যোনিতে চুলকানি হলে ঘরোয়া উপায়ে দ্রুত মুক্তি সম্ভব। এই সাধারণ সমস্যা থেকে আরাম পেতে আপনি কিছু সহজ এবং প্রাকৃতিক পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন।
Table of Contents
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
- চুলকানির কারণ নির্ণয় করুন।
- পরিষ্কার পরিছন্নতা বজায় রাখুন।
- প্রাকৃতিক ঘরোয়া উপায় ব্যবহার করুন।
- প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
- স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করুন।
ভূমিকা
নারীদের একটি সাধারণ সমস্যা হলো যোনিতে চুলকানি। এটি অস্বস্তিকর এবং অনেক সময় বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। বিভিন্ন কারণে এই চুলকানি হতে পারে, যেমন – ইনফেকশন, অ্যালার্জি, সঠিক পরিচ্ছন্নতার অভাব, বা পরিবেশগত পরিবর্তন। এই সমস্যাটি নিয়ে অনেকেই লজ্জিত বোধ করেন এবং ডাক্তারের কাছে যেতে দ্বিধা করেন। কিন্তু কিছু পরীক্ষিত ঘরোয়া উপায় আছে যা এই চুলকানি কমাতে বা পুরোপুরি দূর করতে সাহায্য করতে পারে।
এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করব যোনিতে চুলকানি থেকে দ্রুত মুক্তি পাওয়ার কিছু সহজ ও কার্যকরী ঘরোয়া উপায় নিয়ে। আপনি নিজেই কীভাবে এই অস্বস্তি থেকে আরাম পেতে পারেন, তা ধাপে ধাপে জেনে নিন।
যোনিতে চুলকানির কারণ
যোনিতে চুলকানির পেছনে নানা কারণ থাকতে পারে। সঠিক কারণ জানা থাকলে প্রতিকার করাও সহজ হয়। কিছু সাধারণ কারণ নিচে আলোচনা করা হলো:
১. ইনফেকশন (Infection)
প্রায় সব নারীর জীবনেই কোনো না কোনো সময় ভ্যাজাইনাল ইনফেকশন বা যোনিপথে সংক্রমণ হতে পারে। এর মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত দুটি হলো:
- ইস্ট ইনফেকশন (Yeast Infection/Candidiasis): ক্যানডিডা অ্যালবিকানস (Candida albicans) নামক এক ধরণের ছত্রাকের অতিরিক্ত বৃদ্ধির কারণে এটি হয়। এর ফলে যোনিতে চুলকানি, জ্বালাপোড়া এবং ঘন সাদা স্রাব দেখা দিতে পারে।
- ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজিনোসিস (Bacterial Vaginosis – BV): যোনিতে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য নষ্ট হলে এবং ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বেড়ে গেলে এটি হয়। এর প্রধান লক্ষণ হলো মাছের মতো আঁশটে গন্ধযুক্ত স্রাব এবং চুলকানি বা জ্বালাপোড়া।
- ট্রাইকোমোনিয়াসিস (Trichomoniasis): এটি একটি যৌনবাহিত রোগ (STI) যা ট্রাইকোমোনাস ভ্যাজিনালিস (Trichomonas vaginalis) নামক পরজীবীর দ্বারা ঘটে। এর ফলে চুলকানি, জ্বালাপোড়া এবং সবুজ-হলুদ স্রাব হতে পারে।
২. অ্যালার্জি এবং ইরিটেশন (Allergies and Irritation)
কিছু জিনিস যোনির সংবেদনশীল ত্বকে অ্যালার্জি বা জ্বালা সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে চুলকানি হয়। এর মধ্যে রয়েছে:
- সাবান ও ডিটারজেন্ট: সুগন্ধিযুক্ত বা কড়া রাসায়নিকযুক্ত সাবান, ডিটারজেন্ট, বা ওয়াশিং পাউডার যোনিপথে ব্যবহারের ফলে চুলকানি হতে পারে।
- লুব্রিকেন্টস ও কনডম: কিছু লুব্রিকেন্টে বা লেটেক্স কনডমে ব্যবহৃত কেমিক্যাল থেকেও অ্যালার্জি হতে পারে।
- স্যানিটারি ন্যাপকিন বা ট্যাম্পন: কিছু ব্র্যান্ডের প্যাড বা ট্যাম্পনে ব্যবহৃত উপাদান থেকেও অনেকের অ্যালার্জি বা চুলকানি দেখা দেয়।
- টাইট বা সিনথেটিক আন্ডারওয়্যার: নিয়মিত আঁটসাঁট বা সিনথেটিক কাপড়ের আন্ডারওয়্যার পরলে ভেন্টিলেশন ঠিকমতো হয় না, যা চুলকানির কারণ হতে পারে।
৩. হরমোনের পরিবর্তন (Hormonal Changes)
শরীরের হরমোনের মাত্রার পরিবর্তনেও যোনির শুষ্কতা এবং চুলকানি দেখা দিতে পারে। যেমন:
- মেনোপজ (Menopause): মেনোপজের সময় ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা কমে যায়, যার ফলে যোনিপথ শুষ্ক হয়ে যায় (Vulvar atrophy) এবং চুলকানি ও অস্বস্তি দেখা দেয়।
- গর্ভাবস্থা (Pregnancy): গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তনের কারণেও ইস্ট ইনফেকশন বা চুলকানি হতে পারে।
৪. ত্বকের রোগ (Skin Conditions)
কিছু চর্মরোগ যোনিপথেও প্রভাব ফেলতে পারে এবং চুলকানির কারণ হতে পারে। যেমন:
- একজিমা (Eczema)
- সোরিয়াসিস (Psoriasis)
- লাইকেন স্ক্লেরোসাস (Lichen Sclerosus): এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী ত্বকের অবস্থা যা যোনি এবং পায়ুপথের চারপাশের ত্বককে প্রভাবিত করে।
৫. ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি (Personal Hygiene)
অতিরিক্ত বা অপর্যাপ্ত স্বাস্থ্যবিধি দুটোই সমস্যা তৈরি করতে পারে। অতিরিক্ত ধোয়া বা কড়া রাসায়নিক ব্যবহার করলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়, আবার অপরিচ্ছন্নতা ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়ায়।
যোনিতে চুলকানি হলে ঘরোয়া উপায়: দ্রুত মুক্তি
যদি চুলকানি খুব বেশি তীব্র না হয় এবং আপনি কোনও গুরুতর ইনফেকশনের লক্ষণ দেখতে না পান, তবে কিছু ঘরোয়া উপায় চেষ্টা করে দেখতে পারেন। এগুলো সাধারণত নিরাপদ এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মুক্ত।
১. নারকেল তেল (Coconut Oil for Itching)
নারকেল তেলে অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ রয়েছে, যা ইস্ট ইনফেকশন এবং অন্যান্য প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এটি প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবেও কাজ করে।
-
ব্যবহারবিধি:
- বিশুদ্ধ, ভার্জিন কোকোনাট অয়েল (virgin coconut oil) কিনুন।
- চুলকানি আক্রান্ত স্থানে অল্প পরিমাণে লাগান। দিনে ২-৩ বার ব্যবহার করতে পারেন।
- অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের জন্য, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার না করাই ভালো।
গুরুত্বপূর্ণ: যদি নারকেল তেলে আপনার ত্বক সংবেদনশীল হয় বা অ্যালার্জি হয়, তবে এটি ব্যবহার করা বন্ধ করুন।
২. বেকিং সোডা বাড বা ওয়াশ (Baking Soda Bath)
বেকিং সোডা ত্বকের pH মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং চুলকানি কমাতে পারে। এটি একটি অম্লীয় বা ক্ষারীয় ভারসাম্যহীনতা প্রতিরোধে উপকারী হতে পারে।
-
ব্যবহারবিধি:
- একটি হালকা গরম জলের টবে বা বেসিনে ১/৪ কাপ বেকিং সোডা মেশান।
- ১০-১৫ মিনিট এই পানিতে বসুন।
- এরপর পরিষ্কার জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন এবং হালকা তোয়ালে দিয়ে মুছে নিন।
- এটি সপ্তাহে ২-৩ বার করতে পারেন।
প্রো টিপ: অতিরিক্ত বেকিং সোডা ব্যবহার করবেন না, এটি ত্বককে আরও শুষ্ক করে দিতে পারে।
৩. দই (Yogurt for Vaginal Itching)
সাধারণ দই (plain yogurt) প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ, যেখানে ল্যাকটোব্যাসিলাস (Lactobacillus) নামক উপকারী ব্যাকটেরিয়া থাকে। এটি ইস্ট ইনফেকশনের জন্য দায়ী ক্যান্ডিডা ছত্রাককে দমন করতে সাহায্য করে।
-
ব্যবহারবিধি:
- প্রাকৃতিক, চিনি ছাড়া (unsweetened) দই নিন।
- একটি পরিষ্কার আঙুল বা কটন সোয়াব ব্যবহার করে যোনির বাইরের অংশে লাগান।
- ১৫-২০ মিনিট রেখে দিন, তারপর হালকা গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- প্রতিদিন একবার ব্যবহার করতে পারেন।
- এছাড়াও, প্রতিদিন এক বাটি করে মিষ্টি ছাড়া দই খেলে তা শরীরের ভেতর থেকে প্রোবায়োটিকের জোগান দেবে।
৪. অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার (Apple Cider Vinegar Wash)
অ্যাপেল সাইডার ভিনেগারে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি যোনির pH ভারসাম্য পুনরুদ্ধারে সাহায্য করতে পারে।
-
ব্যবহারবিধি:
- এক কাপ হালকা গরম জলে ২ টেবিল চামচ অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার মেশান।
- এই মিশ্রণ দিয়ে যোনির বাইরের অংশ আলতো করে ধুয়ে নিন।
- ধোয়ার পর পরিষ্কার জল দিয়ে আবার ধুয়ে নিন।
- এটি সপ্তাহে একবার বা দুবার করুন।
সতর্কতা: এটি সরাসরি যোনিতে লাগাবেন না বা অতিরিক্ত ঘন করে ব্যবহার করবেন না, কারণ এটি জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করতে পারে।
৫. নিম পাতা (Neem Leaves)
নিম একটি শক্তিশালী প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান। এটি চুলকানি এবং সংক্রমণ কমাতে খুব কার্যকর।
-
ব্যবহারবিধি:
- কিছু নিম পাতা ভালো করে ধুয়ে নিন।
- এগুলো পিষে পেস্ট তৈরি করুন বা নিম পাতা সিদ্ধ করে সেই জল ঠান্ডা করে নিন।
- এই পেস্ট বা নিম জল আক্রান্ত স্থানে লাগান।
- ২০-৩০ মিনিট পর হালকা গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- এটি প্রতিদিন একবার ব্যবহার করা যেতে পারে।
৬. রসুন (Garlic for Yeast Infection)
রসুনে অ্যালিসিন (allicin) নামক যৌগ থাকে, যা শক্তিশালী অ্যান্টিফাঙ্গাল। যদিও এটি সরাসরি যোনিপথে ব্যবহার করা কিছুটা অস্বস্তিকর এবং জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করতে পারে, তবে এর কিছু পরোক্ষ উপকারিতা আছে।
-
ব্যবহারবিধি:
- প্রতিদিন ১-২ কোয়া কাঁচা রসুন খান।
- অভ্যন্তরীণভাবে ব্যবহার করতে চাইলে, রসুনের একটি কোয়া (খোসা ছাড়ানো) সামান্য অলিভ অয়েলে ডুবিয়ে নিন। এটি সারারাত ফ্রিজে রাখুন। সকালে এটি ভ্যাজাইনারে ব্যবহারের চেষ্টা করুন (তবে এটি জ্বালাপোড়া করতে পারে এবং সবার জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে)। ব্যবহারের পর অবশ্যই ধুয়ে ফেলুন।
গুরুত্বপূর্ণ: কাঁচা রসুন সরাসরি যোনিতে প্রবেশ করানো ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। যদি জ্বালাপোড়া বেশি হয়, তবে তা ব্যবহার করা বন্ধ করুন।
৭. টি ট্রি অয়েল (Tea Tree Oil)
টি ট্রি অয়েলে শক্তিশালী অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং অ্যান্টিসেপটিক গুণ রয়েছে। তবে এটি সরাসরি ত্বকে ব্যবহার করা উচিত নয়, কারণ এটি খুব শক্তিশালী হতে পারে।
-
ব্যবহারবিধি:
- ২-৩ ফোঁটা টি ট্রি অয়েল এক টেবিল চামচ বাহক তেলের (carrier oil) সাথে মেশান, যেমন – নারকেল তেল বা অলিভ অয়েল।
- এই মিশ্রণটি আক্রান্ত স্থানে লাগান।
- এটি দিনে একবার ব্যবহার করে দেখতে পারেন।
সতর্কতা: সংবেদনশীল ত্বকে এটি ব্যবহার করার আগে প্যাচ টেস্ট করে নিন। যদি জ্বালাপোড়া হয়, তবে ব্যবহার বন্ধ করুন।
জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং প্রতিরোধ
ঘরোয়া উপায়ের পাশাপাশি কিছু জীবনযাত্রার পরিবর্তন চুলকানি কমাতে এবং প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে:
১. সঠিক অন্তর্বাস নির্বাচন (Choosing the Right Underwear)
- সুতির অন্তর্বাস: সুতির অন্তর্বাস বাতাস চলাচল করতে দেয় এবং আর্দ্রতা শুষে নেয়, যা ইনফেকশন প্রতিরোধে সাহায্য করে। সিনথেটিক বা আঁটসাঁট অন্তর্বাস এড়িয়ে চলুন।
- পরিষ্কার পরিছন্নতা: প্রতিদিন অন্তর্বাস পরিবর্তন করুন, বিশেষ করে যদি এটি ভিজে যায় বা ঘাম হয়।
২. পরিষ্কার পরিছন্নতার নিয়ম (Hygiene Practices)
- নরমাল ওয়াটার: যোনিপথ ধোয়ার জন্য শুধু হালকা গরম জল ব্যবহার করুন। সুগন্ধিযুক্ত সাবান, ডুশ (douche), বা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সোপ ব্যবহার এড়িয়ে চলুন, কারণ এগুলো যোনির প্রাকৃতিক pH ভারসাম্য নষ্ট করে।
- পর্যাপ্ত ধোয়া: প্রতিদিন একবার যোনিপথের বাইরের অংশ (vulva) আলতোভাবে পরিষ্কার করুন।
- মোছার সঠিক নিয়ম: টয়লেট ব্যবহারের পর সামনে থেকে পিছনের দিকে মুছুন। এটি মলদ্বার থেকে ব্যাকটেরিয়া যোনিতে প্রবেশ করা প্রতিরোধ করবে।
৩. সুতির পোশাক (Cotton Clothing)
মোটা জিন্স বা আঁটসাঁট প্যান্টের বদলে ঢিলেঢালা পোশাক পরার চেষ্টা করুন। এতে বাতাস চলাচল ভালো হয় এবং ঘাম কম হয়।
৪. খাদ্যাভ্যাস (Dietary Habits)
- প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার: দই, ঘোল, এবং ফার্মেন্টেড খাবার (fermented foods) বেশি খান। এগুলো শরীরের ভেতর থেকে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে।
- চিনি গ্রহণ কমান: অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার খেলে ইস্ট ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়ে।
- পানি পান: প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করুন। এটি শরীরকে ডিটক্সিফাই করতে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
৫. টেনশন বা স্ট্রেস কমানো (Stress Management)
অতিরিক্ত মানসিক চাপ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দিতে পারে, যা ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়ায়। যোগা, মেডিটেশন বা হালকা ব্যায়াম করে স্ট্রেস কমানোর চেষ্টা করুন।
কখন ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন
যদিও ঘরোয়া উপায়গুলো অনেক সময় কার্যকর হয়, কিছু ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। যদি আপনি নিচের কোনো লক্ষণ দেখতে পান, তবে দ্রুত একজন গাইনোকোলজিস্টের (Gynecologist) শরণাপন্ন হন:
- চুলকানি খুব তীব্র হলে এবং ঘরোয়া উপায়ে না কমলে।
- যোনিপথে অস্বাভাবিক স্রাব (রঙ, গন্ধ বা পরিমাণে পরিবর্তন)।
- স্রাবের সাথে জ্বালাপোড়া বা ব্যথা।
- যোনিপথে লালচে ভাব, ফোলা বা ঘা হওয়া।
- শারীরিক মিলনের সময় ব্যথা বা রক্তপাত।
- জ্বর বা তলপেটে ব্যথা।
- যদি আপনি গর্ভবতী হন এবং চুলকানি দেখা দেয়।
- যদি আপনার মনে হয় এটি যৌনবাহিত রোগ (STI) এর লক্ষণ।
সাধারণ কিছু ভুল ধারণা ও সঠিক তথ্য
যোনিতে চুলকানি নিয়ে কিছু ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। যেমন:
ভুল ধারণা ১: যোনিপথ বেশি করে ধুলে সব জীবাণু মরে যাবে।
সঠিক তথ্য: যোনিপথের নিজস্ব একটি ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশ (normal flora) থাকে। অতিরিক্ত ধোয়া বা রাসায়নিক ব্যবহার করলে এই ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়ে। শুধুমাত্র বাইরের অংশ হালকা জল দিয়ে পরিষ্কার করাই যথেষ্ট।
ভুল ধারণা ২: ট্যাম্পন (Tampon) ব্যবহার করলে চুলকানি হয়।
সঠিক তথ্য: ট্যাম্পন সরাসরি চুলকানির কারণ না হলেও, কিছু ট্যাম্পনের উপাদান থেকে অ্যালার্জি হতে পারে। এছাড়াও, ট্যাম্পন বেশি সময় ধরে ব্যবহার করলে TSS (Toxic Shock Syndrome) এর ঝুঁকি থাকে, তবে এটি সরাসরি চুলকানির কারণ নয়।
ভুল ধারণা ৩: চুলকানি মানেই যৌন রোগ।
সঠিক তথ্য: চুলকানির অনেক কারণ আছে, যার মধ্যে সাধারণ ইস্ট ইনফেকশন, ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন, অ্যালার্জি, বা ত্বকের সমস্যা প্রধান। যৌন রোগ (STI) একটি কারণ হতে পারে, কিন্তু এটিই একমাত্র কারণ নয়।
উপসংহার
যোনিতে চুলকানি একটি সাধারণ সমস্যা হলেও, এটি অনেক অস্বস্তির কারণ হতে পারে। সঠিক কারণ নির্ণয় এবং প্রাথমিক পর্যায়ে ঘরোয়া কিছু উপায় অবলম্বন করলে দ্রুতই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। মনে রাখবেন, পরিচ্ছন্নতা, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস আপনাকে অনেক রোগ থেকে দূরে রাখতে পারে। যদি আপনার চুলকানি মারাত্মক আকার ধারণ করে বা এর সাথে অন্য কোনো উপসর্গ দেখা দেয়, তবে দেরি না করে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ)
১. যোনিতে চুলকানি কমাতে দ্রুত কি ব্যবহার করা যেতে পারে?
চুলকানি কমাতে আপনি ঠান্ডা সেঁক (cold compress) দিতে পারেন, নারকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন, অথবা দইয়ের মতো প্রোবায়োটিক খাবার খেতে পারেন। তবে এটি নির্ভর করে চুলকানির কারণের উপর।
২. ঘরোয়া উপায়ে নিরাপদ ব্যবহারবিধি কী?
সবচেয়ে নিরাপদ উপায় হলো নারকেল তেল বা দই ব্যবহার করা। বেকিং সোডা বা অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার অল্প পরিমাণে ব্যবহার করুন এবং সরাসরি যোনিপথে ব্যবহার করবেন না।
৩. প্রতিদিন কি যোনিপথ ধোয়া উচিত?
শুধুমাত্র বাইরের অংশ (vulva) প্রতিদিন একবার হালকা গরম জল দিয়ে পরিষ্কার করাই যথেষ্ট। অতিরিক্ত ধোয়া বা রাসায়নিক সাবান ব্যবহার করা উচিত নয়।
৪. কোন খাবারগুলো যোনির স্বাস্থ্যের জন্য ভালো?
দই, ঘোল, ক্র্যানবেরি জুস (চিনি ছাড়া), এবং প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবারগুলো যোনির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
৫. চুলকানি কি গর্ভবস্থায় স্বাভাবিক?
গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তনের কারণে চুলকানি হতে পারে। তবে এটি ইস্ট ইনফেকশনের লক্ষণও হতে পারে। গর্ভাবস্থায় যেকোনো সমস্যায় ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
৬. যোনিতে চুলকানি হলে কি যৌন মিলনে সমস্যা হয়?
তীব্র চুলকানি বা ইনফেকশন থাকলে যৌন মিলনে ব্যথা বা অস্বস্তি হতে পারে। ইনফেকশন সেরে না যাওয়া পর্যন্ত যৌন মিলন থেকে বিরত থাকা উচিত।
৭. কখন ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত?
যদি ঘরোয়া উপায়ে চুলকানি না কমে, বা অস্বাভাবিক স্রাব, জ্বালাপোড়া, রক্তপাত, বা ব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দেয়, তবে অবিলম্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।