গ্যাস্ট্রিকের কারণে পিঠে ব্যথা হওয়া খুবই সাধারণ একটি সমস্যা। সঠিক কারণ জেনে ঘরোয়া উপায়ে এবং জীবনযাত্রায় পরিবর্তনের মাধ্যমে আপনি এই ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
Table of Contents
মূল বিষয়বস্তু (Key Takeaways)
গ্যাস্ট্রিক সমস্যা পিঠে ব্যথার অন্যতম কারণ।
পেটে গ্যাস জমা ও বদহজম পিঠের পেশিতে চাপ সৃষ্টি করে।
সঠিক খাদ্যাভ্যাস গ্যাস কমাতে সাহায্য করে।
কিছু ব্যায়াম ও যোগা পিঠের ব্যথা উপশমে কার্যকর।
* প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
গ্যাস্ট্রিক বা পেটের গ্যাস হওয়াটা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের এক পরিচিত সমস্যা। কিন্তু কখনও কি ভেবেছেন, এই সাধারণ গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাই আপনার পিঠে ব্যথার কারণ হতে পারে? অনেকেই এই পিঠে ব্যথাকে আলাদাভাবে দেখেন, কিন্তু আসলে এর শিকড় লুকিয়ে থাকতে পারে আপনার হজমতন্ত্রের গভীরে। এই ব্যথা প্রায়শই বুঝতে পারে না যে এটি গ্যাস্ট্রিকের সাথে যুক্ত, তাই সঠিক কারণ জানাটা খুব জরুরি। আজকের এই লেখায় আমরা সহজ ভাষায় আলোচনা করব কেন গ্যাস্ট্রিকের কারণে পিঠে ব্যথা হয়, এর লক্ষণগুলো কী কী এবং কীভাবে আপনি এই অস্বস্তিকর ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। চলুন, জেনে নেওয়া যাক গ্যাস্ট্রিক ও পিঠে ব্যথার এই গোপন সম্পর্কটি বিস্তারিতভাবে।
গ্যাস্ট্রিক থেকে পিঠে ব্যাথা: কেন এমন হয়?
আপনার মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে, পেটের ভেতরের সমস্যা কীভাবে পিঠের ব্যথা তৈরি করে? এর পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে:
পেটে গ্যাস জমা: আমরা যখন খাবার খাই, তখন আমাদের পাকস্থলী ও অন্ত্রে গ্যাস তৈরি হয়। কিছু বিশেষ খাবার, যেমন – শিম, মটরশুঁটি, ফুলকপি, বাঁধাকপি, অতিরিক্ত তেল-মশলাযুক্ত খাবার, বা কার্বোনেটেড পানীয় (যেমন- কোক, স্প্রাইট) খেলে পেটে গ্যাস হওয়ার প্রবণতা বাড়ে। এই গ্যাস পেট ফুলিয়ে দেয় এবং একটি চাপ সৃষ্টি করে।
পেশিতে টান বা চাপ: পেটে অতিরিক্ত গ্যাস জমা হলে তা পাকস্থলী ও অন্ত্রকে প্রসারিত করে। এই প্রসারণের ফলে আমাদের পেটের চারপাশের পেশিগুলো, বিশেষ করে ডায়াফ্রাম (Diaphragm) পেশি, যা ফুসফুসের নিচে থাকে এবং শ্বাস-প্রশ্বাসে সাহায্য করে, সেটিও প্রভাবিত হয়। যেহেতু ডায়াফ্রাম পেশি ওপরের দিকে মেরুদণ্ড বা পিঠের সাথে যুক্ত, পেটে গ্যাসের চাপ বাড়লে এই পেশিতে টান পড়তে পারে, যা পিঠের ওপরের দিকে বা মাঝখানে ব্যথা হিসেবে অনুভূত হয়।
বদহজম ও অ্যাসিড রিফ্লাক্স: গ্যাস্ট্রিক মানেই শুধু গ্যাস নয়, এর সাথে বদহজম, বুকজ্বালা, গলা জ্বালা বা অ্যাসিড রিফ্লাক্সও হতে পারে। অ্যাসিড যখন খাদ্যনালী দিয়ে ওপরের দিকে উঠে আসে, তখন এটি বুকের পেশিতেও চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এই চাপ অনেক সময় পিঠের দিকেও ছড়িয়ে পড়ে, বিশেষ করে বুকের মাঝখানের অংশে ব্যথা হলে তা পিঠে অনুভূত হতে পারে।
খারাপ অঙ্গবিন্যাস (Poor Posture): যখন কেউ পেটের অস্বস্তি বা ব্যথায় ভোগেন, তখন তিনি স্বাভাবিকভাবেই কুঁজো হয়ে বসেন বা দাঁড়ান। এই কুঁজো হয়ে বসার অভ্যাস পিঠের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে, যা ব্যথাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। দীর্ঘ সময় ধরে এমন অঙ্গবিন্যাসে থাকলে পিঠের পেশি শক্ত হয়ে যায় এবং ব্যথা স্থায়ী রূপ নিতে পারে।
স্নায়ুচাপ (Nerve Compression): কিছু ক্ষেত্রে, পেটের ভেতরের প্রদাহ বা গ্যাস যদি কোনো নির্দিষ্ট স্নায়ুকে চাপ দেয়, তবে সেই ব্যথা শরীরের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে, যার মধ্যে পিঠ অন্যতম।
সহজ কথায়, পেট যখন গ্যাস বা বদহজমে আক্রান্ত থাকে, তখন ভেতরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি প্রসারিত হয় এবং এক ধরনের অস্বস্তি তৈরি হয়। এই অস্বস্তিই পেশি ও স্নায়ুর মাধ্যমে পিঠে ব্যথার অনুভূতি জাগায়।
গ্যাস্ট্রিকজনিত পিঠে ব্যথার লক্ষণ
গ্যাস্ট্রিকের কারণে পিঠে ব্যথা হলে কিছু নির্দিষ্ট লক্ষণ দেখা যায়, যা আপনাকে বুঝতে সাহায্য করবে যে ব্যথাটি গ্যাস্ট্রিক থেকেই হচ্ছে। নিচে কয়েকটি সাধারণ লক্ষণ দেওয়া হলো:
ব্যথার ধরণ: ব্যথা সাধারণত পিঠের মাঝখানে বা উপরের অংশে অনুভূত হয়। এটি তীক্ষ্ণ বা ভোঁতা, যেকোনো ধরনের হতে পারে। অনেক সময় মনে হতে পারে যেন কেউ পিঠের ওপর ভারি কিছু চাপিয়ে রেখেছে।
পেটের লক্ষণের সাথে সম্পর্ক: এই ব্যথা প্রায়শই পেট ভরা লাগা, ব্লোটিং (পেট ফুলে থাকা), অম্বল (বুকজ্বালা), বা দুর্গন্ধযুক্ত ঢেকুর তোলার মতো লক্ষণের সাথে একসাথে দেখা দেয়। যখন পেট ফাঁপা বা গ্যাস বেশি থাকে, তখন পিঠের ব্যথা বাড়ে।
খাবারের সাথে সম্পর্ক: বিশেষ কিছু খাবার খাওয়ার পর বা অতিরিক্ত তেল-মশলাযুক্ত খাবার খেলে এই ব্যথা বেড়ে যেতে পারে। আবার, অ্যান্টাসিড জাতীয় ঔষধ খেলে বা পেট খালি হলে ব্যথা কিছুটা কমে যেতে পারে।
শারীরিক নড়াচড়ার প্রভাব: অনেক সময় শরীর বাঁকালে বা মোচড় দিলে ব্যথা বাড়তে পারে, তবে এই ব্যথা সাধারণত অন্য কোনো বড় শারীরিক সমস্যার কারণে হওয়া পিঠ ব্যথার মতো তীব্র হয় না।
অন্যান্য উপসর্গ: কিছু ক্ষেত্রে, গ্যাস্ট্রিকের প্রতিক্রিয়ায় ক্লান্তি, মাথাব্যথা বা ঘুমের সমস্যাও দেখা দিতে পারে, যা পরোক্ষভাবে পিঠের অস্বস্তি বাড়ায়।
যদি আপনার পিঠের ব্যথা এই লক্ষণগুলোর সাথে মিলে যায়, তবে ধরে নেওয়া যায় এটি গ্যাস্ট্রিকের কারণেই হচ্ছে। তবে, যদি ব্যথা খুব তীব্র হয় বা এর সাথে জ্বর, বমি, মলের সাথে রক্ত যাওয়া, ওজন কমে যাওয়া ইত্যাদি লক্ষণ থাকে, তাহলে দেরি না করে একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া অতি জরুরি।
গ্যাস্ট্রিক থেকে পিঠে ব্যাথা উপশমের উপায়
গ্যাস্ট্রিকের কারণে হওয়া পিঠে ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে কিছু সহজ ও কার্যকর উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে। এগুলো ঘরোয়া প্রতিকার থেকে শুরু করে জীবনযাত্রার পরিবর্তন পর্যন্ত বিস্তৃত।
১. খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনুন
খাবার হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করাই হলো গ্যাস্ট্রিক সমস্যার মূল সমাধান। তাই খাদ্যাভ্যাসে কিছু জরুরি পরিবর্তন আনা প্রয়োজন:
গ্যাস সৃষ্টিকারী খাবার এড়িয়ে চলুন: শিম, মটরশুঁটি, ডাল, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রোকলি, পেঁয়াজ, রসুন, অতিরিক্ত মশলাদার ও ভাজাপোড়া খাবার, এবং কার্বোনেটেড পানীয় (কোক, ফান্টা, সোডা) এড়িয়ে চলুন।
প্রচুর পরিমাণে জল পান করুন: প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস (২-৩ লিটার) জল পান করুন। এটি হজমে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, যা গ্যাস কমাতে সহায়ক।
প্রো টিপ: গরম জল পান করলে তা হজম প্রক্রিয়াকে আরও দ্রুত করতে পারে এবং পেট ফাঁপা কমাতে কার্যকরী।
বারবার অল্প পরিমাণে খান: একবারে বেশি খাবার না খেয়ে সারাদিনে অল্প অল্প করে বারে বারে খান। এতে হজমতন্ত্রের ওপর চাপ কম পড়ে।
ধীরে ধীরে ও চিবিয়ে খান: খাবার দ্রুত খেলে বা ঠিকমতো না চিবিয়ে গিলে ফেললে বায়ু পেটে প্রবেশ করে এবং হজমে সমস্যা হয়। তাই ধীরে ধীরে এবং ভালোভাবে চিবিয়ে খাবার খান।
প্রাকৃতিক হজম সহায়ক: আদা, মৌরি, পুদিনা, এবং জিরা খুব ভালো হজম সহায়ক। আদা কুচি বা আদা চা, মৌরির জল, বা জিরা জল পান করলে গ্যাস ও বদহজম কমতে পারে।
দুগ্ধজাত খাবার সীমিত করুন: অনেকের ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স থাকে, যার ফলে দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার খেলে পেটে গ্যাস হয়। আপনার সমস্যা হলে এগুলো কমিয়ে দেখুন।
২. জীবনযাত্রায় আনুন পরিবর্তন
খাবারের পাশাপাশি আপনার জীবনযাত্রার কিছু অভ্যাস পরিবর্তন করলে গ্যাস্ট্রিক ও পিঠের ব্যথা দুটোই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব:
নিয়মিত ব্যায়াম: হালকা ব্যায়াম, যেমন – হাঁটা, সাঁতার কাটা, বা সাইকেল চালানো হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে এবং গ্যাস বের হতে সাহায্য করে। এছাড়াও, নিয়মিত ব্যায়াম পিঠের পেশিগুলোকে শক্তিশালী করে, যা পিঠের ব্যথা কমাতে সহায়ক।
শারীরিক অঙ্গবিন্যাস উন্নত করুন: বসা বা দাঁড়ানোর সময় মেরুদণ্ড সোজা রাখুন। দীর্ঘক্ষণ একটানা বসে থাকা এড়িয়ে চলুন। প্রতি ৩০-৪৫ মিনিট পর পর উঠে একটু হেঁটে আসুন।
ঘুমের অভ্যাস: রাতে পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন। ঘুমানোর অন্তত ২-৩ ঘণ্টা আগে রাতের খাবার খেয়ে নিন। শোয়ার সময় মাথা সামান্য উঁচু করে রাখলে অ্যাসিড রিফ্লাক্স কম হয়।
ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করুন: ধূমপান এবং অতিরিক্ত মদ্যপান হজমতন্ত্রের ক্ষতি করে এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বাড়ায়।
মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ: মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা হজম প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে। যোগব্যায়াম, মেডিটেশন বা পছন্দের কোনো কাজ করে মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করুন।
৩. ঘরোয়া প্রতিকার ও ব্যায়াম
কিছু নির্দিষ্ট ঘরোয়া পদ্ধতি এবং সহজ ব্যায়াম এই ব্যথা কমাতে দারুণ কাজ করে:
গরম সেঁক: পিঠের যে অংশে ব্যথা করছে, সেখানে একটি হট ওয়াটার ব্যাগ বা গরম তোয়ালে দিয়ে সেঁক দিলে পেশি শিথিল হয় এবং ব্যথা কমে।
মৌরি ও জিরা: এক গ্লাস গরম জলে এক চামচ মৌরি বা জিরা মিশিয়ে পান করলে গ্যাস ও বদহজম থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
আদা: তাজা আদা কুচি করে চিবিয়ে খেতে পারেন বা আদা চা পান করতে পারেন। আদা হজমের জন্য খুবই উপকারী।
পুদিনা: পুদিনা পাতা চিবিয়ে খেলে বা পুদিনা চা পান করলে পেট ঠাণ্ডা হয় এবং গ্যাস কমে।
সহজ কিছু ব্যায়াম:
পেট ম্যাসাজ (Abdominal Massage): হালকা হাতে ঘড়ির কাঁটার দিকে পেটে ম্যাসাজ করলে গ্যাস বের হতে সাহায্য করে।
মেরুদণ্ড প্রসারিত করা (Spinal Twist): মেঝেতে শুয়ে একটি হাঁটু বুকের কাছে এনে অন্য দিকে ঘোরান। এটি পিঠের পেশি শিথিল করতে সাহায্য করে।
শিশুসনা (Child’s Pose): যোগাভ্যাসের এই আসনটি পিঠের চাপ কমাতে ও শিথিল করতে খুব কার্যকর।
হাঁটু বুকের কাছে আনা (Knee-to-Chest Pose): চিৎ হয়ে শুয়ে এক বা দুটি হাঁটু বুকের দিকে টেনে আনলে তা পিঠ ও পেটের অস্বস্তি কমাতে পারে।
গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ ও কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন
যদি আপনার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা গুরুতর হয় এবং ঘরোয়া উপায়েও তা না কমে, তবে কিছু ঔষধ ডাক্তারের পরামর্শে ব্যবহার করতে পারেন।
সাধারণত ব্যবহৃত ঔষধসমূহ:
গ্যাস্ট্রিকের চিকিৎসায় সাধারণত নিম্নলিখিত ঔষধগুলো ব্যবহার করা হয়:
ঔষধের ধরণ | কীভাবে কাজ করে | ব্যবহার |
---|---|---|
অ্যান্টাসিড (Antacids) | পেটের অতিরিক্ত অ্যাসিডকে প্রশমিত করে। | বুকে জ্বালাপোড়া ও পেট ফাঁপা কমাতে তাৎক্ষণিক আরাম দেয়। (যেমন: Rennie, Tums) |
H2 ব্লকার (H2 Blockers) | গ্যাস্ট্রিক অ্যাসিড উৎপাদন কমিয়ে দেয়। | অ্যাসিডিটি ও বুকজ্বালা দীর্ঘক্ষণ নিয়ন্ত্রণে রাখে। (যেমন: Ranitidine, Famotidine) |
প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর (PPIs) | গ্যাস্ট্রিক অ্যাসিড উৎপাদন প্রায় সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়। | গুরুতর অ্যাসিডিটি, আলসার বা GERD (Gastroesophageal Reflux Disease) এর চিকিৎসায় কার্যকর। (যেমন: Omeprazole, Pantoprazole) |
গ্যাস রিলিভিং মেডিসিন (Simethicone) | পেটের গ্যাসীয় বুদবুদগুলোকে ভেঙে দেয়, যাতে তা সহজে শরীর থেকে বেরিয়ে যেতে পারে। | পেট ফাঁপা ও গ্যাসের অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করে। (যেমন: Gas-X, specialised formulations) |
গুরুত্বপূর্ণ: কোনো ঔষধ সেবনের আগে অবশ্যই একজন রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। নিজের ইচ্ছেমতো ঔষধ সেবন করলে তা ক্ষতির কারণ হতে পারে।
কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন?
যদিও গ্যাস্ট্রিক ও পিঠের ব্যথা সাধারণত গুরুতর কিছু নয়, তবুও কিছু ক্ষেত্রে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া অত্যন্ত জরুরি। নিচের লক্ষণগুলো দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন:
তীব্র ও অসহনীয় ব্যথা: যদি পিঠের ব্যথা খুব বেশি হয় এবং কোনোভাবেই কমতে না চায়।
ব্যথার সাথে জ্বর: যদি পিঠ ব্যথার সাথে জ্বর থাকে, তবে এটি সংক্রমণের লক্ষণ হতে পারে।
মল বা প্রস্রাবে পরিবর্তন: মলের সাথে রক্ত যাওয়া, কালো বা অস্বাভাবিক মলত্যাগ, বা প্রস্রাবে অসুবিধা হলে।
অতিরিক্ত ওজন কমে যাওয়া: কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ করে ওজন কমতে থাকলে।
বমি বা বমি ভাব: তীব্র বমি বা অনবরত বমি হওয়ার সাথে পিঠে ব্যথা হলে।
শ্বাসকষ্ট: যদি পিঠ ব্যথার সাথে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।
মাথা ঘোরা বা দুর্বলতা: অতিরিক্ত দুর্বল লাগা বা মাথা ঘোরানো।
ব্যথা নির্দিষ্ট কোনো অঙ্গ বা অংশে সীমাবদ্ধ না থাকা: ব্যথা যদি কেবল পিঠেই সীমাবদ্ধ না থেকে পেট, বুক বা শরীরের অন্য কোথাও ছড়িয়ে পড়ে।
এই লক্ষণগুলো গ্যাস্ট্রিকের চেয়ে গুরুতর কোনো স্বাস্থ্য সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে, যেমন – কিডনিতে পাথর, হার্টের সমস্যা, বা মেরুদণ্ডের কোনো রোগ। তাই এটিকে অবহেলা করা উচিত নয়।
গ্যাস্ট্রিক ও পিঠ ব্যথার সম্পর্ক নিয়ে সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ)
গ্যাস্ট্রিক থেকে পিঠে ব্যথা নিয়ে সাধারণত যে প্রশ্নগুলো মানুষের মনে আসে, সেগুলোর উত্তর নিচে দেওয়া হলো:
প্রশ্ন: গ্যাস্ট্রিকের কারণে কি সবসময় পিঠে ব্যথা হয়?
উত্তর: না, গ্যাস্ট্রিকের কারণে সবার পিঠে ব্যথা হয় না। তবে, পেটে অতিরিক্ত গ্যাস জমা হলে তা পিঠের পেশিতে চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং ব্যথা হিসেবে অনুভূত হতে পারে। এটি একটি সাধারণ সমস্যা হলেও, সবার ক্ষেত্রে ঘটে এমনটা নয়।
প্রশ্ন: পিঠের কোন অংশে গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা বেশি হয়?
উত্তর: গ্যাস্ট্রিকের কারণে হওয়া পিঠের ব্যথা সাধারণত পিঠের মাঝখানে বা উপরের দিকে (scapula বা shoulder blade এর আশেপাশে) অনুভূত হয়। কিছু ক্ষেত্রে এটি বুকের মাঝামাঝি অংশেও হতে পারে, যা পিঠ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।
প্রশ্ন: গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা আর হার্টের ব্যথার মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর: গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা সাধারণত পেট ফাঁপা, বুকজ্বালা বা বদহজমের সাথে সম্পর্কিত থাকে এবং খাবার খেলে বা অ্যান্টাসিড খেলে আরাম পাওয়া যায়। অন্যদিকে, হার্টের ব্যথা বুকে তীব্র চাপ সৃষ্টি করে, যা বাম হাতে, ঘাড় বা চোয়ালে ছড়িয়ে যেতে পারে এবং এর সাথে শ্বাসকষ্ট, ঘাম হওয়া বা মাথা ঘোরানোর মতো লক্ষণ থাকে। হার্টের ব্যথা গ্যাস্ট্রিকের ব্যথার চেয়ে অনেক বেশি গুরুতর।
প্রশ্ন: আমি কি গ্যাস্ট্রিকের জন্য পিঠের ব্যায়াম করতে পারি?
উত্তর: হ্যাঁ, কিছু হালকা ব্যায়াম, যেমন – যোগাসন (শিশুসনা, মার্জারাসন) এবং পিঠ প্রসারিত করার ব্যায়ামগুলো (stretching exercises) পিঠের পেশি শিথিল করতে ও ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। তবে, ব্যায়াম করার সময় ব্যথা বাড়লে তা বন্ধ করে দিন।
প্রশ্ন: কোন ধরনের খাবার খেলে গ্যাস্ট্রিক ও পিঠের ব্যথা বাড়ে?
উত্তর: অতিরিক্ত তেল-মশলাযুক্ত খাবার, ভাজাপোড়া, ফাস্ট ফুড, কার্বোনেটেড পানীয় (কোমল পানীয়), অতিরিক্ত আঁশযুক্ত সবজি (যেমন – ফুলকপি, বাঁধাকপি), এবং কিছু ফল (যেমন – কাঁচা আম) খেলে গ্যাস্ট্রিক ও পিঠের ব্যথা বাড়তে পারে।
প্রশ্ন: গ্যাস্ট্রিকের জন্য ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে কী ব্যবহার করা যেতে পারে?
উত্তর: আদা চা, মৌরি জল, জিরা জল, পুদিনা পাতা, এবং গরম সেঁক গ্যাস্ট্রিকের কারণে হওয়া পিঠের ব্যথা উপশমে খুব কার্যকরী। এইগুলো হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করতে এবং গ্যাস কমাতে সাহায্য করে।
প্রশ্ন: দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার কারণে কি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বাড়ে?
উত্তর: দীর্ঘক্ষণ একই ভঙ্গিতে বসে থাকলে তা হজম প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয় এবং পেটে গ্যাস জমাতে সাহায্য করে। তাই, নিয়মিত বিরতিতে উঠে হাঁটাচলা করা উচিত।
উপসংহার
গ্যাস্ট্রিক থেকে পিঠে ব্যথা হওয়া একটি পরিচিত কিন্তু প্রায়শই অবহেলিত সমস্যা। এই ব্যথাকে কেবল পিঠের সমস্যা হিসেবে না দেখে এর মূল কারণ, অর্থাৎ পেটের ভেতরের অস্বস্তি ও গ্যাসের দিকে নজর দেওয়া জরুরি। খাদ্যাভ্যাসে সঠিক পরিবর্তন, নিয়মিত হালকা ব্যায়াম, এবং জীবনযাত্রায় কিছু ইতিবাচক অভ্যাস যোগ করার মাধ্যমে আপনি সহজেই এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। মনে রাখবেন, শরীর একটি সমন্বিত ব্যবস্থা, তাই এক অংশের সমস্যা অন্য অংশেও প্রভাব ফেলতে পারে। আপনার শরীরকে বুঝুন, সঠিক যত্ন নিন এবং প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে দ্বিধা করবেন না। সুস্থ থাকুন, সুন্দর থাকুন!