Table of Contents
- ইকোস্প্রিন এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: জরুরি তথ্য
- ইকোস্প্রিন: এটি আসলে কী এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?
- ইকোস্প্রিন এর সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
- গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কখন আপনাকে জরুরি ভিত্তিতে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে
- ইকোস্প্রিনের সাথে মিথস্ক্রিয়া: কোন কোন ঔষধ বা পদার্থের সাথে এটি এড়িয়ে চলা উচিত?
- বিশেষ গোষ্ঠী এবং ইকোস্প্রিন: কাদের সতর্কতা বেশি অবলম্বন করা উচিত?
- ইকোস্প্রিন ডোজ এবং গ্রহণ করার সঠিক নিয়ম
- কখন ইকোস্প্রিন ব্যবহার করা উচিত নয়?
- ইকোস্প্রিন এবং জীবনযাত্রার অভ্যাস: সম্পর্কটি কেমন?
- ইকোস্প্রিন সংক্রান্ত সাধারণ জিজ্ঞাস্য (FAQ)
- ১. ইকোস্প্রিন কি প্রতিদিন খাওয়া উচিত?
- ২. ইকোস্প্রিন সেবনের পর পেট ব্যথা হলে কি করব?
- ৩. ইকোস্প্রিন কি শিশুদের জন্য নিরাপদ?
- ৪. ইকোস্প্রিন কতদিন পর্যন্ত ব্যবহার করা যেতে পারে?
- ৫. আমি কি অন্য ব্যথানাশক ঔষধের সাথে ইকোস্প্রিন নিতে পারি?
- ৬. ইকোস্প্রিন কি ওজন বাড়াতে পারে?
- ৭. বেশি পরিমাণে ইকোস্প্রিন খেলে কি হবে?
- উপসংহার
ইকোস্প্রিন এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: জরুরি তথ্য
স্বাস্থ্য সংক্রান্ত যেকোনো উদ্বেগ বা প্রশ্নে একজন যোগ্যতাসম্পন্ন ডাক্তারের পরামর্শ নিন। এই তথ্যের উদ্দেশ্য হল শুধুমাত্র সাধারণ জ্ঞানের প্রসার ঘটানো, কোনো রোগ নির্ণয় বা চিকিৎসার বিকল্প হিসেবে নয়।
ইকোস্প্রিন: এটি আসলে কী এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?
ইকোস্প্রিন, যা অ্যাসপিরিন নামেও পরিচিত, একটি সাধারণ এবং বহুল ব্যবহৃত ঔষধ। বহু বছর ধরে এটি জ্বর, ব্যথা এবং প্রদাহ কমাতে ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়াও, এটি রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। ডাক্তাররা প্রায়শই কম ডোজের অ্যাসপিরিন হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের জন্য নির্ধারণ করেন। এর কার্যকারিতা সত্ত্বেও, যেকোনো ঔষধের মতোই ইকোস্প্রিনেরও কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো সম্পর্কে জানা থাকলে আমরা তা ভালোভাবে মোকাবিলা করতে পারি এবং জরুরি প্রয়োজনে সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারি।
ইকোস্প্রিন এর সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
ইকোস্প্রিন সাধারণত নিরাপদ হলেও, কিছু সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এগুলি সাধারণত হালকা হয় এবং ঔষধ গ্রহণ বন্ধ করলে বা ডোজ কমালে ঠিক হয়ে যায়।
- পেট ব্যথা ও অস্বস্তি: ইকোস্প্রিন পেটে অস্বস্তি, জ্বালাপোড়া বা ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে। এটি ঔষধের সবচেয়ে সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলোর মধ্যে একটি।
- বমি বমি ভাব ও বমি: কিছু ব্যক্তির বমি বমি ভাব লাগতে পারে বা বমি হতে পারে।
- অম্বল বা বুক জ্বালা: খাদ্যের হজমের সময় পাকস্থলীর অ্যাসিড খাদ্যনালীতে উঠে আসার কারণে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- রক্তপাত বৃদ্ধি: ইকোস্প্রিন রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয়, তাই ছোটখাটো আঘাত বা অস্ত্রোপচারের পরেও রক্তপাত স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হতে পারে।
যদি এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো গুরুতর হয় বা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কখন আপনাকে জরুরি ভিত্তিতে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে
যদিও বেশিরভাগ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হালকা এবং সহনীয়, কিছু ক্ষেত্রে ইকোস্প্রিন গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের সাহায্য নেওয়া অত্যাবশ্যক।
- মারাত্মক রক্তপাত: অস্বাভাবিক রক্তপাত, যেমন – মলদ্বার দিয়ে রক্তপাত (কালচে বা রক্তাক্ত মল), কাশির সাথে রক্ত, নাক দিয়ে অতিরিক্ত রক্তপাত যা বন্ধ হচ্ছে না, অথবা ত্বকের নিচে লালচে দাগ দেখা দিলে অবিলম্বে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।
- রক্ত বমি: বমির সাথে রক্তের উপস্থিতি একটি গুরুতর লক্ষণ এবং এর জন্য তাৎক্ষণিক চিকিৎসা প্রয়োজন।
- অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া: শ্বাসকষ্ট, মুখ, ঠোঁট, জিহ্বা বা গলা ফুলে যাওয়া, ফুসকুড়ি বা চুলকানি – এগুলো গুরুতর অ্যালার্জির লক্ষণ হতে পারে।
- টিনিটাস (কানে ভোঁ ভোঁ শব্দ): উচ্চ মাত্রার অ্যাসপিরিন গ্রহণ করলে কানে ভোঁ ভোঁ শব্দ বা শ্রবণশক্তি হ্রাস পেতে পারে।
- গুরুতর পেটে ব্যথা: যদি পেটে তীব্র ব্যথা হয়, তবে এটি পেটের আলসারের লক্ষণ হতে পারে।
- মানসিক অবস্থার পরিবর্তন: বিভ্রান্তি, তন্দ্রাচ্ছন্নতা বা অস্বাভাবিক আচরণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা সহায়তা নিন।
এই গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি বিরল হলেও, এগুলোর ব্যাপারে সচেতন থাকা জরুরি।
ইকোস্প্রিনের সাথে মিথস্ক্রিয়া: কোন কোন ঔষধ বা পদার্থের সাথে এটি এড়িয়ে চলা উচিত?
ইকোস্প্রিন অন্যান্য কিছু ঔষধ, খাদ্যতালিকাগত সম্পূরক (supplements) এবং অ্যালকোহলের সাথে বিক্রিয়া করতে পারে। এই মিথস্ক্রিয়াগুলো ঔষধের কার্যকারিতা বাড়িয়ে দিতে পারে বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।
অন্যান্য NSAIDs (Non-Steroidal Anti-Inflammatory Drugs): আইবুপ্রোফেন (Ibuprofen), ন্যাপ্রোক্সেন (Naproxen) এর মতো ব্যথানাশক ঔষধগুলির সাথে ইকোস্প্রিন গ্রহণ করলে পেটে রক্তপাত এবং কিডনির ক্ষতির ঝুঁকি বেড়ে যায়।
রক্ত পাতলা করার ঔষধ: ওয়ারফারিন (Warfarin), হেপারিন (Heparin) এবং নতুন ওরাল অ্যান্টিকোয়াগুল্যান্ট (NOACs) এর মতো রক্ত পাতলা করার ঔষধের সাথে ইকোস্প্রিন গ্রহণ করলে রক্তপাতের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
নির্দিষ্ট কিছু অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট: SSRIs (Selective Serotonin Reuptake Inhibitors) যেমন ফ্লুক্সেটিন (Fluoxetine) এবং সেরট্রালিন (Sertraline) ইকোস্প্রিনের সাথে গ্রহণ করলে রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
অ্যালকোহল: ইকোস্প্রিন সেবনের সময় অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান করলে পাকস্থলীর আস্তরণের ক্ষতি হতে পারে এবং রক্তপাতের ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারে।
প্রাকৃতিক সম্পূরক: কিছু ভেষজ সম্পূরক, যেমন – রসুন (garlic), জিনসেং (ginseng) এবং জিঙ্কগো বিলোবা (ginkgo biloba) রক্ত পাতলা করার প্রভাব ফেলতে পারে এবং ইকোস্প্রিনের সাথে গ্রহণ করলে রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
গর্ভাবস্থা ও স্তন্যপান: যদি আপনি গর্ভবতী হন বা শিশুকে স্তন্যপান করান, তবে ইকোস্প্রিন সেবনের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন। গর্ভাবস্থার শেষ তিন মাসে অ্যাসপিরিন গ্রহণ শিশুর জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে।
আপনার গ্রহণ করা সকল ঔষধ, ভেষজ এবং সম্পূরক সম্পর্কে আপনার ডাক্তারকে জানান। এটি আপনাকে এবং আপনার ডাক্তারকে নিরাপদ বিকল্পগুলি বেছে নিতে সাহায্য করবে।
তথ্যের জন্য, NHS (National Health Service) থেকে অ্যাসপিরিন সম্পর্কিত আরও তথ্য পেতে পারেন।
বিশেষ গোষ্ঠী এবং ইকোস্প্রিন: কাদের সতর্কতা বেশি অবলম্বন করা উচিত?
কিছু নির্দিষ্ট গোষ্ঠী আছে যাদের ইকোস্প্রিন গ্রহণের সময় অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত:
- শিশু ও কিশোর-কিশোরী: ইনফ্লুয়েঞ্জা বা চিকেনপক্সের মতো ভাইরাল সংক্রমণের সময় শিশুদের অ্যাসপিরিন দেওয়া হলে Reye’s Syndrome নামক একটি বিরল কিন্তু মারাত্মক রোগ হতে পারে। এই কারণে, এই রোগগুলোতে শিশুদের অ্যাসপিরিন এড়িয়ে চলা উচিত।
- বয়স্ক ব্যক্তি: বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ইকোস্প্রিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, বিশেষ করে রক্তপাত এবং পেটের সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
- যাদের রক্তপাতজনিত সমস্যা আছে: যাদের হেমোফিলিয়া (hemophilia) বা অন্য কোনো রক্তপাতজনিত রোগ আছে, তাদের ইকোস্প্রিন সেবন করা উচিত নয়।
- যাদের অ্যাজমা (Asthma) আছে: কিছু অ্যাজমা রোগীর অ্যাসপিরিন গ্রহণের ফলে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যেতে পারে (Aspirin-induced asthma)।
- পূর্ববর্তী পেটের আলসার বা গ্যাস্ট্রাইটিসের ইতিহাস: যাদের আগে পেটের আলসার বা গ্যাস্ট্রাইটিস হয়েছে, তাদের অ্যাসপিরিন সেবনে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
যদি আপনি এই গোষ্ঠীগুলোর অন্তর্ভুক্ত হন, তবে ইকোস্প্রিন সেবনের আগে আপনার ডাক্তারের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করুন।
ইকোস্প্রিন ডোজ এবং গ্রহণ করার সঠিক নিয়ম
ইকোস্প্রিনের ডোজ নির্ভর করে এটি কী কারণে গ্রহণ করা হচ্ছে তার উপর। সাধারণ ব্যথা বা জ্বর কমাতে সাধারণত বেশি ডোজ লাগে, যেখানে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক প্রতিরোধে খুব কম ডোজ (যেমন 75mg বা 100mg) ব্যবহার করা হয়।
সাধারণ নির্দেশিকা:
- ঔষধের নির্দিষ্ট ডোজ অনুসরণ করুন: ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী বা ঔষধের প্যাকেজে উল্লিখিত নির্দেশিকা মেনে চলুন।
- খাবারের সাথে বা পরে গ্রহণ করুন: পেটের অস্বস্তি কমাতে ইকোস্প্রিন খাবারের সাথে অথবা খাবার পর গ্রহণ করা ভালো।
- পর্যাপ্ত জল পান করুন: ঔষধটি গিলে ফেলার জন্য পর্যাপ্ত জল পান করুন।
- ডোজ বাদ দেবেন না (যদি দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার জন্য হয়): যদি ডাক্তার হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক প্রতিরোধের জন্য ইকোস্প্রিন দিয়ে থাকেন, তবে নিয়মিত ডোজ গ্রহণ করা খুব জরুরি। কোনো ডোজ বাদ গেলে তা নিয়ে বেশি চিন্তা না করে পরবর্তী ডোজটি স্বাভাবিক সময়ে নিন। তবে, পরপর দুটি ডোজ একসাথে গ্রহণ করবেন না।
মনে রাখবেন: কখনো নিজে নিজে ডোজ পরিবর্তন করবেন না বা ঔষধ গ্রহণ বন্ধ করবেন না, বিশেষ করে যদি এটি হৃদরোগ প্রতিরোধের জন্য ডাক্তার দিয়ে থাকেন।
কখন ইকোস্প্রিন ব্যবহার করা উচিত নয়?
কিছু পরিস্থিতি আছে যেখানে ইকোস্প্রিন ব্যবহার করা উচিত নয় বা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে ব্যবহার করা উচিত:
- অ্যালার্জি: অ্যাসপিরিন বা NSAID গোত্রের অন্য কোনো ঔষধের প্রতি অ্যালার্জি থাকলে।
- রক্তপাতজনিত রোগ: বর্তমানে সক্রিয় রক্তপাত বা রক্তপাতজনিত রোগের ইতিহাস থাকলে।
- গুরুতর কিডনি বা লিভারের রোগ: যদি কিডনি বা লিভারের কার্যকারিতা মারাত্মকভাবে কমে গিয়ে থাকে।
- াইলিন (Peptic Ulcer) বা গ্যাস্ট্রাইটিস: যদি বর্তমানে পেপটিক আলসার বা গ্যাস্ট্রাইটিস থাকে, বিশেষ করে যদি সক্রিয় রক্তপাত হয়।
- নির্দিষ্ট কিছু ঔষধ সেবন: মেথোট্রেক্সেট (Methotrexate) বা ওয়ারফারিন (Warfarin) এর মতো কিছু ঔষধের উচ্চ মাত্রার সাথে।
- গুরুতর হার্ট ফেইলিওর (Heart Failure): কিছু ক্ষেত্রে এটি এড়িয়ে চলা উচিত।
- গর্ভাবস্থার শেষ তিন মাস: এই সময়ে এটি ব্যবহার করা উচিত নয়।
আপনার যদি এই অবস্থাগুলোর কোনোটি থাকে, তবে ইকোস্প্রিন সেবনের আগে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।
ইকোস্প্রিন এবং জীবনযাত্রার অভ্যাস: সম্পর্কটি কেমন?
ইকোস্প্রিন একটি ঔষধ হলেও, আপনার জীবনযাত্রার অভ্যাস এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে।
খাদ্যাভ্যাস:
- মশলাদার খাবার: অতিরিক্ত মশলাদার খাবার পাকস্থলীর উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যা ইকোস্প্রিনের কারণে হওয়া অস্বস্তি বাড়িয়ে দিতে পারে।
- টক বা অম্লীয় খাবার: এগুলিও হজমের সমস্যা বাড়াতে পারে।
- স্বাস্থ্যকর খাবার: ফল, সবজি এবং আঁশযুক্ত খাবার হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে এবং ইকোস্প্রিনের সাথে গ্যাস্ট্রিক সমস্যা কমা��ে সাহায্য করতে পারে।
শারীরিক কার্যকলাপ:
- নিয়মিত ব্যায়াম: সাধারণ ব্যায়াম শরীরের রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এটি পরোক্ষভাবে ইকোস্প্রিনের কার্যকারিতায় সহায়ক হতে পারে।
- অতিরিক্ত পরিশ্রম: হঠাৎ করে অতিরিক্ত পরিশ্রম বা আঘাত লাগলে রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়তে পারে, বিশেষ করে যদি আপনি ইকোস্প্রিন গ্রহণ করেন।
ঘুম: পর্যাপ্ত ঘুম শরীরকে সুস্থ রাখতে এবং ঔষধের প্রভাব ভালোভাবে কাজ করতে সহায়তা করে।
ধূমপান ও মদ্যপান: এই অভ্যাসগুলো পাকস্থলীর আস্তরণের ক্ষতি করে এবং ইকোস্প্রিন সেবনের সময় রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই, ইকোস্প্রিন গ্রহণকালে এগুলো এড়িয়ে চলা উচিত।
আপনার জীবনযাত্রার অভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে আপনি ইকোস্প্রিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমাতে পারেন এবং এর উপকারিতা বাড়াতে পারেন।
ইকোস্প্রিন সংক্রান্ত সাধারণ জিজ্ঞাস্য (FAQ)
১. ইকোস্প্রিন কি প্রতিদিন খাওয়া উচিত?
এটি নির্ভর করে আপনার স্বাস্থ্যের অবস্থা এবং ডাক্তারের পরামর্শের উপর। হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক প্রতিরোধের জন্য ডাক্তার কম ডোজের ইকোস্প্রিন প্রতিদিন গ্রহণ করার পরামর্শ দিতে পারেন। তবে, কেবল ব্যথা বা জ্বরের জন্য এটি প্রতিদিন গ্রহণ করা উচিত নয়। সর্বদা ডাক্তারের নির্দেশ অনুসরণ করুন।
২. ইকোস্প্রিন সেবনের পর পেট ব্যথা হলে কি করব?
যদি পেটে হালকা ব্যথা বা অস্বস্তি হয়, তবে খাবার গ্রহণের সময় বা পরে ইকোস্প্রিন খান। যদি ব্যথা গুরুতর হয় বা বমি হয়, তাহলে ঔষধ নেওয়া বন্ধ করে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।
৩. ইকোস্প্রিন কি শিশুদের জন্য নিরাপদ?
না, সাধারণত শিশুদের এবং কিশোর-কিশোরীদের ভাইরাল সংক্রমণের সময় (যেমন ফ্লু বা চিকেনপক্স) অ্যাসপিরিন (ইকোস্প্রিন) দেওয়া হয় না, কারণ এটি Reye’s Syndrome নামক একটি মারাত্মক রোগ সৃষ্টি করতে পারে। শিশুদের জন্য সর্বদা ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
৪. ইকোস্প্রিন কতদিন পর্যন্ত ব্যবহার করা যেতে পারে?
ব্যথা বা জ্বর নিরাময়ের জন্য ইকোস্প্রিন স্বল্পমেয়াদী ব্যবহারের জন্য। কিন্তু হৃদরোগ বা স্ট্রোক প্রতিরোধের জন্য ডাক্তার দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারের পরামর্শ দিতে পারেন। দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারের ক্ষেত্রে ডাক্তারের নিয়মিত পর্যবেক্ষণ অপরিহার্য।
৫. আমি কি অন্য ব্যথানাশক ঔষধের সাথে ইকোস্প্রিন নিতে পারি?
সাধারণত, একই সাথে NSAID গোত্রীয় ব্যথানাশক (যেমন আইবুপ্রোফেন) ইকোস্প্রিনের সাথে নেওয়া উচিত নয়, কারণ এটি পেটের রক্তপাত এবং অন্যান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। তবে, প্যারাসিটামলের (Paracetamol) সাথে ইকোস্প্রিন সাধারণত নিরাপদ, যদি না আপনার অন্য কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যা থাকে। যেকোনো ঔষধ গ্রহণের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
৬. ইকোস্প্রিন কি ওজন বাড়াতে পারে?
না, ইকোস্প্রিন সাধারণত ওজন বাড়ানোর জন্য পরিচিত নয়। এর প্রধান পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো রক্তপাত এবং গ্যাস্ট্রিক সম্পর্কিত।
৭. বেশি পরিমাণে ইকোস্প্রিন খেলে কি হবে?
অতিরিক্ত পরিমাণে ইকোস্প্রিন গ্রহণ করলে তা মারাত্মক হতে পারে। এর মধ্যে থাকতে পারে বমি, কানে ভোঁ ভোঁ শব্দ, শ্বাসকষ্ট, এবং গুরুতর ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ রক্তপাত বা কোমা। এটি একটি মেডিকেল ইমার্জেন্সি এবং তাৎক্ষণিক হাসপাতালে ভর্তি হওয়া প্রয়োজন।
উপসংহার
ইকোস্প্রিন একটি অত্যন্ত উপকারী ঔষধ যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনেক সমস্যা সমাধানে এবং গুরুতর রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। তবে, যেকোনো ঔষধের মতোই এরও কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো সম্পর্কে জেনে রাখা এবং সে অনুযায়ী সতর্কতা অবলম্বন করা খুবই জরুরি। আপনার স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখুন, ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলুন এবং যেকোনো অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন!