কিছু খাবার আছে যা স্তন্যদানকারী মায়ের বুকের দুধের সরবরাহ কমিয়ে দিতে পারে। পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল গ্রহণ, পুষ্টিকর খাবার এবং সঠিক যত্নের মাধ্যমে এই সমস্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব।
Table of Contents
Key Takeaways
- কিছু নির্দিষ্ট খাবার বুকের দুধের উৎপাদন কমাতে পারে।
- পর্যাপ্ত পানি পান করা দুধের সরবরাহ বাড়াতে সাহায্য করে।
- প্রোটিন, ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ খাবার জরুরি।
- ধূমপান ও অ্যালকোহল বর্জন করা উচিত।
- মানসিক চাপ কমালে দুধের উৎপাদন বাড়ে।
- প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
মায়েদের জন্য বুকের দুধ শিশুর অমূল্য পুষ্টি। কিন্তু অনেক সময় কিছু অনিয়ম বা ভুল খাদ্যাভ্যাসের কারণে বুকের দুধের সরবরাহ কমে যেতে পারে, যা মা ও শিশু উভয়ের জন্যই চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই সমস্যাটি কেন হয় এবং কী কী খাবার এড়িয়ে চললে বা খেলে বুকের দুধ আবার স্বাভাবিকভাবে আসতে পারে, তা নিয়ে অনেকেই দ্বিধায় ভোগেন। আপনি যদি এমন কোনো সমস্যার সম্মুখীন হন, তবে এই গাইডটি আপনার জন্য। আমরা সহজ ভাষায় আপনাকে জানাবো, কি খেলে বুকের দুধ শুকিয়ে যায় এবং এর প্রতিকার কী।
বুকের দুধ শুকিয়ে যাওয়ার কারণগুলো কী কী?
বুকের দুধ উৎপাদন একটি জটিল প্রক্রিয়া যা হরমোন, শিশুর Suckling (চোষা) এবং মায়ের সামগ্রিক শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নির্ভর করে। বিভিন্ন কারণে বুকের দুধের সরবরাহ কমে যেতে পারে। এর মধ্যে কিছু প্রধান কারণ নিচে আলোচনা করা হলো:
খাদ্যাভ্যাস ও পানীয়
সঠিক খাবার এবং পর্যাপ্ত পানি বুকের দুধ উৎপাদনের জন্য অপরিহার্য। কিছু খাবার বা পানীয় আছে যা দুগ্ধ উৎপাদন কমিয়ে দিতে পারে।
- অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ: চা, কফি, কোলা বা এনার্জি ড্রিঙ্কসে থাকা ক্যাফেইন মায়ের শরীরে পানিশূন্যতা তৈরি করতে পারে, যা দুধের সরবরাহ কমিয়ে দেয়।
- অতিরিক্ত মেন্থল বা পুদিনা জাতীয় খাবার: মেন্থল বা পুদিনা যুক্ত চা, ক্যান্ডি বা কিছু খাবার অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে বুকের দুধের উৎপাদন কমে যেতে পারে।
- অ্যালকোহল ও ধূমপান: এগুলো শুধু মায়ের স্বাস্থ্যের জন্যই ক্ষতিকর নয়, শিশুর উপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এছাড়াও, এগুলো দুগ্ধ উৎপাদনকেও বাধাগ্রস্ত করে।
- কিছু ভেষজ উপাদান: কিছু ভেষজ উপাদান, যেমন – পার্সলে (parsley) বা সেজ (sage) এর কিছু নির্দিষ্ট রূপ ধারণ করলে তা দুধের সরবরাহ কমাতে পারে। তবে এর বৈজ্ঞানিক প্রমাণ সীমিত।
হরমোনের ভারসাম্যহীনতা
গর্ভাবস্থা এবং প্রসবের পর মায়ের শরীরে হরমোনের পরিবর্তন ঘটে। কিছু হরমোন (যেমন: ইস্ট্রোজেন) প্রোল্যাকটিনের (Prolactin) কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে, যা দুধ উৎপাদনের জন্য দায়ী। যদি প্রসবের পর হরমোনের ভারসাম্য ঠিক না থাকে, তবে দুধের উৎপাদন কমে যেতে পারে।
শারীরিক অসুস্থতা ও অন্যান্য কারণ
- অপুষ্টি: শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের অভাব দেখা দিলে দুধ উৎপাদন কমে যেতে পারে।
- কিছু ঔষধ: কিছু ধরণের ঔষধ, যেমন – জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল (বিশেষ করে যাতে ইস্ট্রোজেন থাকে), ডিউরেটিকস (diuretics) বা ঠান্ডার ঔষধ দুধের উৎপাদন কমিয়ে দিতে পারে।
- থাইরয়েড সমস্যা: হাইপোথাইরয়েডিজম (Hypothyroidism) বা থাইরয়েডের কার্যকারিতা কমে যাওয়া এক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে।
- ডায়াবেটিস: অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসও দুধ উৎপাদনে বাধা দিতে পারে।
- সার্জারি: স্তন বা স্তনের কাছাকাছি কোনো সার্জারি (যেমন – ব্রেস্ট অগমেন্টেশন) হলে দুধ নালীর ক্ষতি হতে পারে।
শিশু সম্পর্কিত কারণ
- শিশুর ভুলভাবে স্তন পান করা: শিশু যদি সঠিক পদ্ধতিতে স্তন ধরতে না পারে বা পর্যাপ্ত পরিমাণে দুধ পান না করে, তবে শরীর দুধ উৎপাদন কমিয়ে দিতে পারে।
- কম ঠান্ডা লাগা: যদি শিশু স্তন পান করার চেয়ে বোতল থেকে বেশি দুধ খায়, তবে স্তনে দুধের চাহিদা কমে যায় এবং উৎপাদনও কমে আসে।
- শিশুর অসুস্থতা: যদি শিশু অসুস্থ থাকে বা অন্য কোনো সমস্যায় ভোগে, তবে সে কম দুধ পান করতে পারে, যা দুধের সরবরাহ কমিয়ে দেয়।
মানসিক চাপ ও ক্লান্তি
প্রসব পরবর্তী সময়ে মায়ের শারীরিক ও মানসিক চাপ, পর্যাপ্ত বিশ্রামের অভাব, উদ্বেগ বা ডিপ্রেশন (Depression) দুধের সরবরাহকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। শরীরের অক্সিটোসিন (Oxytocin) হরমোন, যা দুধ বের হতে সাহায্য করে, তা মানসিক চাপের কারণে কমে যেতে পারে।
কি খেলে বুকের দুধ শুকিয়ে যায়: কিছু নির্দিষ্ট খাবার
যদিও অনেক কিছুই বুকের দুধের সরবরাহকে প্রভাবিত করতে পারে, কিছু খাবার এবং পানীয় বিশেষভাবে পরিচিত যা এই প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে। এখানে সেই খাবারগুলোর একটি তালিকা দেওয়া হলো:
যেসব খাবার এড়িয়ে চলা বা সীমিত করা উচিত:
- অতিরিক্ত মেন্থল (Menthol) বা পুদিনা: বাজারে উপলব্ধ অনেক হার্বাল চা, ক্যান্ডি এবং কিছু টুথপেস্ট বা মাউথওয়াশে মেন্থল থাকে। অতিরিক্ত পরিমাণে মেন্থল গ্রহণ করলে তা বুকের দুধের সরবরাহ কমিয়ে দিতে পারে। তাই, স্তন্যদানকালে পুদিনা চা বা মেন্থলযুক্ত যেকোনো পণ্য সীমিত পরিমাণে গ্রহণ করাই ভালো।
- ক্যাফেইন (Caffeine): চা, কফি, কোলা, এনার্জি ড্রিঙ্কস এবং ডার্ক চকোলেটে ক্যাফেইন থাকে। অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ মায়ের শরীরে পানিশূন্যতা সৃষ্টি করে এবং শিশুর ঘুমের চক্রকেও প্রভাবিত করতে পারে। তাই, প্রতিদিন ২০০ মিলিগ্রামের বেশি ক্যাফেইন গ্রহণ না করাই বাঞ্ছনীয়।
- অ্যালকোহল (Alcohol): অ্যালকোহল মায়ের দুধে মিশে যায় এবং শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে বাধা দিতে পারে। এটি দুধের সরবরাহও কমিয়ে দেয়। তাই, স্তন্যদানকালে অ্যালকোহল পুরোপুরি বর্জন করাই শ্রেয়।
- খুব বেশি প্রোসেসড ফুড (Processed Food): প্রক্রিয়াজাত খাবার, ফাস্ট ফুড এবং অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। এগুলি পুষ্টিগুণে ভরপুর নয় এবং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
- কিছু ভেষজ (Herbs): যেমনটি আগে উল্লেখ করা হয়েছে, কিছু ভেষজ উপাদান, বিশেষ করে সেজ (Sage), পার্সলে (Parsley), পেপারমিন্ট (Peppermint) এবং কারাওয়ের (Caraway) অতিরিক্ত ব্যবহার দুধের সরবরাহ কমিয়ে দিতে পারে। তবে, রান্নায় অল্প পরিমাণে ব্যবহার করলে সাধারণত কোনো সমস্যা হয় না।
Pro Tip: যদিও কিছু খাবার দুধের সরবরাহ কমাতে পারে, তবে এর প্রভাব ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে। তাই, কোনো নির্দিষ্ট খাবার আপনার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করছে কিনা, তা খেয়াল রাখুন।
বুকের দুধ বাড়ানোর উপায় ও খাবার
বুকের দুধের সরবরাহ বাড়াতে কিছু নির্দিষ্ট খাবার এবং অভ্যাসের দিকে মনোযোগ দেওয়া জরুরি। এখানে কিছু কার্যকর উপায় আলোচনা করা হলো:
পর্যাপ্ত পানি পান করুন
শরীরকে হাইড্রেটেড রাখা দুধ উৎপাদনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস (২-২.৫ লিটার) পানি পান করার চেষ্টা করুন। পানি, ফলের রস, ডাবের পানি, স্যুপ এবং অন্যান্য তরল খাবার আপনার শরীরকে পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল সরবরাহ করবে।
পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্য গ্রহণ
একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যতালিকা আপনার দুধের গুণমান এবং পরিমাণ উভয়ই বাড়াতে সাহায্য করে। আপনার খাবারে নিম্নলিখিত উপাদানগুলো অন্তর্ভুক্ত করুন:
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার:
ডিম, মাছ, মাংস, ডাল, মটরশুটি, বাদাম, এবং দুগ্ধজাতীয় খাবার (দুধ, দই, পনির) প্রোটিনের ভালো উৎস। প্রোটিন শরীর গঠনের জন্য অপরিহার্য।
ফল ও শাকসবজি:
বিভিন্ন ধরণের ফল ও সবজিতে ভিটামিন, মিনারেলস এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা মায়ের এবং শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। গাঢ় সবুজ শাকসবজি, যেমন – পালং শাক, কলমি শাক, ব্রকলি, গাজর, মিষ্টি আলু ইত্যাদি আপনার খাদ্যতালিকায় রাখুন।
শস্য ও গোটা শস্য:
ওটস, ব্রাউন রাইস, বার্লি, এবং অন্যান্য গোটা শস্যে ফাইবার এবং কার্বোহাইড্রেট থাকে যা শক্তি সরবরাহ করে এবং দুধ উৎপাদন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ওটসকে প্রায়শই “গ্যালাকটোগগ” (Galactagogue) হিসেবে ধরা হয়, অর্থাৎ যা দুধ বাড়াতে সাহায্য করে।
স্বাস্থ্যকর ফ্যাট:
অ্যাভোকাডো, বাদাম, বীজ এবং জলপাই তেল (olive oil) এর মতো স্বাস্থ্যকর ফ্যাটগুলো গ্রহণ করুন। এগুলো শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য জরুরি।
গ্যালাকটোগগ ফুড (Galactagogue Foods):
কিছু খাবার আছে যা ঐতিহ্যগতভাবে দুধ উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে বলে বিশ্বাস করা হয়। এদের মধ্যে কয়েকটি হলো:
- ওটস (Oats): সকালের নাস্তায় ওটস খাওয়া দুধ বাড়াতে একটি জনপ্রিয় উপায়।
- ডাল (Lentils): বিভিন্ন ধরণের ডালে আয়রন এবং প্রোটিন থাকে যা দুধ উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে।
- বাদাম ও বীজ (Nuts and Seeds): কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, কুমড়োর বীজ, তিল বীজ ইত্যাদি আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং ফ্যাটি অ্যাসিডের ভালো উৎস।
- রসুন (Garlic): রসুনে থাকা উপাদান দুগ্ধ উৎপাদন বৃদ্ধিতে সাহায্য করতে পারে।
- মিষ্টি আলু (Sweet Potato): এতে থাকা ভিটামিন এবং খনিজ দুধের পরিমাণ বাড়াতে সহায়ক।
- গাজর (Carrot): গাজর খেলে তা দুধের সরবরাহ বাড়াতে সাহায্য করে।
জীবনযাত্রার পরিবর্তন
শুধু খাবার নয়, কিছু জীবনযাত্রার অভ্যাসও বুকের দুধের সরবরাহকে প্রভাবিত করে।
বারবার শিশুকে দুধ খাওয়ানো বা পাম্প করা
শিশু যতবার বা যত ভালোভাবে স্তন পান করবে, শরীর তত বেশি প্রোল্যাকটিন হরমোন তৈরি করবে, যা দুধ উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে। যদি শিশু পর্যাপ্ত দুধ পান না করে, তবে একটি ব্রেস্ট পাম্প ব্যবহার করে বাকি দুধ পাম্প করে বের করে নিলে দুধের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে।
পর্যাপ্ত বিশ্রাম
শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তি দুধ উৎপাদন কমিয়ে দিতে পারে। তাই, যতটা সম্ভব বিশ্রাম নিন। শিশুকে ঘুমোতে দিন এবং নিজের জন্যও পর্যাপ্ত ঘুমের ব্যবস্থা করুন।
চাপ কমানো
মানসিক চাপ অক্সিটোসিন হরমোন নিঃসরণে বাধা দেয়, যা দুধ বের হতে এবং উৎপাদন বাড়াতে জরুরি। যোগব্যায়াম, মেডিটেশন, পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলা বা পছন্দের কোনো কাজ করে মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করুন।
ধূমপান ও অ্যালকোহল বর্জন
আগেই বলা হয়েছে, ধূমপান এবং অ্যালকোহল স্তন্যদানকালে সম্পূর্ণভাবে বর্জন করা উচিত।
চিকিৎসকের পরামর্শ ও সাপ্লিমেন্টস
যদি উপরের পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করার পরেও বুকের দুধের সরবরাহ না বাড়ে, তবে একজন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বা ল্যাকটেশন কনসালটেন্টের (Lactation Consultant) পরামর্শ নেওয়া উচিত। কিছু ক্ষেত্রে, চিকিৎসক কিছু ঔষধ বা সাপ্লিমেন্ট (যেমন – মেটোক্লোপ্রামাইড বা ডোমপেরিডোন) লিখে দিতে পারেন যা দুগ্ধ উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে। তবে, কোনো সাপ্লিমেন্ট বা ঔষধ শুরু করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে আলোচনা করে নেওয়া জরুরি।
External Link: World Health Organization (WHO) – Breastfeeding recommendations: https://www.who.int/news-room/fact-sheets/detail/infant-and-young-child-feeding
কিছু সাধারণ ভুল ধারণা ও সত্য
বুতের দুধ বৃদ্ধি নিয়ে সমাজে কিছু ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। সেগুলো জেনে নেওয়া যাক:
ভুল ধারণা (Myth) | বাস্তবতা (Fact) |
---|---|
কিছু নির্দিষ্ট খাবার খেলেই দুধের সরবরাহ অনেক বেড়ে যায়। | দুধের সরবরাহ মূলত শিশুর স্তন পান করা বা পাম্প করার উপর নির্ভর করে। খাবার সহায়ক হতে পারে, কিন্তু মূল নয়। |
শারীরিক পরিশ্রম করলে দুধ উৎপাদন কমে যায়। | হালকা বা মাঝারি ব্যায়াম দুধের উপর সাধারণত কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলে না, বরং সুস্থ শরীর দুধ উৎপাদনের জন্য ভালো। তবে অতিরিক্ত পরিশ্রম ক্লান্তি বাড়ায়। |
মায়েদের বেশি ক্যালোরি খেলেই দুধ বেশি হবে। | ক্যালোরির চেয়ে পুষ্টি এবং সঠিক খাবার গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ অস্বাস্থ্যকর হতে পারে। |
প্রসবের পর দ্রুত ওজন কমালে দুধ কমে যায়। | ধীরে ধীরে ওজন কমানো ভালো। খুব দ্রুত ওজন কমাতে গেলে অপুষ্টি হতে পারে, যা দুধের উপর প্রভাব ফেলে। |
কখন পেশাদার সাহায্য নেবেন?
কিছু পরিস্থিতিতে পেশাদার সাহায্য নেওয়া জরুরি:
- যদি শিশু পর্যাপ্ত পরিমাণে দুধ না পেয়ে ওজন কমায় বা দুর্বল হয়ে পড়ে।
- যদি মায়ের স্তনে ফাটল, ব্যথা বা সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দেয়।
- যদি মা মনে করেন যে তার দুধের সরবরাহ অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে এবং কোনো ঘরোয়া উপায়ে তা বাড়ছে না।
- যদি নিজে খুব বেশি মানসিক চাপ বা ডিপ্রেশনে ভোগেন।
এই ক্ষেত্রে, একজন ল্যাকটেশন কনসালটেন্ট বা শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ আপনাকে সঠিক নির্দেশনা দিতে পারবেন।
আপনার প্রশ্নের উত্তর
১. চা বা কফি পান করলে কি সত্যিই বুকের দুধ কমে যায়?
উত্তর: হ্যাঁ, অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ করলে তা দুধের সরবরাহ কিছুটা কমাতে পারে। তবে, এটি ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে। দিনে ১-২ কাপ চা বা কফি সাধারণত বড় কোনো সমস্যা তৈরি করে না। তবে, এর চেয়ে বেশি পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত নয়।
২. আমার শিশু কি পর্যাপ্ত দুধ পাচ্ছে তা আমি কীভাবে বুঝব?
উত্তর: আপনার শিশু যদি দিনে অন্তত ৬-৮ বার প্রস্রাব করে, দৈনিক ৩-৪ বার মলত্যাগ করে, স্তন পানের পর সন্তুষ্ট থাকে এবং স্বাভাবিকভাবে ওজন বাড়ায়, তবে বুঝবেন সে পর্যাপ্ত দুধ পাচ্ছে।
৩. বুকের দুধ শুকিয়ে গেলে তা কি আবার বাড়ানো সম্ভব?
উত্তর: হ্যাঁ, অনেক ক্ষেত্রে বুকের দুধের সরবরাহ আবার বাড়ানো সম্ভব। এজন্য প্রয়োজন সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত বিশ্রাম, শিশুকে নিয়মিত স্তন্যপান করানো এবং প্রয়োজনে পেশাদার সাহায্য নেওয়া।
৪. কোন কোন ঔষধ বুকের দুধের পরিমাণ কমিয়ে দিতে পারে?
উত্তর: কিছু জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল (বিশেষ করে ইস্ট্রোজেন সমৃদ্ধ), ডিউরেটিকস, সিউডোফেড্রিন (ঠান্ডার ঔষধে থাকে) এবং কিছু অ্যান্টিহিস্টামিন দুধের সরবরাহ কমাতে পারে। কোনো ঔষধ গ্রহণের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
৫. নবজাতকের জন্য বুকের দুধ কি সবসময়ই সেরা?
উত্তর: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং বেশিরভাগ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ নবজাতকের জন্য প্রথম ৬ মাস শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়ানোর সুপারিশ করেন। বুকের দুধ শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং অন্যান্য অনেক সুবিধা প্রদান করে।
৬. মেন্থল বা পুদিনা কি আমার শরীরের জন্য ক্ষতিকর?
উত্তর: স্তন্যদানকারী মায়ের জন্য সীমিত পরিমাণে মেন্থল বা পুদিনা গ্রহণ ক্ষতিকর নয়। তবে, অতিরিক্ত পরিমাণে তা বুকের দুধের সরবরাহ কমিয়ে দিতে পারে।
শেষ কথা
বুকের দুধ শিশুর জন্য সবচেয়ে উপকারী পুষ্টি। এটি নিশ্চিত করার জন্য মায়ের নিজের স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। কি খেলে বুকের দুধ শুকিয়ে যায় — এই প্রশ্নটির উত্তর খোঁজা এবং সেই অনুযায়ী খাদ্যভ্যাস পরিবর্তন করা বুদ্ধিমানের কাজ। মনে রাখবেন, পর্যাপ্ত জল পান, সুষম ও পুষ্টিকর খাবার, পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং ইতিবাচক মানসিকতা আপনার দুধের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ও বাড়াতে প্রধান ভূমিকা পালন করে। যদি কোনো সমস্যায় পড়েন, তবে দেরি না করে একজন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। আপনার এবং আপনার শিশুর সুস্থতাই সবার আগে।