সূর্যের আলো আমাদের ত্বকের জন্য খুব প্রয়োজনীয়, কিন্তু এর ক্ষতিকারক রশ্মি (UV rays) আমাদের ত্বকের অনেক ক্ষতি করতে পারে। সানস্ক্রিন ব্যবহার করা তাই খুবই জরুরি। কিন্তু সানস্ক্রিন ব্যবহার করার সঠিক নিয়ম অনেকেই জানেন না, যার ফলে এর পুরো সুবিধা পাওয়া যায় না। মনে হচ্ছে যেন খুব সাধারণ একটা ব্যাপার, কিন্তু কিছু ভুল নিয়মের কারণে আমাদের ত্বকের সুরক্ষা কমে যায়। চিন্তার কিছু নেই! আজ আমরা সহজভাবে ধাপে ধাপে জানবো কিভাবে সানস্ক্রিন ব্যবহার করলে সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়। এই লেখাটি পড়লে আপনার সানস্ক্রিন ব্যবহার নিয়ে সব দ্বিধা দূর হয়ে যাবে। তাহলে চলুন, জেনে নিই সানস্ক্রিন ব্যবহারের সেরা কিছু টিপস!
Table of Contents
- সানস্ক্রিন কেন ব্যবহার করবেন?
- সঠিক সানস্ক্রিন নির্বাচন
- সানস্ক্রিন ব্যবহারের সঠিক নিয়ম
- সানস্ক্রিন ব্যবহারের সাধারণ ভুল এবং সেগুলোর সমাধান
- বিশেষ টিপস: বিভিন্ন পরিস্থিতিতে সানস্ক্রিন ব্যবহার
- সানস্ক্রিন নিয়ে কিছু সাধারণ প্রশ্ন ও উত্তর (FAQ)
- প্রশ্ন ১: দিনে কতবার সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত?
- প্রশ্ন ২: মেকআপের আগে কি সানস্ক্রিন ব্যবহার করা জরুরি?
- প্রশ্ন ৩: SPF 100 সানস্ক্রিন কি SPF 30 এর চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর?
- প্রশ্ন ৪: সানস্ক্রিন কি ব্রণ সৃষ্টি করতে পারে?
- প্রশ্ন ৫: সানস্ক্রিন কি শুধু শীতকালে বা মেঘলা দিনে ব্যবহার করা উচিত?
- প্রশ্ন ৬: কোন ধরনের সানস্ক্রিন শিশুদের জন্য ভালো?
- প্রশ্ন ৭: সানস্ক্রিন ব্যবহারের মেয়াদ কতদিন?
- উপসংহার
সানস্ক্রিন কেন ব্যবহার করবেন?
আমাদের মনে হতে পারে, সানস্ক্রিন শুধু রোদে বাইরে গেলেই ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু এই ধারণাটি সম্পূর্ণ সঠিক নয়। দিনের বেলায়, মেঘলা দিনেও সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি (UV rays) আমাদের ত্বকের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। এই রশ্মিগুলো দুই প্রকার: UVA এবং UVB।
- UVA রশ্মি: এই রশ্মি ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে এবং সময়ের আগেই বার্ধক্যের লক্ষণ, যাকে আমরা বলি ‘অ্যাক্সিলারেটেড এজিং’ (accelerated aging), তা সৃষ্টি করে। এর ফলে ত্বকে বলিরেখা, কালো দাগ এবং চামড়া কুঁচকে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। UVA রশ্মি মেঘ বা কাঁচ ভেদ করেও ত্বকে পৌঁছাতে পারে।
- UVB রশ্মি: এই রশ্মি ত্বকের উপরিভাগে প্রভাব ফেলে এবং সরাসরি সানবার্ন বা ত্বক পুড়ে যাওয়ার কারণ হয়। দীর্ঘক্ষণ UVB রশ্মির সংস্পর্শে থাকলে ত্বকের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
সানস্ক্রিন এই দুটি ক্ষতিকারক রশ্মি থেকে আমাদের ত্বককে রক্ষা করে। নিয়মিত সানস্ক্রিন ব্যবহারের ফলে:
- ত্বক রোদে পোড়া থেকে রক্ষা পায়।
- অকালে বার্ধক্যের ছাপ, যেমন বলিরেখা ও কালো দাগ, কম দেখা যায়।
- ত্বকের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে।
- ত্বকের উজ্জ্বলতা বজায় থাকে।
তাই, সুস্থ ও সুন্দর ত্বকের জন্য সানস্ক্রিন ব্যবহার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধু একটি কসমেটিক পণ্য নয়, বরং ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য একটি অপরিহার্য উপাদান।
সঠিক সানস্ক্রিন নির্বাচন
বাজারে নানা ধরনের সানস্ক্রিন পাওয়া যায়। আপনার ত্বকের জন্য সঠিক সানস্ক্রিনটি বেছে নেওয়া খুব জরুরি। সানস্ক্রিন নির্বাচনের সময় কিছু বিষয় মাথায় রাখা উচিত:
এসপিএফ (SPF) নির্বাচন
SPF বা Sun Protection Factor হলো সানস্ক্রিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক। এটি নির্দেশ করে সানস্ক্রিনটি UVB রশ্মি থেকে আপনার ত্বককে কতক্ষণ রক্ষা করতে পারবে।
- SPF 15: সাধারণ ব্যবহারের জন্য ভালো, যা প্রায় ৯৩% UVB রশ্মি আটকে দিতে পারে।
- SPF 30: এটি প্রায় ৯৭% UVB রশ্মি আটকে দিতে পারে এবং আমরা বাইরে বেশি সময় কাটালে এটি ব্যবহার করা উচিত।
- SPF 50 বা তার বেশি: এটি প্রায় ৯৮% UVB রশ্মি আটকে দিতে পারে। যারা দীর্ঘক্ষণ রোদে কাজ করেন বা যাদের ত্বক খুব সংবেদনশীল, তাদের জন্য এটি উপযুক্ত।
বিশেষজ্ঞরা সাধারণত SPF 30 বা তার বেশি SPF যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহারের পরামর্শ দেন। আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটি-র মতে, দিনের বেলা বাইরে বের হলে সবসময় SPF 30 বা তার বেশি যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত।
ব্রড-স্পেকট্রাম (Broad-Spectrum) সুরক্ষা
সানস্ক্রিন কেনার সময় “Broad-Spectrum” লেবেলটি দেখে নিন। এর মানে হলো সানস্ক্রিনটি UVA এবং UVB উভয় রশ্মি থেকেই সুরক্ষা দেবে। UVA রশ্মি ত্বকের অকালে বার্ধক্য এবং UVB রশ্মি সানবার্নের জন্য দায়ী। তাই, শুধু একটি নয়, উভয় রশ্মি থেকে সুরক্ষা দেয় এমন সানস্ক্রিন বেছে নিন।
ত্বকের ধরন অনুযায়ী সানস্ক্রিন
- তৈলাক্ত ও ব্রণের প্রবণ ত্বক: যাদের ত্বক তৈলাক্ত বা ব্রণ হয়, তাদের জন্য অয়েল-ফ্রি (oil-free), নন-কমেডোজেনিক (non-comedogenic) সানস্ক্রিন ভালো। এই সানস্ক্রিনগুলো সহজে ত্বকের লোমকূপ বন্ধ করে না।
- শুষ্ক ত্বক: শুষ্ক ত্বকের জন্য ময়েশ্চারাইজারযুক্ত (moisturizing) সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। এটি ত্বককে শুষ্ক হওয়া থেকে বাঁচাবে এবং আর্দ্রতাও যোগাবে।
- সংবেদনশীল ত্বক: যাদের ত্বক সংবেদনশীল, তাদের জন্য মিনারেল-ভিত্তিক (mineral-based) সানস্ক্রিন, যেমন জিঙ্ক অক্সাইড (Zinc Oxide) বা টাইটানিয়াম ডাই অক্সাইড (Titanium Dioxide) যুক্ত সানস্ক্রিন ভালো। এগুলো সাধারণত অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া কম তৈরি করে।
- স্বাভাবিক ত্বক: স্বাভাবিক ত্বকের জন্য যেকোনো ভালো মানের ব্রড-স্পেকট্রাম সানস্ক্রিন ব্যবহার করা যেতে পারে।
গঠন (Formulation)
সানস্ক্রিন দুই ধরনের হয়: কেমিক্যাল সানস্ক্রিন এবং ফিজিক্যাল সানস্ক্রিন।
- কেমিক্যাল সানস্ক্রিন: এগুলো ত্বকের উপর শোষিত হয় এবং UV রশ্মিকে তাপ হিসেবে বের করে দেয়। যেমন: অ্যাভobenzone, oxybenzone।
- ফিজিক্যাল সানস্ক্রিন (বা মিনারেল সানস্ক্রিন): এগুলো ত্বকের উপর একটি আস্তরণ তৈরি করে এবং UV রশ্মিকে প্রতিফলিত করে দেয়। যেমন: জিঙ্ক অক্সাইড, টাইটানিয়াম ডাই অক্সাইড।
আপনার ত্বকের সংবেদনশীলতা এবং পছন্দের উপর নির্ভর করে যেকোনো একটি বেছে নিতে পারেন।
সানস্ক্রিন ব্যবহারের সঠিক নিয়ম
সঠিক সানস্ক্রিন নির্বাচন করার পর, এটি সঠিকভাবে ব্যবহার করাও খুব জরুরি। অনেকেই সানস্ক্রিন ব্যবহার করলেও এর সঠিক নিয়মগুলো জানেন না, ফলে এর পুরো সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন। নিচে ধাপে ধাপে সানস্ক্রিন ব্যবহারের নিয়ম আলোচনা করা হলো:
১. ত্বকের পরিচ্ছন্নতা
সানস্ক্রিন লাগানোর আগে আপনার ত্বক পরিষ্কার করে নেওয়া উচিত। মুখ বা শরীরের যে অংশে সানস্ক্রিন লাগাবেন, সেটি হালকা ফেসওয়াশ বা সাবান দিয়ে ধুয়ে নিন। তারপর নরম তোয়ালে দিয়ে আলতো করে মুছে নিন। একটি পরিষ্কার ত্বকে সানস্ক্রিন ভালোভাবে বসে এবং কাজ করে।
২. পর্যাপ্ত পরিমাণে ব্যবহার
সানস্ক্রিন কি পরিমাণে ব্যবহার করবেন, এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই খুব অল্প পরিমাণে সানস্ক্রিন ব্যবহার করেন, যা পর্যাপ্ত সুরক্ষা দিতে পারে না।
- মুখের জন্য: সাধারণত, একটি কয়েন সাইজের (coin-sized) পরিমাণ সানস্ক্রিন মুখে লাগানোর জন্য যথেষ্ট। যদি বেশি পরিমাণে ব্যবহার করতে চান, যেমন গলা বা কানের অংশে, তবে আরও একটু বেশি পরিমাণ নিতে পারেন।
- শরীরের জন্য: শরীরের যেকোনো উন্মুক্ত অংশে (যেমন হাত, পা, ঘাড়) একটি শট গ্লাস (shot glass) পরিমাণ সানস্ক্রিন লাগাতে পারেন।
ন্যাশনাল স্কিন ক্যান্সার ফাউন্ডেশন (National Skin Cancer Foundation) অনুযায়ী, ত্বকের সঠিক সুরক্ষার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা অত্যাবশ্যক।
৩. সকল উন্মুক্ত অংশে লাগানো
শুধু মুখ নয়, শরীরের যে সকল অংশ সূর্যের আলোতে উন্মুক্ত থাকে, সেখানে সানস্ক্রিন লাগানো উচিত। এর মধ্যে রয়েছে:
- মুখ
- ঠোঁট (একটি লিপ বাম ব্যবহার করুন যাতে SPF আছে)
- কান
- ঘাড়
- হাত ও পায়ের কিছু অংশ
- পিঠের উপরের অংশ
অনেক সময় আমরা এই ছোট জায়গাগুলো বাদ দিয়ে ফেলি, কিন্তু এগুলোও সূর্যের আলোতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
৪. বাইরে বের হওয়ার আগে
সানস্ক্রিন লাগানোর সঠিক সময় হলো বাইরে বের হওয়ার অন্তত ১৫-২০ মিনিট আগে। এতে সানস্ক্রিন ত্বকে ভালোভাবে শোষিত হতে পারে এবং কার্যকারিতা শুরু করতে পারে। কেমিক্যাল সানস্ক্রিনের ক্ষেত্রে এটি বেশি জরুরি, কারণ এগুলো ত্বকে শোষিত হয়ে কাজ করে। ফিজিক্যাল সানস্ক্রিন লাগানোর সাথে সাথেই কাজ শুরু করতে পারে, তবে নিয়ম মেনে এটিও কিছুক্ষণ আগে লাগানো ভালো।
৫. নিয়মিত রি-অ্যাপ্লাই (Reapply) করা
সানস্ক্রিন একবার লাগালেই সারাদিন সুরক্ষা পাওয়া যায় না। ঘাম, জল বা পোশাকের ঘর্ষণে সানস্ক্রিনের কার্যকারিতা কমে যায়। তাই, নির্দিষ্ট সময় পর পর সানস্ক্রিন আবার লাগানো উচিত।
- সাধারণ ব্যবহারের জন্য: প্রতি ২-৩ ঘণ্টা পর পর।
- সাঁতার কাটার সময় বা বেশি ঘাম হলে: প্রতি ১-২ ঘণ্টা পর পর।
যদি আপনি পানি বা ঘাম থেকে ত্বককে রক্ষা করার জন্য ওয়াটার-রেজিস্ট্যান্ট (water-resistant) সানস্ক্রিন ব্যবহার করেন, তাহলেও নির্দিষ্ট সময় পর পর রি-অ্যাপ্লাই করা আবশ্যক।
৬. অন্যান্য সুরক্ষা ব্যবস্থা
সানস্ক্রিন একা সব সুরক্ষা দিতে পারে না। এর সাথে কিছু অতিরিক্ত ব্যবস্থা নেওয়া ভালো:
- টুপি বা ছাতা ব্যবহার: রোদ থেকে বাঁচতে বড় টুপি বা ছাতা ব্যবহার করুন।
- সানগ্লাস পরা: চোখের সুরক্ষার জন্য UV প্রোটেকশনযুক্ত সানগ্লাস পরুন।
- রোদের সময়ে ঘরের ভিতরে থাকা: দিনের সবচেয়ে তীব্র রোদ (সাধারণত সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা) এড়িয়ে চলুন।
- মোটা পোশাক পরা: লম্বা হাতার পোশাক বা ফুল প্যান্ট পরুন।
এই অভ্যাসগুলো সানস্ক্রিনের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে।
সানস্ক্রিন ব্যবহারের সাধারণ ভুল এবং সেগুলোর সমাধান
অনেকে সানস্ক্রিন ব্যবহার করার সময় কিছু সাধারণ ভুল করে ফেলেন, যা এর উপকারিতা কমিয়ে দেয়। আসুন জেনে নিই সেই ভুলগুলো এবং কীভাবে সেগুলো এড়ানো যায়:
সাধারণ ভুল | সমাধান |
---|---|
প্রচুর পরিমাণে কম সানস্ক্রিন ব্যবহার করা। | ত্বকের প্রতিটি অংশে পর্যাপ্ত পরিমাণে সানস্ক্রিন লাগান। মুখের জন্য অন্তত কয়েন আকারের সমপরিমাণ। |
শুধু মুখের সামনের অংশে সানস্ক্রিন লাগানো। | কান, ঘাড়, ঠোঁট এবং হাতের মতো উন্মুক্ত অংশগুলোতেও সানস্ক্রিন লাগান। |
বাইরে বের হওয়ার ঠিক আগে সানস্ক্রিন লাগানো। | রোদে বের হওয়ার ১৫-২০ মিনিট আগে সানস্ক্রিন লাগান। |
একবার লাগিয়ে সারাদিন চালিয়ে দেওয়া। | প্রতি ২-৩ ঘণ্টা পর পর এবং বেশি ঘাম হলে বা পানিতে নামলে আরও ঘন ঘন রি-অ্যাপ্লাই করুন। |
মেঘলা দিনে বা শীতকালে সানস্ক্রিন ব্যবহার না করা। | UV রশ্মি মেঘ বা কাঁচ ভেদ করতে পারে, তাই রোদ থাকুক বা না থাকুক, প্রতিদিন সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। |
মেকআপের নিচে সানস্ক্রিন ব্যবহার না করা। | মেকআপ করার আগে সানস্ক্রিন লাগান। এটি ত্বকের জন্য একটি সুরক্ষা স্তর তৈরি করে। |
এই ছোট ছোট বিষয়গুলো খেয়াল রাখলে আপনি সানস্ক্রিনের সর্বোচ্চ সুবিধা পাবেন এবং আপনার ত্বক থাকবে সুরক্ষিত।
বিশেষ টিপস: বিভিন্ন পরিস্থিতিতে সানস্ক্রিন ব্যবহার
আমাদের জীবনযাত্রার বিভিন্ন সময়ে সানস্ক্রিন ব্যবহারের নিয়ম একটু ভিন্ন হতে পারে। কিছু বিশেষ পরিস্থিতি এবং সেগুলোতে সানস্ক্রিন ব্যবহারের সেরা উপায় নিচে দেওয়া হলো:
অফিস বা বাড়ির ভেতরে
আপনি যদি বেশিরভাগ সময় অফিসের ভেতরে বা বাড়ির মধ্যে কাটান, তাহলেও সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত। জানালা দিয়ে সূর্যের UVA রশ্মি আপনার ত্বকে পৌঁছাতে পারে, যা ত্বকের অকালে বার্ধক্য সৃষ্টি করে। তাই, দিনের বেলা যখন আপনি বাইরে যাচ্ছেন বা জানালার কাছাকাছি বসে কাজ করছেন, তখন সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
কম্পিউটার বা মোবাইল স্ক্রিনের আলো
অনেকে মনে করেন, কম্পিউটার বা মোবাইল ফোনের স্ক্রিনের নীল আলো (blue light) ত্বকের ক্ষতি করে। যদিও এই বিষয়ে গবেষণা চলছে, তবে কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন দীর্ঘক্ষণ এই আলোতে থাকলে ত্বকের কিছু সমস্যা হতে পারে। কিছু সানস্ক্রিনে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা এই ধরনের ক্ষতিকারক প্রভাব কমাতে সাহায্য করে। তাই, দীর্ঘক্ষণ ডিভাইস ব্যবহার করলে এমন সানস্ক্রিন বেছে নিন যা ব্লু লাইট থেকেও সুরক্ষা দেয়।
শারীরিক পরিশ্রম বা খেলাধুলা
আপনি যদি নিয়মিত ব্যায়াম করেন, খেলাধুলা করেন বা বাইরে কোনো শারীরিক পরিশ্রমে লিপ্ত থাকেন, তাহলে আপনাকে ওয়াটার-রেজিস্ট্যান্ট সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। এটি ঘাম বা পানির সংস্পর্শে এলেও ত্বকে লেগে থাকবে এবং সুরক্ষা দেবে। এমন সানস্ক্রিন বেছে নিন যা অন্তত ৪০ বা ৮০ মিনিটের জন্য ওয়াটার-রেজিস্ট্যান্ট। তবে, সাঁতার কাটার পর বা বেশি ঘাম হলে অবশ্যই আবার সানস্ক্রিন লাগাতে ভুলবেন না।
জলবায়ু ও পরিবেশ
আপনি যে পরিবেশে বাস করেন, তার উপর নির্ভর করে সানস্ক্রিনের ধরন ও SPF নির্বাচন করতে পারেন।
পরিবেশ | প্রয়োজনীয় SPF | বিশেষ টিপস |
---|---|---|
শহুরে পরিবেশ (দৈনন্দিন ব্যবহার) | SPF 30 বা তার বেশি | ব্রড-স্পেকট্রাম সুরক্ষা, হালকা টেক্সচার যেন মেকআপের সাথে সহজে মেশে। |
সমুদ্র সৈকত বা আউটডোর কার্যকলাপ | SPF 50 বা তার বেশি | ওয়াটার-রেজিস্ট্যান্ট, পর্যাপ্ত পরিমাণে লাগানো এবং নিয়মিত রি-অ্যাপ্লাই করা। |
অত্যাধিক রোদ বা পাহাড়ের মতো উচ্চতা | SPF 50+ | UV রশ্মি অনেক তীব্র হওয়ায় সর্বোচ্চ সুরক্ষা প্রয়োজন। টুপি, ছাতা ইত্যাদি ব্যবহার করুন। |
মেঘলা বা ঠান্ডা আবহাওয়া | SPF 30 বা তার বেশি | UV রশ্মি সব সময়ই থাকে, তাই অবহেলা করবেন না। |
ত্বকের বিশেষ অবস্থা
যদি আপনার ত্বক রোদে খুব তাড়াতাড়ি পুড়ে যায় বা অ্যালার্জির প্রবণতা থাকে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। কিছু ক্ষেত্রে, বিশেষ ফর্মুলার সানস্ক্রিন প্রয়োজন হতে পারে।
মনে রাখবেন, সানস্ক্রিন আপনার ত্বকের সুরক্ষার প্রথম ধাপ। এর সাথে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং ত্বকের যত্ন আপনাকে দীর্ঘমেয়াদে সুন্দর ও সুস্থ ত্বক পেতে সাহায্য করবে।
সানস্ক্রিন নিয়ে কিছু সাধারণ প্রশ্ন ও উত্তর (FAQ)
সানস্ক্রিন ব্যবহার নিয়ে আপনাদের মনে অনেক প্রশ্ন থাকতে পারে। নিচে কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হলো:
প্রশ্ন ১: দিনে কতবার সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত?
উত্তর: সাধারণত, দিনে অন্তত দুবার সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত। সকালে একবার এবং প্রয়োজন অনুযায়ী দুপুরে বা বিকেলে আবার। যদি আপনি বাইরে বেশি সময় কাটান, sweating বা swimming করেন, তাহলে প্রতি ২-৩ ঘণ্টা পর পর রি-অ্যাপ্লাই করা ভালো।
প্রশ্ন ২: মেকআপের আগে কি সানস্ক্রিন ব্যবহার করা জরুরি?
উত্তর: হ্যাঁ, অবশ্যই। মেকআপ করার আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা খুবই জরুরি। সানস্ক্রিন ত্বকের উপর একটি সুরক্ষা স্তর তৈরি করে, যা UV রশ্মি এবং অন্যান্য পরিবেশগত দূষণ থেকে ত্বককে বাঁচায়। এটি আপনার প্রাইমার (primer) হিসেবেও কাজ করতে পারে এবং মেকআপ দীর্ঘস্থায়ী করতে সাহায্য করে।
প্রশ্ন ৩: SPF 100 সানস্ক্রিন কি SPF 30 এর চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর?
উত্তর: SPF 30 প্রায় ৯৭% UVB রশ্মি আটকে দিতে পারে, যেখানে SPF 100 প্রায় ৯৯% UVB রশ্মি আটকে দিতে পারে। যদিও SPF 100 বেশি সুরক্ষা দেয়, তবে এই পার্থক্য খুব বেশি নয়। গুরুত্বপূর্ণ হলো, আপনি সানস্ক্রিনটি পর্যাপ্ত পরিমাণে এবং সঠিকভাবে ব্যবহার করছেন কিনা। SPF 30 বা তার বেশি ও ব্রড-স্পেকট্রাম সুরক্ষাযুক্ত সানস্ক্রিনই বেশিরভাগ মানুষের জন্য যথেষ্ট।
প্রশ্ন ৪: সানস্ক্রিন কি ব্রণ সৃষ্টি করতে পারে?
উত্তর: কিছু সানস্ক্রিন, বিশেষ করে যেগুলো তৈলাক্ত বা ভারী উপাদানে তৈরি, সেগুলো ত্বকের লোমকূপ বন্ধ করে ব্রণ সৃষ্টি করতে পারে। তাই, তৈলাক্ত বা ব্রণের প্রবণ ত্বক থাকলে অয়েল-ফ্রি (oil-free), নন-কমেডোজেনিক (non-comedogenic) লেবেলযুক্ত সানস্ক্রিন বেছে নিন।
প্রশ্ন ৫: সানস্ক্রিন কি শুধু শীতকালে বা মেঘলা দিনে ব্যবহার করা উচিত?
উত্তর: না। সানস্ক্রিন বছরের সব সময়ে, এমনকি মেঘলা দিনেও ব্যবহার করা উচিত। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি (UV rays) মেঘ ভেদ করেও ত্বকে পৌঁছাতে পারে এবং সানবার্ন বা ত্বকের ক্ষতি করতে পারে। তাই, প্রতিদিন সানস্ক্রিন ব্যবহার করাটা ত্বকের যত্নের একটি অপরিহার্য অংশ।
প্রশ্ন ৬: কোন ধরনের সানস্ক্রিন শিশুদের জন্য ভালো?
উত্তর: শিশুদের জন্য মিনারেল-বেসড (physical) সানস্ক্রিন সবচেয়ে ভালো, কারণ এগুলো ত্বকের উপর একটি আস্তরণ তৈরি করে এবং সাধারণত সংবেদনশীল ত্বকের জন্য নিরাপদ। এসপিএফ ৩০ বা তার বেশি এবং ব্রড-স্পেকট্রাম সুরক্ষাযুক্ত সানস্ক্রিন শিশুদের জন্য নির্বাচন করুন। ব্যবহারের আগে অল্প অংশে পরীক্ষা করে নেওয়া ভালো।
প্রশ্ন ৭: সানস্ক্রিন ব্যবহারের মেয়াদ কতদিন?
উত্তর: সাধারণত, বেশিরভাগ সানস্ক্রিন খোলার পর ৩ বছর পর্যন্ত ভালো থাকে। তবে, প্যাকেজের গায়ে লেখা মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ (expiry date) দেখে নেওয়া উচিত। যদি সানস্ক্রিনের রঙ, গন্ধ বা টেক্সচারে কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করেন, তবে সেটি ব্যবহার না করাই শ্রেয়, মেয়াদ উত্তীর্ণ না হলেও।
উপসংহার
আমরা সানস্ক্রিন ব্যবহারের নিয়ম, সঠিক সানস্ক্রিন নির্বাচন এবং কিছু সাধারণ ভুল ও তার সমাধান নিয়ে আলোচনা করলাম। আশা করি, এখন আপনারা সানস্ক্রিন ব্যবহার নিয়ে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী। মনে রাখবেন, সানস্ক্রিন শুধু ত্বককে রোদের ক্ষতিকারক রশ্মি থেকে বাঁচায় তাই নয়, এটি অকালে বার্ধক্য, কালো দাগ এবং ত্বকের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করে।
আপনার ত্বকের ধরন অনুযায়ী সঠিক সানস্ক্রিন বেছে নিন, প্রত্যেকবার বাইরে বের হওয়ার আগে ত্বকের উন্মুক্ত অংশে পর্যাপ্ত পরিমাণে লাগান এবং নিয়মিত রি-অ্যাপ্লাই করুন। এছাড়াও, টুপি, ছাতা এবং উপযুক্ত পোশাকের মতো অন্যান্য সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ভুলবেন না। এই সহজ নিয়মগুলো মেনে চললে আপনার ত্বক থাকবে সুস্থ, উজ্জ্বল এবং তরুণ।
সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর ত্বকের জন্য সানস্ক্রিনকে আপনার প্রতিদিনের রুটিনের একটি অপরিহার্য অংশ করে তুলুন। আপনার ত্বকের যত্ন নিন, কারণ এটি আপনার সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। সুস্থ থাকুন, সুন্দর থাকুন!