টিটেনাস ইনজেকশন কখন দিতে হয়? আঘাত বা ক্ষত হলেই আতঙ্কিত হবেন না, জেনে নিন সঠিক সময়।
Key Takeaways
জরুরী অবস্থায় টিটেনাস ইনজেকশন গ্রহণ করুন।
গভীর ক্ষত বা নোংরা জায়গায় আঘাত পেলে নিন।
নিয়মিত বুস্টার ডোজ দিয়ে রোগ প্রতিরোধ করুন।
গর্ভবতী মহিলারাও নির্দিষ্ট সময়ে টিকা নিন।
* স্বাস্থ্যকর্মীর পরামর্শ অনুযায়ী ডোজ নির্ধারণ করুন।
জীবনে চলার পথে ছোটখাটো আঘাত বা কেটে যাওয়াটা খুবই সাধারণ একটি ঘটনা। প্রায় সবারই জীবনে কোনো না কোনো সময় এমন অভিজ্ঞতা হয়। আর এই আঘাতের সাথে সাথেই আমাদের মনে একটি প্রশ্ন আসে – টিটেনাস ইনজেকশন কখন দিতে হয়? এই বিষয়টি নিয়ে অনেকেই দ্বিধায় থাকেন। সঠিক সময়ে এবং সঠিক কারণে টিটেনাস ইনজেকশন নেওয়া আপনার শরীরকে একটি মারাত্মক রোগ থেকে রক্ষা করতে পারে। এই লেখায় আমরা সহজভাবে জানবো কখন আপনার টিটেনাস ইনজেকশন নেওয়া প্রয়োজন এবং এর সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য জরুরি তথ্য।
Table of Contents
- টিটেনাস রোগ কী এবং কেন এটি বিপজ্জনক?
- টিটেনাস ইনজেকশন কখন দিতে হয়: মূল নির্দেশনা
- টিটেনাস টিকার প্রকারভেদ
- কখন টিটেনাস ইনজেকশনের প্রয়োজন নাও হতে পারে?
- টিটেনাস ইনজেকশন নেওয়ার সময় কিছু বিষয় মনে রাখবেন
- টিটেনাস টিকার সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
- টিকে (TD) এবং টিড্যাপ (TDAP) টিকার মধ্যে পার্থক্য
- টিটেনাস ইনজেকশনের প্রয়োজনীয়তা: একটি চিত্র
- টিটেনাস টিকার ডোজ ও সময়সূচী (সাধারণ নির্দেশিকা)
- বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে টিটেনাস টিকা
- টিটেনাস প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
- FAQ: আপনার কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর
- উপসংহার
টিটেনাস রোগ কী এবং কেন এটি বিপজ্জনক?
টিটেনাস, যা ধনুষ্টঙ্কার নামেও পরিচিত, এটি একটি মারাত্মক ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ। এটি `Clostridium tetani` নামক ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা সৃষ্ট হয়। এই ব্যাকটেরিয়া সাধারণত মাটি, ধুলোবালি এবং প্রাণীর মলে পাওয়া যায়। যখন কোনো ধারালো বস্তু (যেমন – পেরেক, কাঁচ) বা ময়লাযুক্ত জিনিস ত্বকের গভীরে ক্ষত তৈরি করে, তখন এই ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
শরীরে প্রবেশের পর, এই ব্যাকটেরিয়া একটি বিষ (toxin) তৈরি করে যা আমাদের স্নায়ুতন্ত্রকে (nervous system) প্রভাবিত করে। এই বিষের কারণে মাংসপেশিতে তীব্র সংকোচন বা খিঁচুনি শুরু হয়, বিশেষ করে চোয়াল ও ঘাড়ের পেশী সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়। এই কারণেই রোগটির নাম ধনুষ্টঙ্কার, কারণ এটি মুখ খুলতে এবং বন্ধ করতে সমস্যা তৈরি করে। যদি সময়মতো চিকিৎসা না করা হয়, তবে এই রোগ অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে এবং মৃত্যুর কারণও হতে পারে।
টিটেনাস ইনজেকশন কখন দিতে হয়: মূল নির্দেশনা
টিটেনাস ইনজেকশন বা টিটেনাস টিকা (Tetanus Shot) মূলত আপনার শরীরকে টিটেনাস রোগের জীবাণু থেকে সুরক্ষা দেয়। কখন এই টিকা নেওয়া উচিত, তা নির্ভর করে আপনার আঘাতের ধরণ এবং সবশেষ কবে টিটেনাস টিকা নিয়েছিলেন তার ওপর।
১. আঘাত বা ক্ষত সৃষ্টির পর
এটিই টিটেনাস ইনজেকশন নেওয়ার সবচেয়ে সাধারণ কারণ। যদি আপনার শরীরে এমন কোনো আঘাত লাগে যার ফলে ত্বক ছিঁড়ে যায় বা ক্ষত তৈরি হয়, তবে টিটেনাস টিকার প্রয়োজন হতে পারে। তবে সব ধরনের আঘাতের জন্য এটি জরুরি নাও হতে পারে।
ক. সামান্য কেটে যাওয়া বা ছড়ে যাওয়া (Minor Cuts and Scrapes)
যদি আপনার চামড়া সামান্য কেটে যায় বা ছড়ে যায় এবং ক্ষতটি খুব গভীর না হয়, তবে সাধারণত টিটেনাস টিকার প্রয়োজন হয় না, যদি আপনার আগের টিকা নেওয়া থাকে। তবে ক্ষতস্থানটি ভালোভাবে পরিষ্কার করা এবং জীবাণুমুক্ত রাখা জরুরি।
খ. গভীর বা ছিদ্রযুক্ত ক্ষত (Deep Puncture Wounds)
যদি কোনো ধারালো বস্তু (যেমন – নোংরা পেরেক, ছুঁচ, কাঁচ) আপনার ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে বা ছিদ্র তৈরি করে, তবে টিটেনাস টিকা নেওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এই ধরনের ক্ষত টিটেনাস ব্যাকটেরিয়ার প্রবেশের জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে।
গ. নোংরা বা ময়লাযুক্ত ক্ষত (Contaminated Wounds)
যদি ক্ষতস্থানটি মাটি, পশুর মলমূত্র বা অন্য কোনো নোংরা জিনিসের সংস্পর্শে আসে, তবে টিটেনাস হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এমনিতেও যদি ক্ষতে মাটি বা ময়লা ঢোকে, তাহলে অনেক সময় ডাক্তার টিটেনাস টিকা দিয়ে থাকেন।
ঘ. পোড়া বা পচনশীল ক্ষত (Burns or Crushing Injuries)
গুরুতর পোড়া বা মাংস থেঁতলে যাওয়া জাতীয় আঘাত থেকেও টিটেনাস হওয়ার ঝুঁকি থাকে, কারণ এই ধরনের ক্ষত টিটেনাস ব্যাকটেরিয়ার বংশবৃদ্ধির জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে পারে।
২. টিটেনাস টিকার ডোজ এবং সময়সীমা
সাধারণত, টিটেনাস টিকা একটি নির্দিষ্ট সময়সূচী মেনে নিতে হয়। তবে আঘাতের সময় এটি জরুরি ভিত্তিতে বা বুস্টার ডোজ হিসেবে দেওয়া হয়।
ক. প্রাথমিক টিকাদান (Primary Vaccination Series)
শিশুদের সাধারণত DTap (Diphtheria, Tetanus, and Pertussis) টিকার অংশ হিসেবে টিটেনাস টিকা দেওয়া হয়। কয়েকটি ডোজের মাধ্যমে এই প্রাথমিক সুরক্ষা তৈরি হয়।
খ. বুস্টার ডোজ (Booster Shots)
প্রাথমিক টিকাদান সম্পন্ন হওয়ার পর, টিটেনাস রোগের সুরক্ষা বজায় রাখার জন্য নির্দিষ্ট সময় পর পর বুস্টার ডোজ নেওয়া প্রয়োজন। সাধারণত, প্রতি ১০ বছর অন্তর একটি টিটেনাস বুস্টার ডোজ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য: যদি আপনার শেষ টিটেনাস টিকা কবে নিয়েছেন তা মনে না থাকে, এবং আপনার যদি কোনো গভীর বা নোংরা ক্ষত হয়, তবে ডাক্তার সাধারণত একটি বুস্টার ডোজ দিয়ে দিতে পরামর্শ দেন। কারণ, টিটেনাস টিকা নিলে তেমন কোনো গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় না, কিন্তু না নিলে রোগটি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।
৩. বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে টিটেনাস ইনজেকশন
কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতে টিটেনাস ইনজেকশন নেওয়া জরুরি হয়ে পড়ে, যা আঘাত ছাড়াও অন্য কারণে হতে পারে:
ক. গর্ভাবস্থা (Pregnancy)
গর্ভবতী মহিলাদের জন্য টিটেনাস টিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থার শেষ দিকে (সাধারণত ২৮-৩৬ সপ্তাহের মধ্যে) Tdap (Tetanus, Diphtheria, and Pertussis) টিকা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এটি কেবল মাকেই নয়, নবজাতক শিশুকেও পারটুসিস (Whooping Cough) রোগের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়, যা শিশুদের জন্য খুব মারাত্মক হতে পারে।
প্রো টিপ: গর্ভাবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সব টিকা সময়মতো নেওয়া মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
খ. বিদেশ ভ্রমণ (International Travel)
আপনি যদি এমন কোনো দেশে ভ্রমণ করতে যান যেখানে জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নত নয় বা টিটেনাসের প্রকোপ বেশি, তবে ভ্রমণের আগে আপনার টিটেনাস টিকা আপডেট করে নেওয়া উচিত।
গ. স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য (Healthcare Workers)
যারা স্বাস্থ্যসেবার সাথে যুক্ত, তাদের নিয়মিত টিটেনাস টিকা আপডেট রাখা প্রয়োজন, কারণ তারা প্রায়শই বিভিন্ন ধরণের আঘাত বা কন্টামিনেটেড উপাদানের সংস্পর্শে আসেন।
টিটেনাস টিকার প্রকারভেদ
টিটেনাস টিকা সাধারণত বিভিন্ন ফর্মুলেশনে পাওয়া যায়। সবচেয়ে পরিচিত কিছু হলো:
- DTaP (Diphtheria, Tetanus, and acellular Pertussis): এটি সাধারণত শিশুদের জন্য ব্যবহৃত হয়।
- Tdap (Tetanus, Diphtheria, and acellular Pertussis): এটি কিশোর-কিশোরী এবং প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য একটি বুস্টার ডোজ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
- Td (Tetanus and Diphtheria): এটিও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য একটি বুস্টার ডোজ, যা Tdap টিকার বিকল্প হতে পারে যদি পারটুসিস উপাদানের প্রয়োজন না হয়।
আপনার জন্য কোন টিকাটি উপযুক্ত, তা একজন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীই আপনাকে সর্বোত্তমভাবে বলতে পারবেন।
কখন টিটেনাস ইনজেকশনের প্রয়োজন নাও হতে পারে?
সব আঘাতের জন্য টিটেনাস ইনজেকশনের প্রয়োজন হয় না। কিছু ক্ষেত্রে, যদি আপনার আঘাত খুবই সামান্য হয় এবং আপনি নিশ্চিত থাকেন যে আপনার শেষ টিটেনাস টিকা ১০ বছরের মধ্যেই নেওয়া হয়েছে, তবে হয়তো নতুন করে টিকা নেওয়ার প্রয়োজন হবে না।
সাধারণত, যদি আপনার সর্বশেষ টিটেনাস টিকা ১০ বছরের কম সময় আগে নেওয়া হয়ে থাকে এবং আঘাতটি তেমন গুরুতর না হয় (যেমন – সামান্য ছড়ে যাওয়া বা ছোটখাটো কেটে যাওয়া), তবে ডাক্তার হয়তো আপনাকে টিকা নাও দিতে পারেন। তবে, এটি সম্পূর্ণভাবে ডাক্তারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে।
টিটেনাস ইনজেকশন নেওয়ার সময় কিছু বিষয় মনে রাখবেন
টিটেনাস ইনজেকশন নেওয়ার আগে ও পরে কিছু বিষয় জেনে রাখা ভালো:
- আগের টিকার রেকর্ড: আপনার যদি আগের টিটেনাস টিকার কোনো রেকর্ড থাকে, তা ডাক্তারের সাথে শেয়ার করুন। এতে তিনি আপনার টিকার প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারবেন।
- স্বাস্থ্যগত অবস্থা: আপনার যদি কোনো বিশেষ স্বাস্থ্যগত সমস্যা থাকে বা কোনো ওষুধ খান, তবে তা অবশ্যই ডাক্তারকে জানান।
- অ্যালার্জি: কোনো টিকার প্রতি আপনার যদি পূর্ববর্তী অ্যালার্জি থাকে, তা অবশ্যই ডাক্তারকে জানান।
টিটেনাস টিকার সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে টিটেনাস টিকা নেওয়ার পর কোনো গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় না। তবে কিছু সাধারণ এবং হালকা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে, যেমন:
- টিকা নেওয়ার স্থানে ব্যথা, লালচে ভাব বা কিছুটা ফুলে যাওয়া।
- হালকা জ্বর।
- মাথা ব্যথা।
- গা গুলানো বা ক্লান্তি।
এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো সাধারণত ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ঠিক হয়ে যায়। তবে যদি কোনো অস্বাভাবিক বা গুরুতর প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, যেমন – শ্বাসকষ্ট, দ্রুত হৃদস্পন্দন, গলা বা জিহ্বা ফুলে যাওয়া, তবে অবিলম্বে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
টিকে (TD) এবং টিড্যাপ (TDAP) টিকার মধ্যে পার্থক্য
অনেকেই টিটেনাস টিকার প্রকারভেদ নিয়ে দ্বিধায় থাকেন। এখানে একটি সহজ তালিকা দেওয়া হলো:
টিকার নাম | উপাদান | কার জন্য প্রযোজ্য | বিশেষ টিপ্পনী |
---|---|---|---|
Td (Tetanus, Diphtheria) | টিটেনাস (Tetanus) এবং ডিপথেরিয়া (Diphtheria) | প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য বুস্টার ডোজ। | সাধারণত প্রতি ১০ বছর পর পর নেওয়া হয়। |
Tdap (Tetanus, Diphtheria, acellular Pertussis) | টিটেনাস (Tetanus), ডিপথেরিয়া (Diphtheria), এবং পারটুসিস (Pertussis) | কিশোর-কিশোরী ও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য, বিশেষ করে যারা পূর্বে Tdap নেননি। গর্ভাবস্থায়ও এটি দেওয়া হয়। | পারটুসিস (হুপিং কাশি) রোগের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত সুরক্ষা দেয়। |
টিটেনাস ইনজেকশনের প্রয়োজনীয়তা: একটি চিত্র
টিটেনাস রোগের প্রতিরোধ ব্যবস্থা বোঝার জন্য একটি চিত্র সহায়ক হতে পারে:
(কাল্পনিক চিত্র: মাটি বা ধুলোবালিতে থাকা টিটেনাস ব্যাকটেরিয়া ত্বকের গভীরে ক্ষত দিয়ে প্রবেশ করছে)
এই চিত্রটি দেখায় যে, টিটেনাস সৃষ্টিকারী `Clostridium tetani` জীবাণু মাটি, ধুলো বা প্রাণীর মলে থাকতে পারে। যখন কোনো ধারালো বা নোংরা জিনিস ত্বকে আঘাত করে, তখন এই জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে। তাই আঘাত লাগলে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
টিটেনাস টিকার ডোজ ও সময়সূচী (সাধারণ নির্দেশিকা)
এখানে একটি সাধারণ নির্দেশিকা দেওয়া হলো, তবে আপনার জন্য সুনির্দিষ্ট সময়সূচী একজন ডাক্তারই ঠিক করে দেবেন।
শিশুদের জন্য প্রাথমিক টিকাদান (DTaP)
- প্রথম ডোজ: ২ মাস বয়সে
- দ্বিতীয় ডোজ: ৪ মাস বয়সে
- তৃতীয় ডোজ: ৬ মাস বয়সে
- চতুর্থ ডোজ: ১৫-১৮ মাস বয়সে
- পঞ্চম ডোজ: ৪-৬ বছর বয়সে
কিশোর-কিশোরী ও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য বুস্টার ডোজ
- Tdap: ১১-১২ বছর বয়সে একটি Tdap ডোজ।
- Td: প্রতি ১০ বছরে একটি Td (বা Tdap) বুস্টার ডোজ।
গুরুত্বপূর্ণ: এই সময়সূচী অঞ্চলভেদে বা স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা অনুযায়ী কিছুটা ভিন্ন হতে পারে। সবসময় আপনার শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ বা ডাক্তারের পরামর্শ অনুসরণ করুন।
বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে টিটেনাস টিকা
বাংলাদেশে জাতীয় টিকাদান কর্মসূচির (Expanded Programme on Immunization – EPI) আওতায় শিশুদের DTaP টিকা দেওয়া হয়। এটি মায়ের কাছ থেকে পাওয়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ছাড়াও শিশুকে টিটেনাস ও ডিপথেরিয়া রোগের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়।
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য, বিশেষ করে যারা গর্ভবতী, তাদের Tdap টিকা দেওয়ার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। সাধারণ আঘাতের ক্ষেত্রে, সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা ক্লিনিকগুলোতে টিটেনাস ইনজেকশন (Td) পাওয়া যায়।
প্রাসঙ্গিক ওয়েবসাইট: বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে জাতীয় টিকাদান কর্মসূচি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়। https://dghs.gov.bd/
টিটেনাস প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
টিকা নেওয়ার পাশাপাশি কিছু অভ্যাস টিটেনাস প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে:
- স্বাস্থ্যকর পরিবেশ: বাড়িতে ও কর্মক্ষেত্রে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন।
- সাবধানে চলাফেরা: খালি পায়ে বা অনুপযুক্ত জুতো পরে হাঁটার সময় সাবধান থাকুন, বিশেষ করে যেখানে ধারালো বস্তু বা নোংরা থাকার সম্ভাবনা থাকে।
- ক্ষত যত্ন: যেকোনো ক্ষত হলে তা সঙ্গে সঙ্গে পরিষ্কার জল ও সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। প্রয়োজনে অ্যান্টিসেপটিক ব্যবহার করুন।
- নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: আপনার টিকার রেকর্ড সম্পর্কে অবগত থাকুন এবং ডাক্তারের পরামর্শে সময়মতো বুস্টার ডোজ নিন।
FAQ: আপনার কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর
প্রশ্ন ১: টিটেনাস ইনজেকশন কতদিন পর পর দিতে হয়?
উত্তর: সাধারণত, প্রাথমিক টিকাদান সম্পন্ন হওয়ার পর প্রতি ১০ বছর অন্তর একটি বুস্টার ডোজ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে আঘাতের ধরনের ওপর নির্ভর করে ডাক্তার এর আগেও টিকা দিতে পারেন।
প্রশ্ন ২: ছোটবেলায় টিটেনাস টিকা না নিলে কি বড়বেলায় দেওয়া যায়?
উত্তর: হ্যাঁ, আপনি বড়বেলাতেও টিটেনাস টিকা নিতে পারেন। এক্ষেত্রে ডাক্তার আপনার স্বাস্থ্য অবস্থা বিবেচনা করে টিকার ডোজ ঠিক করে দেবেন।
প্রশ্ন ৩: টিটেনাস ইনজেকশন কি শুধু আঘাত পেলেই দিতে হয়?
উত্তর: প্রধানত আঘাত পেলেই এর প্রয়োজন হয়। তবে গর্ভাবস্থায় এবং নির্দিষ্ট স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকলে ডাক্তারের পরামর্শে সময় অনুযায়ী নেওয়া উচিত।
প্রশ্ন ৪: নোংরা জায়গায় কাজ করলে কি টিটেনাস হওয়ার ঝুঁকি বেশি?
উত্তর: হ্যাঁ, মাটি, ধুলোবালি বা পশুর মলের সংস্পর্শে এলে টিটেনাস ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই এ ধরনের কাজ করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
প্রশ্ন ৫: গর্ভাবস্থায় টিটেনাস টিকা নেওয়া কি নিরাপদ?
উত্তর: হ্যাঁ, গর্ভাবস্থায় (বিশেষ করে শেষ তিন মাসে) Tdap টিকা Mã ও শিশুর জন্য খুবই নিরাপদ এবং গুরুত্বপূর্ণ। এটি ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ীই দেওয়া হয়।
প্রশ্ন ৬: টিটেনাস ইনজেকশন নেওয়ার পর কি কোনো ব্যথা হয়?
উত্তর: টিকা দেওয়ার স্থানে হালকা ব্যথা, লালচে ভাব বা ফোলাভাব হতে পারে, যা সাধারণত ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সেরে যায়।
উপসংহার
টিটেনাস একটি মারাত্মক রোগ হলেও, সঠিক সময়ে টিটেনাস ইনজেকশন বা টিকা নেওয়ার মাধ্যমে এটি সহজেই প্রতিরোধ করা যায়। আঘাত লাগলে আতঙ্কিত না হয়ে, আপনার শেষ টিকা কবে নিয়েছেন তা মনে করার চেষ্টা করুন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ডাক্তারের পরামর্শ নিন। নিয়মিত টিকা আপডেটের মাধ্যমে আপনি এবং আপনার পরিবার এই রোগ থেকে সুরক্ষিত থাকতে পারেন। স্বাস্থ্যই সম্পদ, তাই নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নিন এবং সঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।