পেটের ডান পাশে ব্যথা হলে দ্রুত ডাক্তার দেখান, কারণ এটি অ্যাপেন্ডিসাইটিস, গলব্লাডারের সমস্যা বা অন্যান্য গুরুতর রোগের লক্ষণ হতে পারে। সঠিক কারণ নির্ণয় এবং দ্রুত চিকিৎসার মাধ্যমে এই ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
Table of Contents
Key Takeaways
- ডান পেটে ব্যথা বিভিন্ন কারণে হতে পারে।
- সাধারণ কারণগুলোর মধ্যে বদহজম, গ্যাস, মাসিকের ব্যথা অন্যতম।
- মারাত্মক কারণের মধ্যে অ্যাপেন্ডিসাইটিস, পিত্তথলির পাথর, কিডনিতে পাথর অন্তর্ভুক্ত।
- ব্যথার তীব্রতা ও অন্যান্য লক্ষণের উপর কারণ নির্ভর করে।
- ব্যথা তীব্র হলে বা অন্য উপসর্গ থাকলে জরুরি ভিত্তিতে ডাক্তার দেখান।
- প্রতিকার নির্ভর করে ব্যথার মূল কারণের উপর।
পেটের ডান পাশে ব্যথা হওয়া একটি পরিচিত সমস্যা। কিন্তু এই ব্যথার কারণ কী, তা নিয়ে অনেকেই চিন্তিত থাকেন। এই ব্যথা কি কেবল বদহজমের জন্য, নাকি এর পেছনে অন্য কোনো গুরুতর কারণ লুকিয়ে আছে? এই গাইডটি আপনাকে পেটের ডান পাশে ব্যথার বিভিন্ন কারণ এবং এর সহজ প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবে। আমরা সহজ ভাষায় আলোচনা করব, যাতে আপনি সহজেই বুঝতে পারেন এবং সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারেন। চলুন জেনে নিই, কেন আপনার পেটের ডান পাশে ব্যথা হতে পারে এবং এর সমাধান কী।
পেটের ডান পাশে ব্যথার সাধারণ কারণ
পেটের ডান পাশে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ রয়েছে, যেমন – লিভার, গলব্লাডার (পিত্তথলি), ডান কিডনি, অগ্ন্যাশয় (অংশবিশেষ), এবং ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদান্ত্রের একাংশ। এছাড়াও, ডান পাশের ডিম্বাশয় এবং ফ্যালোপিয়ান টিউব (মহিলাদের ক্ষেত্রে) এবং অ্যাপেন্ডিক্সও এই অঞ্চলের কাছাকাছি থাকে। তাই এই অঙ্গগুলোর যেকোনো একটিতে সমস্যা হলে তা পেটের ডান পাশে ব্যথার সৃষ্টি করতে পারে।
বদহজম ও গ্যাস (Indigestion and Gas)
সাধারণভাবে পেটে গ্যাস জমা বা হজমের সমস্যা হলে পেটের ডান পাশে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের ব্যথা হতে পারে। অতিরিক্ত তেল-মসলাযুক্ত খাবার, ফাস্ট ফুড বা অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাসের কারণে এটি হয়ে থাকে।
- লক্ষণ: পেট ফাঁপা, ঢেকুর ওঠা, বমি বমি ভাব।
- প্রতিকার: হালকা গরম পানি পান, আদা চা, বা হজমে সহায়ক ঘরোয়া টোটকা যেমন – জিরা পানি, মৌরি খেলে উপকার পাওয়া যায়। স্বাস্থ্যকর খাবারEating a balanced diet হজমে সাহায্য করে।
কোষ্ঠকাঠিন্য (Constipation)
অনেক সময় কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে পেটে চাপ সৃষ্টি হয় এবং ডান পাশে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। মলত্যাগ স্বাভাবিক না হলে অন্ত্রে জমে থাকা বর্জ্য গ্যাস তৈরি করে এবং ব্যথার উদ্রেক করে।
- লক্ষণ: নিয়মিত মলত্যাগ না হওয়া, পেটে অস্বস্তি, পেট ভার হয়ে থাকা।
- প্রতিকার: প্রচুর পরিমাণে ফাইবারযুক্ত খাবার (যেমন – ফল, সবজি, শস্য) এবং পানি পান করা উচিত। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শে ল্যাক্সেটিভ ব্যবহার করা যেতে পারে।
মাসিকের ব্যথা (Menstrual Cramps)
মহিলাদের মাসিকের সময় জরায়ুতে সংকোচন ও প্রসারণের ফলে তলপেটে ব্যথা হয়, যা অনেক সময় ডান পাশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। এটি একটি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া।
- লক্ষণ: মাসিকের নির্দিষ্ট সময়ে ব্যথা, তলপেটে ব্যথা যা ডান পাশে অনুভূত হতে পারে, ক্র্যাম্পিং।
- প্রতিকার: গরম সেঁক দেওয়া, হালকা ব্যায়াম, এবং ডাক্তারের পরামর্শে ব্যথানাশক ঔষধ সেবন করা যেতে পারে।
অন্ত্রের প্রদাহ (Inflammatory Bowel Disease – IBD)
ক্রোনস ডিজিজ (Crohn’s Disease) বা আলসারেটিভ কোলাইটিস (Ulcerative Colitis) এর মতো IBD-তে আক্রান্ত হলে পেটের ডান পাশে ব্যথা, ডায়রিয়া, ওজন হ্রাস এবং ক্লান্তি দেখা দিতে পারে। ক্রোনস ডিজিজ প্রায়শই ক্ষুদ্রান্ত্রের শেষ অংশ (ileum) এবং বৃহদান্ত্রের (colon) সংযোগস্থলে ঘটে, যা পেটের ডান দিকে অবস্থিত।
প্রতিকার: IBD একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ যার জন্য ডাক্তারের নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও নির্দিষ্ট চিকিৎসা (যেমন – ঔষধ, খাদ্যতালিকা পরিবর্তন) প্রয়োজন।
পেটের ডান পাশে ব্যথার গুরুতর কারণ
কিছু ক্ষেত্রে পেটের ডান পাশের ব্যথা মারাত্মক রোগের ইঙ্গিত দেয়, যা দ্রুত চিকিৎসার দাবি রাখে।
অ্যাপেন্ডিসাইটিস (Appendicitis)
অ্যাপেন্ডিক্স হলো আমাদের বৃহদান্ত্রের সাথে সংযুক্ত একটি ছোট থলির মতো অঙ্গ। যখন এটি প্রদাহ বা সংক্রমিত হয়, তখন অ্যাপেন্ডিসাইটিস হয়। এটি পেটের ডান পাশের নিচের দিকে তীব্র ব্যথার একটি প্রধান কারণ।
- লক্ষণ:
- পেটের নাভির চারপাশে ব্যথা শুরু হয়ে ধীরে ধীরে ডান পাশের নিচের দিকে সরে যাওয়া।
- ব্যথার তীব্রতা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাওয়া।
- ক্ষুধামন্দা, বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
- জ্বর।
- মলত্যাগ বা গ্যাস বের হতে সমস্যা হওয়া।
- গুরুত্ব: অ্যাপেন্ডিসাইটিস একটি জরুরি অবস্থা। সময়মতো চিকিৎসা না করালে অ্যাপেন্ডিক্স ফেটে গিয়ে পেরিটোনাইটিস (peritonitis) নামক জীবনঘাতী সংক্রমণ হতে পারে।
- প্রতিকার: সাধারণত অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অ্যাপেন্ডিক্স অপসারণ করা হয় (appendectomy)।
পিত্তথলির পাথর (Gallstones)
পিত্তথলি বা গলব্লাডার লিভারের নিচে অবস্থিত একটি অঙ্গ, যা পিত্তরস সঞ্চয় করে। এতে যদি পাথর তৈরি হয়, তবে তা পিত্তথলির নালীতে আটকে গিয়ে তীব্র ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে। এই ব্যথা সাধারণত পেটের উপরের ডান পাশে হয় এবং পেছন দিকে বা ডান কাঁধেও ছড়িয়ে যেতে পারে।
- লক্ষণ:
- খাবার পর, বিশেষ করে চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়ার পর ব্যথা বৃদ্ধি পাওয়া।
- পেটের উপরের ডান দিকে তীক্ষ্ণ বা মোচড়ানো ব্যথা।
- বমি বমি ভাব বা বমি।
- জন্ডিস (চোখ ও ত্বক হলুদ হয়ে যাওয়া) এবং গাঢ় প্রস্রাব হতে পারে যদি পিত্তনালীতে পাথর আটকে যায়।
- প্রতিকার: ছোট পাথর অনেক সময় ঔষধ বা জীবনযাত্রার পরিবর্তনে ভালো হয়ে যায়। কিন্তু বড় বা বারবার হলে অস্ত্রোপচারের (cholecystectomy) প্রয়োজন হতে পারে।
কিডনিতে পাথর (Kidney Stones)
ডান কিডনিতে পাথর হলে তা তীব্র ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে। এই ব্যথা সাধারণত পিঠের দিকে শুরু হয়ে পেটের ডান পাশ দিয়ে কুঁচকির দিকে নেমে আসে।
- লক্ষণ:
- পিঠের ডান দিকে বা পেটের ডান পাশে তীব্র, মোচড়ানো ব্যথা (colic pain)।
- ব্যথার সাথে বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
- প্রস্রাবে রক্ত যাওয়া বা প্রস্রাব করার সময় জ্বালাপোড়া।
- ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া।
- প্রতিকার: ছোট পাথর পানি পান করে শরীর থেকে বের করে দেওয়া যেতে পারে। বড় পাথরের জন্য ঔষধ, শক ওয়েভ লিথোট্রিপসি (ESWL) বা অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে। National Kidney Foundation এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিয়ে থাকে।
লিভারের সমস্যা (Liver Problems)
লিভার আমাদের পেটের উপরের ডান পাশে অবস্থিত। হেপাটাইটিস (Hepatitis), লিভারে চর্বি জমা (Fatty Liver) বা লিভার সিরোসিস (Liver Cirrhosis) এর মতো রোগ হলে এই অংশে ব্যথা হতে পারে।
- লক্ষণ:
- পেটের উপরের ডান পাশে হালকা থেকে মাঝারি ব্যথা।
- ত্বক বা চোখ হলুদ হয়ে যাওয়া (Jaundice)।
- ক্লান্তি, দুর্বলতা।
- পেট ফুলে যাওয়া (Ascites)।
- ক্ষুধামন্দা।
- প্রতিকার: লিভারের রোগের চিকিৎসা নির্ভর করে রোগের কারণ ও তীব্রতার উপর। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক ঔষধ ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন জরুরি।
প্যানক্রিয়াটাইটিস (Pancreatitis)
অগ্ন্যাশয় বা প্যানক্রিয়াস পেটের উপরের অংশে অগভীরভাবে থাকে, যা পেটের মাঝখানে এবং কিছুটা বাম দিকে বেশি অনুভূত হলেও ডান পাশেও ব্যথা ছড়াতে পারে। অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহকে প্যানক্রিয়াটাইটিস বলে।
- লক্ষণ:
- পেটের উপরের অংশে তীব্র ব্যথা, যা পিঠের দিকেও যেতে পারে।
- বমি বমি ভাব ও বমি।
- জ্বর।
- দ্রুত নাড়ির গতি।
- প্রতিকার: প্যানক্রিয়াটাইটিসের চিকিৎসা হাসপাতালভিত্তিক হয়, যেখানে রোগীকে নির্দিষ্ট পথ্যের মধ্যে রাখা হয় এবং শিরায় স্যালাইন দেওয়া হয়।
মহিলাদের নির্দিষ্ট কিছু সমস্যা
মহিলাদের ক্ষেত্রে পেটের ডান পাশে ব্যথার কিছু কারণ বিশেষায়িত:
- ডিম্বাশয়ের সিস্ট (Ovarian Cyst): ডান ডিম্বাশয়ে সিস্ট থাকলে বা তা ফেটে গেলে বা পেঁচিয়ে গেলে (torsion) ডান পাশে তীব্র ব্যথা হতে পারে।
- এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি (Ectopic Pregnancy): গর্ভধারণের পর ভ্রূণ জরায়ুর বাইরে, বিশেষ করে ফ্যালোপিয়ান টিউবে বড় হলে তা ফেটে গিয়ে জীবনঘাতী রক্তপাত ও তীব্র ব্যথা ঘটাতে পারে। এটি ডান বা বাম যেকোনো দিকে হতে পারে।
- প্রজননতন্ত্রের সংক্রমণ (Pelvic Inflammatory Disease – PID): জরায়ু, ডিম্বাশয় বা ফ্যালোপিয়ান টিউবের সংক্রমণ হলে তলপেটে ব্যথা হয়, যা ডান পাশেও অনুভূত হতে পারে।
প্রতিকার: এই সমস্যাগুলোর জন্য দ্রুত গাইনিকোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া অপরিহার্য।
পেটের ডান পাশে ব্যথার জন্য কখন ডাক্তার দেখাবেন?
অনেক ক্ষেত্রে পেটের ডান পাশের ব্যথা তেমন গুরুতর না হলেও, কিছু নির্দিষ্ট লক্ষণ দেখলে অবশ্যই দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
জরুরি ভিত্তিতে ডাক্তার দেখানোর লক্ষণ:
- তীব্র এবং হঠাৎ শুরু হওয়া ব্যথা, যা সহ্য করা কঠিন।
- ব্যথার সাথে জ্বর (১০১° ফারেনহাইটের বেশি)।
- বমি বমি ভাব এবং একটানা বমি হওয়া।
- মল বা প্রস্রাবের সাথে রক্ত যাওয়া।
- পেট শক্ত বা অনমনীয় হয়ে যাওয়া।
- শ্বাসকষ্ট হওয়া।
- ত্বক বা চোখ হলুদ হয়ে যাওয়া (জন্ডিস)।
- মহিলাদের ক্ষেত্রে অপ্রত্যাশিত যোনিপথে রক্তপাত বা গর্ভাবস্থার লক্ষণ থাকলে।
পেটের ডান পাশে ব্যথার কারণ নির্ণয়
পেটের ডান পাশে ব্যথার সঠিক কারণ জানতে ডাক্তার কিছু শারীরিক পরীক্ষা এবং প্রয়োজনীয় টেস্টের সাহায্য নেন।
শারীরিক পরীক্ষা:
ডাক্তার আপনার ব্যথার স্থান, ধরণ, তীব্রতা এবং অন্যান্য উপসর্গ সম্পর্কে জানবেন। পেটে চাপ দিয়ে বা আলতো করে ধাক্কা দিয়ে কোনো ফোলা বা নরম স্থান আছে কিনা তা পরীক্ষা করবেন।
গবেষণাগার পরীক্ষা (Laboratory Tests):
- রক্ত পরীক্ষা: রক্তে শ্বেত কণিকার পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে তা সংক্রমণ বা প্রদাহের ইঙ্গিত দেয়। লিভার ফাংশন টেস্ট (LFT) বা প্যানক্রিয়াটিক এনজাইম (amylase, lipase) পরীক্ষা করা হতে পারে।
- প্রস্রাব পরীক্ষা: প্রস্রাবে রক্ত বা সংক্রমণ আছে কিনা তা দেখার জন্য।
- মল পরীক্ষা: হজম বা সংক্রমণের কারণ অনুসন্ধানে।
ইমেজিং পরীক্ষা (Imaging Tests):
- আল্ট্রাসনোগ্রাফি (Ultrasound): এটি পেটের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, যেমন – লিভার, পিত্তথলি, কিডনি, ডিম্বাশয় ইত্যাদি দেখতে খুব কার্যকরী।
- সিটি স্ক্যান (CT Scan): আরও বিস্তারিত ছবি পেতে সিটি স্ক্যান করা হয়, যা অ্যাপেন্ডিসাইটিস বা কিডনিতে পাথর নির্ণয়ে সাহায্য করে।
- এমআরআই (MRI): কিছু ক্ষেত্রে লিভার বা পিত্তনালীর রোগ নির্ণয়ে এমআরআই ব্যবহার করা হয়।
পেটের ডান পাশে ব্যথার ঘরোয়া প্রতিকার ও প্রতিরোধ
কিছু সাধারণ কারণে হওয়া পেটের ডান পাশের ব্যথায় ঘরোয়া প্রতিকার ও জীবনযাত্রার পরিবর্তনে আরাম পাওয়া যায়।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা:
- স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: প্রচুর পরিমাণে ফল, সবজি, শস্য এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খান। ভাজা, অতিরিক্ত মশলাযুক্ত এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন।
- পর্যাপ্ত পানি পান: প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। এটি হজম এবং শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
- নিয়মিত ব্যায়াম: শারীরিক কার্যকলাপ হজম শক্তি বাড়ায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সহায়ক।
- নিয়মিত মলত্যাগ: বাথরুম চেপে রাখবেন না। পর্যাপ্ত ফাইবার ও পানি গ্রহণ করুন।
- মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ: মানসিক চাপ হজম প্রক্রিয়াসহ শরীরের অনেক কাজে প্রভাব ফেলে। যোগা, ধ্যান বা শখের মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
ঘরোয়া প্রতিকার (সাধারণ ব্যথার জন্য):
- গরম সেঁক: ব্যথার স্থানে হট ওয়াটার ব্যাগ বা গরম কাপড় দিয়ে সেঁক দিলে পেশী শিথিল হয় ও ব্যথা কমে।
- আদা বা পুদিনা চা: হজমের সমস্যা বা গ্যাসজনিত ব্যথায় আদা বা পুদিনা চা পান করলে আরাম পাওয়া যায়।
- জিরা পানি: এক গ্লাস পানিতে একটু জিরা মিশিয়ে ফুটিয়ে পান করলে হজম ভালো হয়।
- হালকা খাবার: নরম, সহজে হজম হয় এমন খাবার খান, যেমন – ভাতের জাউ, সবজির স্যুপ।
Pro Tip: প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক গ্লাস হালকা গরম পানি পান করুন। এটি হজম প্রক্রিয়াকে সচল রাখতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ)
প্রশ্ন ১: পেটের ডান পাশে ব্যথা কি সবসময় গুরুতর?
উত্তর: না, পেটের ডান পাশে ব্যথা সবসময় গুরুতর হয় না। এটি বদহজম, গ্যাস বা কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সাধারণ কারণেও হতে পারে। তবে, তীব্র ব্যথা বা অন্যান্য উপসর্গ থাকলে তা গুরুতর রোগের লক্ষণ হতে পারে, তাই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
প্রশ্ন ২: অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ব্যথা কি এক জায়গায় স্থির থাকে?
উত্তর: অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ব্যথা সাধারণত নাভির চারপাশে শুরু হয়ে ধীরে ধীরে পেটের ডান পাশের নিচের দিকে সরে যায় এবং সময়ের সাথে সাথে তীব্রতা বৃদ্ধি পায়।
প্রশ্ন ৩: পিত্তথলির পাথরের ব্যথা কি রাতে বাড়ে?
উত্তর: হ্যাঁ, পিত্তথলির পাথরের ব্যথা প্রায়শই রাতে, বিশেষ করে চর্বিযুক্ত বা ভারী খাবার খাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর শুরু বা তীব্র হতে পারে।
প্রশ্ন ৪: মহিলাদের মাসিকের ব্যথার সাথে অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ব্যথার পার্থক্য কী?
উত্তর: মাসিকের ব্যথা সাধারণত মাসিকের নির্দিষ্ট সময়ে হয় এবং এটি তলপেটে অনুভূত হয়, যা কখনও কখনও ডান দিকে যেতে পারে। কিন্তু অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ব্যথা সাধারণত নাভির আশেপাশে শুরু হয়ে ডান নিচের দিকে নির্দিষ্ট হয় এবং জ্বর, বমি বমি ভাবের মতো উপসর্গ থাকতে পারে।
প্রশ্ন ৫: ঘরোয়া টোটকায় কি পেটের ডান পাশের সব ব্যথা ভালো হয়?
উত্তর: সাধারণ গ্যাস, বদহজম বা মাসিকের হালকা ব্যথার জন্য ঘরোয়া টোটকা কার্যকর হতে পারে। কিন্তু অ্যাপেন্ডিসাইটিস, পিত্তথলির পাথর বা কিডনিতে পাথর – এর মতো গুরুতর রোগের জন্য ঘরোয়া টোটকা যথেষ্ট নয়, দ্রুত ডাক্তারি চিকিৎসা প্রয়োজন।
প্রশ্ন ৬: পেটের ডান পাশে ব্যথার জন্য কোন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে?
উত্তর: সাধারণ ব্যথার জন্য একজন ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান বা জেনারেল ফিজিশিয়ানের কাছে যেতে পারেন। যদি সমস্যাটি গুরুতর মনে হয় বা নির্দিষ্ট কোনো অঙ্গের সাথে সম্পর্কিত হয়, তবে গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট (পাকস্থলী ও অন্ত্র বিশেষজ্ঞ), হেপাটোলজিস্ট (লিভার বিশেষজ্ঞ), ইউরোলজিস্ট (কিডনি বিশেষজ্ঞ) অথবা গাইনিকোলজিস্টের (মহিলা রোগ বিশেষজ্ঞ) পরামর্শ নিতে হবে।
উপসংহার
পেটের ডান পাশে ব্যথা একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এর পেছনের কারণগুলো বিভিন্ন রকম হতে পারে, যার মধ্যে কিছু সাধারণ এবং কিছু গুরুতর। ব্যথার তীব্রতা, সময়কাল এবং এর সাথে থাকা অন্যান্য উপসর্গগুলি সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করা খুব জরুরি। যদি ব্যথা তীব্র হয়, জ্বর থাকে, বমি হয় বা অন্য কোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা যায়, তবে কোনোভাবেই অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় এবং উপযুক্ত চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে আপনি এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন এবং একটি সুস্থ জীবনযাপন করতে পারেন। মনে রাখবেন, আপনার স্বাস্থ্য আপনার হাতেই।