাবারের স্বাদ বাড়াতে অতিরিক্ত লবণ বা চিনির বদলে মশলা ও টাটকা ভেষজ ব্যবহার করুন। যেমন – হলুদ, আদা, রসুন, ধনে, জিরা, পুদিনা, ধনে পাতা ইত্যাদি।
অস্বাস্থ্যকর খাবার থেকে মুক্তি পাওয়ার কিছু কৌশল
অস্বাস্থ্যকর খাবার ত্যাগ করা বা কমানো একটি ধারাবাহিক প্রচেষ্টা। নিচে কিছু কৌশল উল্লেখ করা হলো:
- ধীরে ধীরে পরিবর্তন আনুন: একসাথে সব অস্বাস্থ্যকর খাবার বাদ না দিয়ে ধীরে ধীরে পরিহার করুন।
- বিকল্প খুঁজুন: আপনি যা পছন্দ করেন, তার স্বাস্থ্যকর বিকল্প খুঁজে বের করুন। যেমন – চিপসের বদলে বাদাম বা ফল খেতে পারেন।
- বাড়িতে রান্না করুন: বাইরে খাওয়ার চেয়ে বাড়িতে রান্না করা খাবার বেশি স্বাস্থ্যকর।
- পরিকল্পনা করে বাজার করুন: তালিকা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় তাজা খাবার কিনুন এবং অস্বাস্থ্যকর খাবার এড়িয়ে চলুন।
- মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিন: মানসিক চাপ বা একঘেয়েমি কাটাতে অস্বাস্থ্যকর খাবারের দিকে ঝুঁকবেন না। তার চেয়ে পছন্দের গান শুনুন বা হাঁটতে যান।
- পরিবার ও বন্ধুদের জানান: আপনার লক্ষ্য সম্পর্কে পরিবার ও বন্ধুদের জানান, যাতে তারা আপনাকে সাহায্য করতে পারে।
স্বাস্থ্যকর এবং অস্বাস্থ্যকর খাবারের তুলনা
সুস্থ থাকার জন্য স্বাস্থ্যকর এবং অস্বাস্থ্যকর খাবারের পার্থক্য জানা খুব জরুরি। নিচে একটি সারণীর মাধ্যমে এটি তুলে ধরা হলো:
বিষয় | স্বাস্থ্যকর খাবার | অস্বাস্থ্যকর খাবার |
---|---|---|
প্রধান উপাদান | ভিটামিন, মিনারেলস, ফাইবার, প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট | অতিরিক্ত চিনি, লবণ, অস্বাস্থ্যকর ফ্যাট, কৃত্রিম রং ও ফ্লেভার |
পদ্ধতি | টাটকা, হালকা রান্না বা কাঁচা | অতিরিক্ত ভাজা, প্রক্রিয়াজাত, ফাস্ট ফুড |
পুষ্টিগুণ | উচ্চ পুষ্টিমান, শরীরের জন্য উপকারী | খুব কম বা শূন্য পুষ্টিমান, স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর |
প্রভাব | শক্তি বাড়ায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে | ওজন বাড়ায়, রোগ সৃষ্টি করে, শক্তি কমায় |
উপাদান | ফল, সবজি, শস্য, মাছ, ডিম, ডাল, বাদাম | চিপস, সফট ড্রিংকস, ক্যান্ডি, ফাস্ট ফুড, প্রক্রিয়াজাত মাংস |
FAQ: আপনার সাধারণ কিছু প্রশ্ন
প্রশ্ন ১: বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে কোন খাবারগুলোকে সবচেয়ে অস্বাস্থ্যকর বলা যেতে পারে?
উত্তর: বাংলাদেশে রাস্তার সব ভাজাপোড়া, অতিরিক্ত তেল-মশলাযুক্ত খাবার, মিষ্টি জাতীয় পানীয় (যেমন – অতিরিক্ত মিষ্টি শরবত, কোলা), প্রক্রিয়াজাত মাংস (যেমন – সসেজ), এবং অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবারগুলোকে (যেমন – আচারের মতো সংরক্ষিত খাদ্য) সবচেয়ে অস্বাস্থ্যকর হিসেবে ধরা হয়।
প্রশ্ন ২: প্রতিদিন কি একেবারেই চিনি বা লবণ খাওয়া যাবে না?
উত্তর: একেবারেই বাদ দেওয়া কঠিন। তবে এর পরিমাণ অত্যন্ত সীমিত করতে হবে। WHO-এর মতে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দিনে ৫ গ্রামের কম লবণ এবং ২০-২৫ গ্রামের বেশি চিনি গ্রহণ করা উচিত নয়।
প্রশ্ন ৩: ফাস্ট ফুড খেলে কি তাৎক্ষণিক কোনো ক্ষতি হয়?
উত্তর: তাৎক্ষণিক খুব বড় ক্ষতি না হলেও, ফাস্ট ফুডে থাকা অতিরিক্ত ফ্যাট, সোডিয়াম ও ক্যালরি অনেক সময় হজমে অস্বস্তি তৈরি করতে পারে। তবে এর আসল ক্ষতি দীর্ঘমেয়াদী, যা নিয়মিত খেলে ওজন বৃদ্ধি, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ইত্যাদির ঝুঁকি বাড়ায়।
প্রশ্ন ৪: আমি কি মাঝে মাঝে অস্বাস্থ্যকর খাবার খেতেই পারি?
উত্তর: হ্যাঁ, মাঝে মধ্যে অল্প পরিমাণে অস্বাস্থ্যকর খাবার (যেমন – সপ্তাহে একদিন বা মাসে দুই-তিনবার) খেলে সাধারণত বড় কোনো ক্ষতি হয় না, যদি আপনার বাকি খাদ্যতালিকা স্বাস্থ্যকর হয় এবং আপনি নিয়মিত শরীরচর্চা করেন। একে ‘চিট মিল’ (cheat meal) বলা হয়, যা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো হতে পারে।
প্রশ্ন ৫: বাচ্চাদের জন্য কোন খাবারগুলো বেশি অস্বাস্থ্যকর?
উত্তর: বাচ্চাদের জন্য চিপস, ক্যান্ডি, কোমল পানীয়, চকোলেট, ফাস্ট ফুড, অতিরিক্ত চিনিযুক্ত সিরিয়াল, এবং ভাজাপোড়া খাবারগুলো অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর। এগুলো তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে বাধা দিতে পারে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে।
প্রশ্ন ৬: ট্রান্স ফ্যাট বলতে কি বোঝায় এবং এটি কোথায় পাওয়া যায়?
উত্তর: ট্রান্স ফ্যাট হলো এক ধরনের অস্বাস্থ্যকর ফ্যাট যা মূলত শিল্পোৎপাদন প্রক্রিয়ায় (partially hydrogenated oils) তৈরি করা হয়। এটি মargarine, কেনা বেকারি পণ্য (বিস্কুট, কেক, পেস্ট্রি), ফাস্ট ফুড এবং ভাজা-পোড়া খাবারে পাওয়া যায়। এটি শরীরের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর ফ্যাটগুলোর মধ্যে অন্যতম।
প্রশ্ন ৭: স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য একটি সাধারণ দিনের খাদ্যতালিকার উদাহরণ দিন।
উত্তর:সকালের নাস্তা: ওটস বা আটার রুটি, সবজি, ডিম। দুপুরের খাবার: লাল চালের ভাত, মাছ বা মুরগি (কম তেলে রান্না), প্রচুর সবজি, ডাল। বিকালের নাস্তা: ফল বা বাদাম। রাতের খাবার: হালকা খাবার যেমন – রুটি বা অল্প ভাত, সবজি, পাতলা ডাল বা মাছ। প্রচুর পানি পান করতে হবে সারাদিন।
উপসংহার
স্বাস্থ্যকর ও অস্বাস্থ্যকর খাবারের তালিকা জানাটা সুস্থ জীবনের প্রথম ধাপ। অস্বাস্থ্যকর খাবারগুলো এড়িয়ে চলা এবং স্বাস্থ্যকর খাবার বেছে নেওয়ার মাধ্যমে আপনি নিজের শরীরকে অনেক রোগ থেকে রক্ষা করতে পারেন। মনে রাখবেন, একদিনে সব পরিবর্তন না হলেও, ছোট ছোট পদক্ষেপে আপনি একটি সুস্থ জীবনধারায় অভ্যস্ত হতে পারেন। আপনার শরীর আপনার সবচেয়ে বড় সম্পদ, তাই এর যত্ন নিন।