দাঁতের ব্যথার ট্যাবলেট নাম: দ্রুত ও কার্যকর উপশমের জন্য আপনার গাইড।
দাঁতের ব্যথা খুবই কষ্টদায়ক হতে পারে, যা প্রতিদিনের জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করে। সঠিক সময়ে সঠিক ওষুধ ব্যবহার করলে এই ব্যথা থেকে দ্রুত মুক্তি পাওয়া সম্ভব। এই আর্টিকেলে আমরা দাঁতের ব্যথার জন্য কার্যকর কিছু ট্যাবলেটের নাম এবং তাদের ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব, যাতে আপনি সহজেই আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে পারেন।
দাঁতের ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছেন? কোন ট্যাবলেটটি আপনার জন্য সঠিক হবে তা জেনে নিন।
Key Takeaways
ব্যথানাশক ট্যাবলেট দ্রুত রেহাই দেয়।
সঠিক ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শে নিন।
সাধারণত প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন ব্যবহার করা হয়।
অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন হলে ডাক্তার জানাবেন।
মুখের স্বাস্থ্যবিধি ব্যথা প্রতিরোধে জরুরি।
প্রাকৃতিক উপায়েও ব্যথা কমানো যায়।
দাঁতে ব্যথা হলে মনে হয় যেন সারা দুনিয়ার যন্ত্রণা এসে জমা হয়েছে। কামড় দেওয়া, কথা বলা, কিংবা রাতে ঘুমানো – সবকিছুই কঠিন হয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই দ্রুত ব্যথানাশক ট্যাবলেটের খোঁজ করেন। বাজারে বিভিন্ন ধরণের দাঁতের ব্যথার ট্যাবলেটের নাম পাওয়া যায়, কিন্তু কোনটি আপনার জন্য সবচেয়ে কার্যকর হবে তা জানা জরুরি। অনেক সময় দেখা যায়, ভুল ওষুধ বা ভুল ডোজে ব্যথা আরো বাড়তে পারে। তাই, দাঁতের ব্যথার জন্য সঠিক ট্যাবলেট নির্বাচন এবং তার সঠিক ব্যবহার জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই গাইডলাইনটি আপনাকে এই বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা দেবে এবং দাঁতের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করবে। আমরা এখানে কিছু পরিচিত ও কার্যকর ট্যাবলেটের নাম, তাদের কার্যকারিতা এবং কিছু ঘরোয়া উপায়ের কথাও বলব, যা আপনাকে দ্রুত আরাম দেবে।
Table of Contents
দাঁতের ব্যথার ট্যাবলেট নাম: পরিচিত ও কার্যকর কিছু ঔষধ
দাঁতের ব্যথা নানা কারণে হতে পারে, যেমন – দাঁতের পোকা লাগা (cavities), মাড়ির প্রদাহ (gingivitis), দাঁতের গোড়ায় ইনফেকশন, দাঁত তুলে ফেলার পর অথবা দাঁত ওঠার সময়। যন্ত্রণাদায়ক এই ব্যথা থেকে দ্রুত মুক্তি পেতে অনেকেই ফার্মেসিতে গিয়ে দাঁতের ব্যথার ট্যাবলেট নাম জিজ্ঞাসা করেন। নিচে কিছু বহুল ব্যবহৃত এবং কার্যকর ব্যথানাশক ট্যাবলেটের নাম দেওয়া হলো:
১. প্যারাসিটামল (Paracetamol)
প্যারাসিটামল একটি সাধারণ এবং নিরাপদ ব্যথানাশক ঔষধ, যা দাঁতের হালকা থেকে মাঝারি ব্যথা উপশমে বেশ কার্যকর। এটি জ্বর কমাতেও সাহায্য করে। এটি সাধারণত ২sunday বা ৫০০মি.গ্রা. ডোজে পাওয়া যায়।
- কার্যকারিতা: তীব্রতা কম থেকে মাঝারি ব্যথা, জ্বর।
- ডোজ: প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সাধারণত ৫০০মি.গ্রা. প্রতি ৪-৬ ঘণ্টা পর পর। সর্বাধিক ৪০০০মি.গ্রা. (৮টি ট্যাবলেট) ২৪ ঘণ্টায়।
- সাবধানতা: লিভারের সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
২. আইবুপ্রোফেন (Ibuprofen)
আইবুপ্রোফেন একটি নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগ (NSAID)। এটি শুধু ব্যথা কমায় না, প্রদাহ (inflammation) কমাতেও সাহায্য করে। দাঁতের ইনফেকশন বা মাড়ির প্রদাহের কারণে হওয়া ব্যথার জন্য এটি বেশ কার্যকর। এটি সাধারণত ২০০মি.গ্রা. বা ৪০০মি.গ্রা. ডোজে পাওয়া যায়।
- কার্যকারিতা: মাঝারি থেকে তীব্র ব্যথা, প্রদাহ।
- ডোজ: প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সাধারণত ৪০০মি.গ্রা. প্রতি ৬-৮ ঘণ্টা পর পর।
- সাবধানতা: অ্যাজমা, পেটের আলসার বা কিডনির সমস্যা থাকলে ব্যবহার করবেন না। খালি পেটে খাওয়া উচিত নয়।
৩. ন্যাপ্রোক্সেন (Naproxen)
ন্যাপ্রোক্সেনও একটি NSAID, যা আইবুপ্রোফেনের মতোই কাজ করে। এটি দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা উপশমে বেশি কার্যকর হতে পারে। এটি সাধারণত ২৫০মি.গ্রা. বা ৫০০মি.গ্রা. ডোজে পাওয়া যায়।
- কার্যকারিতা: দীর্ঘস্থায়ী ও তীব্র ব্যথা, প্রদাহ।
- ডোজ: প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সাধারণত ২৫০মি.গ্রা. প্রতি ৮-১২ ঘণ্টা পর পর।
- সাবধানতা: আইবুপ্রোফেনের মতোই, অ্যাজমা, আলসার বা কিডনির সমস্যা থাকলে সতর্কতা জরুরি।
৪. ডাইক্লোফেনাক (Diclofenac)
ডাইক্লোফেনাক একটি শক্তিশালী NSAID এবং এটি বিভিন্ন ধরণের ব্যথায় ব্যবহৃত হয়, যার মধ্যে দাঁতের ব্যথাও রয়েছে। এটি দ্রুত কাজ করে এবং প্রদাহ ও ব্যথা কমাতে খুব কার্যকর। এটি সাধারণত ২৫মি.গ্রা. বা ৫০মি.গ্রা. ডোজে পাওয়া যায়।
- কার্যকারিতা: তীব্র ব্যথা, প্রদাহ, পোস্ট-অপারেটিভ ব্যথা।
- ডোজ: চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী।
- সাবধানতা: হার্টের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ বা কিডনির রোগ থাকলে ব্যবহার করা উচিত নয়।
৫. মেফেনামিক অ্যাসিড (Mefenamic Acid)
মেফেনামিক অ্যাসিডও একটি NSAID যা দাঁতের ব্যথা উপশমে খুব পরিচিত। এটি মাসিকের ব্যথার জন্যও ব্যবহৃত হয়। এটি সাধারণত ২৫০মি.গ্রা. ডোজে পাওয়া যায়।
- কার্যকারিতা: মাঝারি থেকে তীব্র ব্যথা।
- ডোজ: প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সাধারণত ২৫০মি.গ্রা. প্রতি ৬ ঘণ্টা পর পর।
- সাবধানতা: আলসার বা কিডনি রোগীদের জন্য উপযুক্ত নয়।
৬. কম্বিনেশন ঔষধ (Combination Medicines)
কিছু ঔষধ প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেনের সাথে অন্য কোন উপাদান (যেমন: ক্যাফেইন বা কোডিন) মিশিয়ে তৈরি করা হয়, যা ব্যথানাশক ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এদের একটি পরিচিত উদাহরণ হলো ডাইক্লোফেনাক সোডিয়াম ও প্যারাসিটামল কম্বিনেশন।
- কার্যকারিতা: তীব্র ব্যথা (বিশেষ করে ইনফেকশনের কারণে)।
- ডোজ: সাধারণত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী।
- সাবধানতা: এই ধরণের ঔষধ ঘন ঘন বা দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহার করা উচিত নয়।
গুরুত্বপূর্ণ নোট: এই ঔষধগুলোর নাম শুধুমাত্র তথ্যের জন্য দেওয়া হয়েছে। কোন ঔষধটি আপনার জন্য উপযুক্ত, তা একজন রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে জেনে নেওয়া উচিত। তিনি আপনার ব্যথার কারণ এবং আপনার শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে সঠিক ঔষধ ও ডোজ নির্ধারণ করবেন।
দাঁতের ব্যথার ট্যাবলেট ব্যবহারের নিয়মাবলী
দাঁতের ব্যথার ট্যাবলেট সেবনের কিছু নির্দিষ্ট নিয়মাবলী রয়েছে যা মেনে চললে আপনি সবচেয়ে ভালো ফল পাবেন এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এড়াতে পারবেন।
- নির্দেশনা অনুসরণ করুন: ঔষধের প্যাকেজের ভেতরে থাকা নির্দেশনা বা চিকিৎসকের পরামর্শ মনোযোগ দিয়ে পড়ুন এবং সেই অনুযায়ী ঔষধ সেবন করুন।
- সঠিক ডোজ: কখনোই নির্ধারিত ডোজের চেয়ে বেশি ঔষধ সেবন করবেন না। অতিরিক্ত ডোজে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
- খালি পেটে নয়: বেশিরভাগ ব্যথানাশক ঔষধ, বিশেষ করে NSAID জাতীয় ঔষধ (যেমন আইবুপ্রোফেন, ন্যাপ্রোক্সেন, ডাইক্লোফেনাক) খালি পেটে খেলে পেটে গ্যাস বা আলসারের মতো সমস্যা হতে পারে। তাই, খাওয়ার পরে ঔষধ সেবন করুন।
- পর্যাপ্ত পানি পান করুন: ঔষধ সেবনের সময় এবং সারাদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন।
- নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার: ব্যথানাশক ট্যাবলেট শুধুমাত্র সাময়িক আরামের জন্য। দাঁতের মূল সমস্যা সমাধানের জন্য অবশ্যই দন্ত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
- পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: ঔষধ সেবনের পর কোন অস্বাভাবিকতা, যেমন – পেটে ব্যথা, বমি, শ্বাসকষ্ট, অ্যালার্জি বা অন্য কোন সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত ঔষধ বন্ধ করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন?
যদি নিচের লক্ষণগুলো দেখা যায়, তবে দেরি না করে একজন দন্ত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত:
- ব্যথা ৭২ ঘণ্টার বেশি স্থায়ী হলে।
- ব্যথার সাথে জ্বর বা শরীর দুর্বল লাগলে।
- মুখ খুলতে বা খাবার গিলতে কষ্ট হলে।
- মুখের ভেতর বা মাড়িতে অস্বাভাবিক ফোলা দেখা দিলে।
- অতিরিক্ত রক্তপাত হলে।
দাঁতের ব্যথার জন্য সেরা কিছু ট্যাবলেট (তুলনামূলক আলোচনা)
বিভিন্ন ধরনের দাঁতের ব্যথার জন্য কোন ট্যাবলেটটি বেশি কার্যকর হতে পারে, তা নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা নিচে দেওয়া হলো। মনে রাখবেন, এটি একটি সাধারণ ধারণা মাত্র, ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে এটি ভিন্ন হতে পারে।
ব্যথার ধরণ | কার্যকরী ঔষধের নাম | কার্যকারিতার সময় | সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া |
---|---|---|---|
হালকা থেকে মাঝারি ব্যথা | প্যারাসিটামল (Paracetamol) | ৩০-৬০ মিনিট | বিরল, তবে বেশি ডোজে লিভারের ক্ষতি করতে পারে। |
মাঝারি ব্যথা ও প্রদাহ | আইবুপ্রোফেন (Ibuprofen) | ৩০-৬০ মিনিট | পেট জ্বালা, বমি বমি ভাব। খালি পেটে খেলে সমস্যা বাড়ে। |
তীব্র ব্যথা ও প্রদাহ (দীর্ঘস্থায়ী) | ন্যাপ্রোক্সেন (Naproxen) | ১-২ ঘণ্টা | পেট জ্বালা, হজমে সমস্যা। |
পোস্ট-অপারেটিভ বা ইনফেকশনের তীব্র ব্যথা | ডাইক্লোফেনাক (Diclofenac) | ৩০-৬০ মিনিট | পেট ব্যথা, হার্ট ও কিডনির সমস্যা হতে পারে। |
সাধারণ মাঝারি ব্যথা | মেফেনামিক অ্যাসিড (Mefenamic Acid) | ৩০-৬০ মিনিট | পেটেই অস্বস্তি, ডায়েরিয়া। |
প্রো টিপ: দাঁতের ব্যথা শুরু হওয়ার সাথে সাথে ব্যথানাশক ট্যাবলেট সেবন না করে, প্রথমে ঠান্ডা পানি দিয়ে কুলকুচি করে দেখুন। অনেক সময় এটি ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। তবে ব্যথা বেশি হলে বা না কমলে তবেই ঔষধের সাহায্য নিন।
দাঁতে ইনফেকশনের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক
যদি দাঁতের ব্যথা ইনফেকশনের কারণে হয়, যেমন – দাঁতের গোড়ায় পুঁজ জমা বা মাড়ির মারাত্মক প্রদাহ, তবে শুধু ব্যথানাশক ঔষধ যথেষ্ট নয়। এক্ষেত্রে দন্ত চিকিৎসক প্রয়োজন অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ প্রেসক্রাইব করেন।
কিছু সাধারণ অ্যান্টিবায়োটিক যা দাঁতের ইনফেকশনের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়:
- অ্যামোক্সিসিলিন (Amoxicillin): এটি একটি পেনিসিলিন জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিক, যা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে খুবই কার্যকর।
- মেট্রোনিডাজল (Metronidazole): এটি anaerobic ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর, যা মুখে ইনফেকশন তৈরিতে দায়ী।
- অ্যাজিথ্রোমাইসিন (Azithromycin): সংবেদনশীল ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে এটি ব্যবহৃত হয়।
- ক্লিন্ডামাইসিন (Clindamycin): যদি পেনিসিলিনে অ্যালার্জি থাকে, তবে এটি বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে।
গুরুত্বপূর্ণ: অ্যান্টিবায়োটিক অবশ্যই চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত সেবন করতে হবে। কোর্স অসম্পূর্ণ রাখলে ইনফেকশন আবার ফিরে আসতে পারে এবং ব্যাকটেরিয়া ঔষধ প্রতিরোধী হয়ে উঠতে পারে।
দাঁতের ব্যথা উপশমে ঘরোয়া পদ্ধতি
যদিও ট্যাবলেট বা ঔষধ দ্রুত ব্যথা কমাতে পারে, তবে কিছু ঘরোয়া পদ্ধতিও দাঁতের ব্যথা উপশমে প্রাকৃতিক ও নিরাপদ উপায় হিসেবে কাজ করে।
- লবণ পানি দিয়ে কুলকুচি: এক গ্লাস উষ্ণ পানিতে আধা চা চামচ লবণ মিশিয়ে দিনে কয়েকবার কুলকুচি করলে মাড়ির প্রদাহ ও ব্যথা কমতে পারে।
- লবঙ্গের তেল (Clove Oil): লবঙ্গে থাকা ইউজেনল (eugenol) নামক উপাদান প্রাকৃতিক অ্যানাস্থেটিক ও অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে। একটি তুলার বল লবঙ্গের তেলে ভিজিয়ে আক্রান্ত দাঁতে কিছুক্ষণ লাগিয়ে রাখুন।
- ঠান্ডা সেঁক: দাঁতের ব্যথার স্থানে বাইরে থেকে একটি কাপড়ে বরফ পেঁচিয়ে ১০-১৫ মিনিট ধরে সেঁক দিলে ফোলা ও ব্যথা কমতে পারে।
- রসুন: রসুনে অ্যালিসিন (allicin) নামক উপাদান থাকে, যা জীবাণুনাশক। একটি রসুনের কোয়া থেঁতো করে আক্রান্ত স্থানে লাগালে উপকার মিলতে পারে।
- পেঁয়াজ: পেঁয়াজে থাকা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান মুখের জীবাণু কমাতে সাহায্য করে।
প্রো টিপ: অতিরিক্ত মিষ্টি বা ঠান্ডা খাবার দাঁতের ব্যথা বাড়িয়ে দিতে পারে। ব্যথা চলাকালীন এই ধরণের খাবার এড়িয়ে চলুন।
দাঁতের ব্যথা প্রতিরোধে করণীয়
ব্যথা হওয়ার পর ঔষধ বা ঘরোয়া পদ্ধতি ব্যবহার করে আরাম পাওয়া গেলেও, দাঁতের ব্যথা প্রতিরোধের সর্বোত্তম উপায়। ভালো মৌখিক স্বাস্থ্যবিধি দাঁতের দীর্ঘমেয়াদী সুস্থতা নিশ্চিত করে।
- নিয়মিত ব্রাশ করা: দিনে অন্তত দুইবার (সকালে ঘুম থেকে উঠে এবং রাতে ঘুমানোর আগে) ফ্লুরাইডযুক্ত টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করুন।
- ফ্লসিং: প্রতিদিন একবার দাঁত ফ্লস করুন। এটি দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা খাদ্যকণা ও প্ল্যাক দূর করতে সাহায্য করে, যা ব্রাশ দিয়ে সবসময় পরিষ্কার হয় না।
- মাউথওয়াশ ব্যবহার: অ্যান্টিসেপটিক মাউথওয়াশ ব্যবহার করলে মুখের জীবাণু নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- স্বাস্থ্যকর খাবার: চিনিযুক্ত খাবার ও পানীয় কম খান। ফল, সবজি এবং দুগ্ধজাতীয় খাবার দাঁতের জন্য উপকারী।
- নিয়মিত দন্ত পরীক্ষা: প্রতি ছয় মাস অন্তর দন্ত চিকিৎসকের কাছে গিয়ে দাঁত পরীক্ষা করান। প্রাথমিক পর্যায়ে সমস্যা ধরা পড়লে চিকিৎসা সহজ হয়।
- ধূমপান পরিহার: ধূমপান মাড়ি রোগ এবং দাঁতের সমস্যা বাড়িয়ে তোলে।
সাধারণ জিজ্ঞাস্য (FAQ)
প্রশ্ন ১: দাঁতের যেকোনো ব্যথার জন্য কি প্যারাসিটামল খাওয়া যাবে?
উত্তর: হালকা থেকে মাঝারি ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল একটি নিরাপদ ঔষধ। তবে যদি ব্যথা তীব্র হয় বা ইনফেকশন থাকে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
প্রশ্ন ২: দাঁতের ব্যথা হলে কোন NSAID ঔষধগুলো বেশি কার্যকর?
উত্তর: আইবুপ্রোফেন, ন্যাপ্রোক্সেন এবং ডাইক্লোফেনাক NSAID শ্রেণীর ঔষধ, যা প্রদাহ ও ব্যথার জন্য খুব কার্যকর। তবে এগুলো চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যবহার করা ভালো।
প্রশ্ন ৩: ঔষধ ছাড়া দাঁতের ব্যথা কমানোর কোনো উপায় আছে কি?
উত্তর: হ্যাঁ, লবণ পানি দিয়ে কুলকুচি, লবঙ্গের তেল ব্যবহার, ঠান্ডা সেঁক ইত্যাদি ঘরোয়া পদ্ধতিতে ব্যথা কমানো যায়। তবে এগুলো শুধু সাময়িক উপশম দেয়।
প্রশ্ন ৪: দাঁতের ব্যথার ঔষধ কি নিয়মিত খাওয়া উচিত?
উত্তর: না, ব্যথানাশক ঔষধ শুধুমাত্র প্রয়োজন অনুযায়ী এবং স্বল্প সময়ের জন্য ব্যবহার করা উচিত। দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। দাঁতের মূল কারণ নির্ণয় ও চিকিৎসা করানো জরুরি।
প্রশ্ন ৫: শিশু বা গর্ভবতী মহিলাদের জন্য দাঁতের ব্যথার কোন ট্যাবলেট নিরাপদ?
উত্তর: শিশুদের এবং গর্ভবতী মহিলাদের জন্য প্যারাসিটামল সাধারণত নিরাপদ ধরা হয়, তবে ডোজ অবশ্যই বয়স ও ওজন অনুযায়ী চিকিৎসকের পরামর্শে নির্ধারণ করতে হবে। NSAID জাতীয় ঔষধ সাধারণত তাদের জন্য সেবন করা উচিত নয়।
প্রশ্ন ৬: দাঁতের ব্যথার সাথে যদি জ্বর থাকে, তাহলে কি ঔষধ খাব?
উত্তর: জ্বর ও ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল একটি ভালো বিকল্প। তবে জ্বর অতিরিক্ত হলে বা অন্য কোনো উপসর্গ থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
উপসংহার
দাঁতের ব্যথা সত্যিই কষ্টদায়ক হতে পারে, কিন্তু সঠিক তথ্য ও ঔষধের সাহায্যে এটি থেকে দ্রুত মুক্তি পাওয়া সম্ভব। দাঁতের ব্যথার ট্যাবলেট নাম এবং তাদের ব্যবহার সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি। মনে রাখবেন, কোন ঔষধটি আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো হবে, তা জানার জন্য একজন দন্ত চিকিৎসক বা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া সবসময়ই শ্রেয়। ঔষধ সেবনের পাশাপাশি ঘরোয়া পদ্ধতি এবং সর্বোপরি, নিয়মিত মুখের স্বাস্থ্যবিধির যত্ন নেওয়া আপনাকে সুস্থ ও ব্যথামুক্ত দাঁতের অধিকার দেবে।