পুরুষের পায়খানার সাথে রক্ত পড়া গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। এটি অন্ত্রের প্রদাহ, পাইলস, ফিশার বা ক্যান্সারের ইঙ্গিত দিতে পারে। দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
Table of Contents
- Key Takeaways
- পায়খানার সাথে রক্ত পড়ার সাধারণ কারণসমূহ
- কখন ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত?
- স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্যের জন্য বিশ্বস্ত উৎস
- রোগ নির্ণয় পদ্ধতি
- চিকিৎসা পদ্ধতি
- প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
- একটি কেস স্টাডি (কাল্পনিক)
- প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ)
- প্রশ্ন ১: পায়খানার সাথে রক্তে কি সবসময় ক্যান্সার হয়?
- প্রশ্ন ২: টকটকে লাল রক্ত পড়া মানে কি?
- প্রশ্ন ৩: কালো রঙের মল কি বিপজ্জনক?
- প্রশ্ন ৪: ঘরে বসে কি আমি পাইলসের রক্তপাত বন্ধ করতে পারি?
- প্রশ্ন ৫: পুরুষদের ডায়েটে কী কী পরিবর্তন আনলে রক্তপাত কমতে পারে?
- প্রশ্ন ৬: মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে এই সমস্যা কি বেশি দেখা যায়?
- উপসংহার
Key Takeaways
- রক্তক্ষরণ অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক কারণ হতে পারে।
- পাইলস ও ফিশার সাধারণ কারণ।
- অন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগও রক্তপাত ঘটায়।
- কালো বা আলকাতরার মতো মল মলাশয়ের সমস্যার ইঙ্গিত দেয়।
- দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
পুরুষদের পায়খানার সাথে রক্ত পড়া একটি ভয় জাগানো উপসর্গ। অনেকেই এই নিয়ে বিভ্রান্তিতে ভোগেন এবং সঠিক তথ্য না জানার কারণে দুশ্চিন্তায় থাকেন। কখনো কখনো এটি সামান্য সমস্যা হলেও, অনেক সময় এটি গুরুতর রোগের লক্ষণ হতে পারে। তাই, এই বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়। আপনার যদি পায়খানার সাথে রক্ত পড়ার সমস্যা দেখা দেয়, তবে আতঙ্কিত না হয়ে সঠিক কারণ জানার চেষ্টা করা উচিত। এই বিস্তারিত নির্দেশিকায় আমরা পুরুষের পায়খানার সাথে রক্ত পড়ার বিভিন্ন কারণ, কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন এবং কি কি করণীয়, তা নিয়ে আলোচনা করব। আসুন, আমরা সহজভাবে বিষয়টি জেনে নিই।
পায়খানার সাথে রক্ত পড়ার সাধারণ কারণসমূহ
পায়খানার সাথে রক্ত পড়া বিভিন্ন কারণে হতে পারে। এর মধ্যে কিছু সাধারণ কারণ রয়েছে যা প্রায়শই দেখা যায়। নিচে কয়েকটি প্রধান কারণ আলোচনা করা হলো:
১. পাইলস (Hemorrhoids)
পাইলস বা অর্শ হলো মলদ্বারের ভেতরের বা চারপাশের রক্তনালী ফুলে যাওয়া। এটি পুরুষের মধ্যে খুবই সাধারণ একটি সমস্যা। বসে থাকা বা দাঁড়িয়ে থাকার সময় রক্তনালীর উপর অতিরিক্ত চাপের কারণে এটি হতে পারে।
- লক্ষণ:
- পায়খানার সময় বা পরে টকটকে লাল রক্ত যাওয়া।
- মলদ্বারের আশেপাশে চুলকানি বা ব্যথা।
- মলদ্বারে ফোলা বা মাংসপিণ্ড।
- কারণ:
- দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য।
- গর্ভাবস্থা (যদিও এটি পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, তবে কিছু শারীরিক কারণ থাকতে পারে)।
- ভারী জিনিস তোলা।
- অতিরিক্ত ওজন।
২. অ্যানাল ফিশার (Anal Fissure)
অ্যানাল ফিশার হলো মলদ্বারের ভেতরের চামড়ায় একটি ছোট ফাটা বা চিড়। সাধারণত কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে শক্ত মল বের হওয়ার সময় এই চিড় সৃষ্টি হয়।
- লক্ষণ:
- মলত্যাগের সময় তীব্র ব্যথা।
- মলত্যাগের পর ফোঁটা ফোঁটা বা অল্প পরিমাণে তাজা লাল রক্ত দেখা যাওয়া।
- মলদ্বারের আশেপাশে জ্বালাপোড়া।
৩. ডাইভার্টিকুলোসিস ও ডাইভার্টিকুলাইটিস (Diverticulosis and Diverticulitis)
ডাইভার্টিকুলোসিস হলো অন্ত্রের প্রাচীরে ছোট ছোট থলির মতো অংশ তৈরি হওয়া। এই থলিগুলো ফুলে গেলে বা প্রদাহ হলে তাকে ডাইভার্টিকুলাইটিস বলে। এটি হজমতন্ত্রের একটি সাধারণ সমস্যা, বিশেষ করে বয়স্কদের মধ্যে।
- লক্ষণ:
- হঠাৎ করে প্রচুর পরিমাণে রক্তপাত হতে পারে।
- পেট ব্যথা।
- জ্বর।
- মলদ্বারে রক্তপাত সাধারণত ব্যথাহীন হয়।
৪. পেপটিক আলসার (Peptic Ulcer)
পেপটিক আলসার হলো পাকস্থলী বা ডিওডেনামের (ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রথম অংশ) আস্তরণে ক্ষত। এই ক্ষত থেকে রক্তপাত হলে তা মলের সাথে মিশে কালো বা আলকাতরার মতো দেখাতে পারে।
- লক্ষণ:
- কালো, আলকাতরার মতো মল।
- পেটে জ্বালাপোড়া বা ব্যথা।
- বমি বা বমির সাথে রক্ত (অনেক সময়)।
৫. অন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগ (Inflammatory Bowel Disease – IBD)
IBD হলো অন্ত্রের দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহজনিত রোগের একটি গ্রুপ। এর মধ্যে প্রধান দুটি হলো ক্রোনস ডিজিজ (Crohn’s Disease) এবং আলসারেটিভ কোলাইটিস (Ulcerative Colitis)।
- ক্রোনস ডিজিজ: হজমতন্ত্রের যেকোনো অংশে প্রদাহ হতে পারে।
- আলসারেটিভ কোলাইটিস: এটি মূলত বৃহদন্ত্র ও মলাশয়ে প্রদাহ সৃষ্টি করে।
- লক্ষণ:
- ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য বা উভয়ই।
- পেটে ব্যথা।
- ওজন কমে যাওয়া।
- ক্লান্তি।
- মলের সাথে রক্ত ও শ্লেষ্মা।
৬. পলিপস (Polyps)
কোলন বা মলাশয়ে ছোট মাংসপিণ্ডের মতো বৃদ্ধিকে পলিপস বলা হয়। কিছু পলিপস ক্যান্সার-পূর্ববর্তী হতে পারে। এগুলি থেকে রক্তপাত হতে পারে, যা মলের সাথে মিশে যায়।
- লক্ষণ:
- অনেক সময় উপসর্গবিহীন থাকে।
- মলের সাথে রক্ত।
- পেটে ব্যথা।
৭. মলাশয় ও কোলন ক্যান্সার (Colorectal Cancer)
মলাশয় এবং কোলনের ক্যান্সারের কারণেও রক্তপাত হতে পারে। এটি একটি গুরুতর রোগ এবং এর লক্ষণগুলি প্রায়শই অন্যান্য সাধারণ সমস্যার মতো মনে হতে পারে, তাই এটি সনাক্ত করা গুরুত্বপূর্ণ।
- লক্ষণ:
- পায়খানার অভ্যাসের পরিবর্তন (যেমন ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য)।
- মলের সাথে রক্ত বা কালো মল।
- পেট ফাঁপা বা ব্যথা।
- অহৈতুিক ওজন হ্রাস।
- ক্লান্তি।
কখন ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত?
পুরুষদের পায়খানার সাথে রক্ত দেখা দিলে অনেকেই দ্বিধা বোধ করেন, কিন্তু কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। এই পরিস্থিতিগুলো হলো:
- প্রচুর পরিমাণে রক্তপাত: যদি পায়খানার সাথে প্রচুর পরিমাণে রক্ত যায়, অথবা রক্তপাতের পরিমাণ বাড়তে থাকে, তবে দেরি না করে হাসপাতালে যান।
- কালো বা আলকাতরার মতো মল: কালো, ঘন এবং আলকাতরার মতো দেখতে মল হজমতন্ত্রের উপরের অংশে (যেমন পাকস্থলী বা ডিওডেনাম) রক্তপাতের ইঙ্গিত দেয়, যা গুরুতর হতে পারে।
- তীব্র পেটে ব্যথা: রক্তপাতের সাথে যদি তীব্র পেটে ব্যথা থাকে, তবে এটি অন্ত্রের প্রদাহ বা অন্য কোনো জরুরি অবস্থার লক্ষণ হতে পারে।
- মাথা ঘোরা বা দুর্বলতা: অতিরিক্ত রক্তপাতের কারণে রক্তচাপ কমে যেতে পারে, যার ফলে মাথা ঘোরা, দুর্বলতা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো অনুভূতি হতে পারে।
- হঠাৎ ওজন হ্রাস: কোনো কারণ ছাড়াই যদি আপনার ওজন কমতে থাকে এবং এর সাথে রক্তপাত হয়, তবে এটি ক্যান্সারের মতো গুরুতর রোগের লক্ষণ হতে পারে।
- দীর্ঘস্থায়ী রক্তপাত: যদি কয়েক দিনের বেশি সময় ধরে অল্প অল্প করে রক্তপাত হতে থাকে, তবে এর কারণ নির্ণয় করা প্রয়োজন।
- পায়খানার অভ্যাসে পরিবর্তন: যদি আপনার পায়খানার অভ্যাসে হঠাৎ করে বড় কোনো পরিবর্তন আসে (যেমন লাগাতার ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য) এবং এর সাথে রক্ত দেখা যায়।
স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্যের জন্য বিশ্বস্ত উৎস
স্বাস্থ্য বিষয়ক যেকোনো তথ্যের জন্য বিশ্বস্ত সূত্র অনুসরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে কিছু আন্তর্জাতিক এবং বাংলাদেশের নির্ভরযোগ্য স্বাস্থ্য বিষয়ক ওয়েবসাইটের কথা উল্লেখ করা হলো:
- World Health Organization (WHO): https://www.who.int/ – বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জনস্বাস্থ্য বিষয়ক নানা তথ্য ও নির্দেশিকা প্রকাশ করে।
- Mayo Clinic: https://www.mayoclinic.org/ – এটি একটি বিশ্বখ্যাত হাসপাতাল ও গবেষণা কেন্দ্র, তাদের ওয়েবসাইটে বিভিন্ন রোগের বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়।
- WebMD: https://www.webmd.com/ – এটি একটি জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ওয়েবসাইট যেখানে রোগ, লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে তথ্য থাকে।
- National Institutes of Health (NIH), USA: https://www.nih.gov/ – এটি আমেরিকার একটি শীর্ষস্থানীয় স্বাস্থ্য গবেষণা সংস্থা।
- Bangabandhu Sheikh Mujib Medical University (BSMMU): https://www.bsmmu.edu.bd/ – বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, যা স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণা ও তথ্যের একটি নির্ভরযোগ্য উৎস।
রোগ নির্ণয় পদ্ধতি
ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পর তিনি আপনার উপসর্গগুলো শুনে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয়ের চেষ্টা করবেন। সাধারণ কিছু পরীক্ষা হলো:
পরীক্ষার নাম | বর্ণনা |
---|---|
মল পরীক্ষা (Stool Test) | মলের নমুনা পরীক্ষা করে রক্ত, জীবাণু বা অন্যান্য অস্বাভাবিকতা সনাক্ত করা হয়। |
কোলোনোস্কোপি (Colonoscopy) | একটি নমনীয় ক্যামেরাযুক্ত টিউবের সাহায্যে পুরো বৃহদন্ত্র পরীক্ষা করা হয়। এটি পলিপস বা ক্যান্সারের মতো সমস্যা সনাক্ত করতে খুবই কার্যকর। |
সিগময়ডোস্কোপি (Sigmoidoscopy) | শুধুমাত্র বৃহদন্ত্রের শেষ অংশ (সিগময়েড কোলন) পরীক্ষা করা হয়। |
অ্যানোস্কোপি (Anoscopy) | মলদ্বার ও এর আশেপাশের অংশ পরীক্ষা করা হয়, যা পাইলস বা ফিশার নির্ণয়ে সহায়ক। |
আপার এন্ডোস্কোপি (Upper Endoscopy) | যদি কালো মল বা পাকস্থলীর উপসর্গ থাকে, তবে খাদ্যনালী, পাকস্থলী ও ডিওডেনাম পরীক্ষা করা হয়। |
সিটি স্ক্যান বা এমআরআই (CT Scan or MRI) | কিছু ক্ষেত্রে, অন্ত্রের ভেতরের অবস্থা আরও ভালোভাবে দেখতে এই পরীক্ষাগুলো করা হতে পারে। |
চিকিৎসা পদ্ধতি
পুরুষদের পায়খানার সাথে রক্ত পড়ার চিকিৎসা নির্ভর করে এর মূল কারণের উপর।
পাইলস ও ফিশারের চিকিৎসা
- ঘরোয়া পদ্ধতি: গরম পানিতে টাব বা সিটজ বাথ (Sitz Bath) নেওয়া, ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার বেশি খাওয়া (ফল, সবজি, শস্য), প্রচুর পানি পান করা, এবং মলত্যাগের সময় চাপ না দেওয়া।
- ওষুধ: ডাক্তার ব্যথানাশক মলম, সাপোজিটরি বা ওষুধ দিতে পারেন।
- সার্জারি: গুরুতর ক্ষেত্রে, যেমন রক্তপাত বন্ধ না হলে বা খুব বড় আকারের পাইলস হলে সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে।
আইবিডি (IBD) এর চিকিৎসা
- IBD এর চিকিৎসায় প্রদাহ কমানোর জন্য ওষুধ (যেমন স্টেরয়েড, ইমিউনোসাপ্রেসেন্টস) ব্যবহার করা হয়।
- বিশেষ ক্ষেত্রে সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে।
ক্যান্সার বা পলিপসের চিকিৎসা
- পলিপস থাকলে কোলোনোস্কোপির সময়ই সেগুলি অপসারণ করা হয়।
- ক্যান্সারের ক্ষেত্রে সার্জারি, কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশন থেরাপির প্রয়োজন হতে পারে।
Pro Tip: প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় শাকসবজি, ফলমূল এবং আঁশযুক্ত খাবার (যেমন লাল আটা, ওটস) যোগ করুন। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য রোধে সাহায্য করে এবং পায়খানার সাথে রক্ত পড়ার ঝুঁকি কমায়।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
পুরুষদের পায়খানার সাথে রক্ত পড়া প্রতিরোধ করার জন্য কিছু জীবনযাত্রার পরিবর্তন আনা যেতে পারে:
- স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: আপনার খাদ্যতালিকায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যোগ করুন। ফল, সবজি, শস্যদানা, ডাল ইত্যাদি খাদ্যতালিকায় রাখুন।
- পর্যাপ্ত পানি পান: প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। এটি হজমশক্তি বাড়ায় ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
- নিয়মিত ব্যায়াম: প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হালকা ব্যায়াম বা হাঁটাচলার অভ্যাস করুন। এটি হজম প্রক্রিয়া সচল রাখতে সাহায্য করে।
- মলত্যাগের অভ্যাস: যখনই বাথরুমে যাওয়ার প্রয়োজন হবে, সাথে সাথে যান। মল ধরে রাখলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। টয়লেটে বেশি সময় ধরে বসে থাকবেন না।
- ওজন নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত ওজন থাকলে তা কমানোর চেষ্টা করুন, কারণ এটি পাইলসের ঝুঁকি বাড়ায়।
- ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ: ধূমপান ও অতিরিক্ত মদ্যপান হজমতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর এবং ক্যান্সার সহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
একটি কেস স্টাডি (কাল্পনিক)
জনাব করিম, একজন ৪৫ বছর বয়সী ব্যাংক কর্মকর্তা, কয়েক মাস ধরে পায়খানার সাথে অল্প অল্প রক্ত যাওয়া এবং মাঝে মাঝে পায়খানা পরিষ্কার করতেও রক্ত লেগে থাকার সমস্যায় ভুগছিলেন। তিনি প্রথমে ভেবেছিলেন এটি পাইলসের সমস্যা, কারণ তার বাবারও পাইলস ছিল। তিনি কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি চেষ্টা করেন কিন্তু অবস্থার উন্নতি হয়নি। একদিন তিনি লক্ষ্য করেন যে তার মল একটু গাঢ় রঙের হচ্ছে এবং তিনি প্রায়ই একা বোধ করছেন। ভয়ে ও উদ্বেগে তিনি একজন গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্টের শরণাপন্ন হন।
ডাক্তার তার সমস্ত উপসর্গ শুনে একটি কোলনোস্কোপি করার পরামর্শ দেন। কোলনোস্কোপির সময় দেখা যায় যে তার বৃহদন্ত্রে একটি বড় পলিপস রয়েছে এবং সেটি থেকেই রক্তপাত হচ্ছিল। ডাক্তার তাৎক্ষণিকভাবে পলিপসটি অপসারণ করেন এবং বায়োপসিতে এটি ক্যান্সার-পূর্ববর্তী (precancerous) বলে জানা যায়।
জনাব করিমের ক্ষেত্রে, সময়মতো ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কারণে একটি বড় বিপদ থেকে তিনি রক্ষা পেয়েছেন। যদি তিনি আরও দেরি করতেন, তবে এটি ক্যান্সারে রূপান্তরিত হওয়ার আশঙ্কা থাকত। এই ঘটনাটি দেখায় যে, পায়খানার সাথে রক্ত পড়াকে কখনোই হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ)
প্রশ্ন ১: পায়খানার সাথে রক্তে কি সবসময় ক্যান্সার হয়?
উত্তর: না, পায়খানার সাথে রক্তপাতের সব ক্ষেত্রে ক্যান্সার হয় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি পাইলস, ফিশার বা আইবিডি’র মতো সাধারণ সমস্যার কারণে হয়ে থাকে। তবে, এটি ক্যান্সারের একটি লক্ষণও হতে পারে, তাই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
প্রশ্ন ২: টকটকে লাল রক্ত পড়া মানে কি?
উত্তর: টকটকে লাল রক্ত সাধারণত মলদ্বারের কাছাকাছি কোনো সমস্যা, যেমন – পাইলস বা অ্যানাল ফিশারের কারণে হয়। এই রক্ত মলের উপর লেগে থাকে বা ফোঁটা ফোঁটা করে পড়ে।
প্রশ্ন ৩: কালো রঙের মল কি বিপজ্জনক?
উত্তর: হ্যাঁ, কালো বা আলকাতরার মতো মল সাধারণত পাকস্থলী বা ক্ষুদ্রান্ত্রের উপরের অংশে রক্তপাতের ইঙ্গিত দেয়। এটি একটি গুরুতর লক্ষণ এবং দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তবে, কিছু খাবার (যেমন ব্ল্যাকবেরি, বিটের রস) বা আয়রন সাপ্লিমেন্ট খেলেও মল কালো হতে পারে, তাই নিশ্চিত হতে ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।
প্রশ্ন ৪: ঘরে বসে কি আমি পাইলসের রক্তপাত বন্ধ করতে পারি?
উত্তর: হালকা পাইলসের ক্ষেত্রে ঘরোয়া উপায় যেমন – ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়া, বেশি পানি পান করা, গরম পানিতে বসে থাকা (সিটজ বাথ), এবং মলত্যাগের সময় চাপ না দিলে রক্তপাত কমতে পারে। কিন্তু রক্তপাত বেশি হলে বা ব্যথা থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
প্রশ্ন ৫: পুরুষদের ডায়েটে কী কী পরিবর্তন আনলে রক্তপাত কমতে পারে?
উত্তর: মেনুতে শাকসবজি, ফলমূল, আস্ত শস্য (whole grains), এবং ডাল জাতীয় খাবার বেশি রাখুন। ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, যা পায়খানার সাথে রক্তপাতের একটি প্রধান কারণ।
প্রশ্ন ৬: মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে এই সমস্যা কি বেশি দেখা যায়?
উত্তর: পাইলস এবং ফিশার পুরুষ ও মহিলা উভয়েরই হতে পারে। তবে, পুরুষদের জীবনযাত্রার কিছু অভ্যাসের কারণে (যেমন – অতিরিক্ত চাপ দেওয়া, কম পানি পান করা) এই সমস্যাগুলো বেশি দেখা যেতে পারে।
উপসংহার
পুরুষদের পায়খানার সাথে রক্ত পড়া একটি সাধারণ উপসর্গ হলেও, এর পেছনের কারণটি গুরুতর হতে পারে। এটি পাইলস, ফিশার থেকে শুরু করে অন্ত্রের প্রদাহ, পলিপস বা এমনকি ক্যান্সারের মতো রোগের লক্ষণও হতে পারে। তাই, এই উপসর্গটিকে অবহেলা না করে দ্রুত একজন যোগ্যতাসম্পন্ন ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া অত্যন্ত জরুরি। সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা আপনার স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাস অনেকাংশেই এই ধরনের সমস্যা প্রতিরোধে সহায়ক। মনে রাখবেন, আপনার স্বাস্থ্য আপনারই হাতে।