ডান চোখ লাফালে কি হয়? এটি সাধারণত নির্দোষ হলেও, কিছু ক্ষেত্রে শারীরিক সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে। এর কারণ, লক্ষণ এবং ঘরোয়া প্রতিকার জেনে নিন।
Table of Contents
- ডান চোখ লাফালে কি হয়: কুসংস্কার বনাম বিজ্ঞান
- ডান চোখ লাফালে কি হয়: সম্ভাব্য কারণসমূহ
- ডান চোখ লাফালে কি হয়: লক্ষণ ও কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন
- ডান চোখ লাফালে কি হয়: ঘরোয়া প্রতিকার ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন
- প্রতিকার ও চিকিৎসার বিকল্প
- কখন আই টুইচিং গুরুতর হতে পারে?
- অতিরিক্ত তথ্যের জন্য কিছু রিসোর্স
- প্রায়শ জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ)
- উপসংহার
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
- ডান চোখ লাফানো বেশিরভাগ সময় দুশ্চিন্তার নয়।
- শারীরিক বা মানসিক চাপ থেকে এটি হতে পারে।
- পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম জরুরি।
- ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল পরিহার করুন।
- চোখের ডাক্তারের পরামর্শ নিন যদি লক্ষণ স্থায়ী হয়।
আমাদের মধ্যে অনেকেই ডান চোখ লাফালে কী হয় তা নিয়ে চিন্তিত থাকেন। এটি কি কোনো অশুভ লক্ষণ, নাকি এর পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে? আসলে, ডান চোখ লাফালে কি হয়, তা নিয়ে সমাজে নানা কুসংস্কার প্রচলিত থাকলেও, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এর পেছনে সাধারণ কিছু কারণ থাকে। এটা হতে পারে ক্লান্তি, দুশ্চিন্তা, বা জীবনযাত্রার কিছু অভ্যাসের ফল। আবার কিছু ক্ষেত্রে এটি চোখের কোনো সমস্যার ইঙ্গিতও দিতে পারে। ভয় না পেয়ে, আসুন আজ আমরা এই বিষয়টি সহজভাবে জেনে নিই এবং জেনে নিই এর সম্ভাব্য কারণ ও প্রতিকার। আমাদের আজকের এই লেখাটি আপনাকে ডান চোখ লাফানোর পেছনের রহস্য জানতে এবং এর মোকাবিলা করতে সাহায্য করবে।
ডান চোখ লাফালে কি হয়: কুসংস্কার বনাম বিজ্ঞান
ডান চোখ লাফালে কি হয়, এই প্রশ্নটি অনেকের মনেই উঁকি দেয়। আমাদের সংস্কৃতিতে, বিশেষ করে বাঙালি সমাজে, শরীরের কোনো অঙ্গের এমন অস্বাভাবিক নড়াচড়াকে অনেক সময় ভবিষ্যতের কোনো ঘটনার প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। ডান চোখ লাফালে ভালো কিছু হবে এমন একটি ধারণা প্রচলিত আছে। তবে, আধুনিক বিজ্ঞান এই ধরনের কুসংস্কারকে সমর্থন করে না। বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে, চোখের পাতা বা চোখের পেশীর অনৈচ্ছিক সংকোচনকেই আই টুইচিং (Eye Twitching) বা মায়োকিমিয়া (Myokymia) বলা হয়। এটি সাধারণত চোখের উপরের বা নিচের পাতায় হয়ে থাকে এবং এটি ব্যথাহীন, তবে কিছুটা অস্বস্তিকর হতে পারে। এই লাফানো কয়েক সেকেন্ড থেকে শুরু করে কয়েক মিনিট বা এমনকি কয়েক দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি নিজে থেকেই সেরে যায় এবং এর জন্য বিশেষ কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না।
আই টুইচিং বা মায়োকিমিয়া কী?
আই টুইচিং একটি সাধারণ ঘটনা যা প্রায় অনেকেরই হয়ে থাকে। এটি মূলত চোখের পাতায় থাকা ছোট ছোট পেশীগুলোর অনিয়মিত সংকোচন। এই সংকোচনগুলো আমরা অনুভব করতে পারি এবং দেখতেও পারি, যেখানে চোখের পাতাটি কাঁপতে থাকে। সাধারণত এটি একটি চোখের পাতায় হয়, তবে কিছু ক্ষেত্রে উভয় চোখেই হতে পারে। তবে ডান চোখ লাফালে কি হয়, এই প্রশ্নের উত্তর শুধু কুসংস্কারেই সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে কিছু বৈজ্ঞানিক কারণও রয়েছে যা আমাদের জীবনযাত্রার সাথে জড়িত।
ডান চোখ লাফালে কি হয়: সম্ভাব্য কারণসমূহ
ডান চোখ লাফালে কি হয়, তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা খুঁজলে আমরা কিছু সাধারণ কারণ খুঁজে পাই। এই কারণগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। নিচে কয়েকটি প্রধান কারণ আলোচনা করা হলো:
১. ক্লান্তি ও অপর্যাপ্ত ঘুম
আমাদের শরীর যখন পর্যাপ্ত বিশ্রাম পায় না, তখন পেশীগুলো ক্লান্ত হয়ে পড়ে। চোখের পেশীগুলোও এর ব্যতিক্রম নয়। তাই, আপনি যদি রাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে না ঘুমান বা অতিরিক্ত শারীরিক বা মানসিক পরিশ্রম করেন, তবে ডান চোখ লাফাতে পারে। অপর্যাপ্ত ঘুম চোখের পেশীগুলোকে শিথিল হওয়ার সময় দেয় না, যার ফলে তারা অনিয়ন্ত্রিতভাবে সংকুচিত হতে শুরু করে।
২. মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা
বর্তমান জীবনে স্ট্রেস বা মানসিক চাপ একটি বড় সমস্যা। যখন আমরা কোনো কারণে উদ্বিগ্ন থাকি বা মানসিক চাপে ভুগি, তখন আমাদের শরীর থেকে কিছু বিশেষ হরমোন নিঃসৃত হয় যা পেশীগুলোকে উত্তেজিত করতে পারে। এই উত্তেজনা ডান চোখ লাফানোর একটি অন্যতম কারণ হতে পারে। বিশেষ করে, পরীক্ষার চাপ, কাজের চাপ, বা ব্যক্তিগত সম্পর্কের টানাপোড়েন থেকে সৃষ্ট দুশ্চিন্তা Eyes Twitching-এর জন্য দায়ী হতে পারে।
৩. অতিরিক্ত ক্যাফেইন বা অ্যালকোহল গ্রহণ
চা, কফি, বা অন্যান্য ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় অতিরিক্ত পরিমাণে পান করলে তা আমাদের স্নায়ুতন্ত্রকে উত্তেজিত করতে পারে। এই উত্তেজনা চোখের পেশীগুলোতেও প্রভাব ফেলতে পারে, যার ফলে ডান চোখ লাফানো শুরু হতে পারে। একইভাবে, অ্যালকোহল বা ধূমপানও Eyes Twitching-এর কারণ হতে পারে।
৪. চোখের ক্লান্তি (Eye Strain)
দীর্ঘ সময় ধরে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট বা মোবাইল ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখের উপর চাপ পড়ে। এই Eye Strain-এর কারণে চোখের আশেপাশে থাকা পেশীগুলো ক্লান্ত হয়ে যায় এবং অনিয়মিতভাবে সংকুচিত হতে পারে। এমনকি, কম আলোতে বা অতিরিক্ত আলোতেও পড়াশোনা বা কাজ করলে চোখের উপর চাপ পড়তে পারে।
৫. চোখের শুষ্কতা (Dry Eyes)
আমাদের চোখ সব সময় একটি পাতলা অশ্রু স্তর দ্বারা সিক্ত থাকে। যদি কোনো কারণে চোখের অশ্রু গ্রন্থি পর্যাপ্ত পরিমাণে জল তৈরি করতে না পারে, তবে চোখ শুষ্ক হয়ে যায়। এই শুষ্কতা চোখের পাতায় অস্বস্তি তৈরি করতে পারে এবং তা লাফানোর কারণ হতে পারে। পরিবেশগত কারণ যেমন – গরম, শুষ্ক আবহাওয়া, এসি বা হিটারের ব্যবহার, বা কিছু নির্দিষ্ট ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকেও চোখ শুষ্ক হতে পারে।
৬. পুষ্টির অভাব
শরীরে কিছু নির্দিষ্ট ভিটামিন ও খনিজ লবণের অভাব Eyes Twitching-এর কারণ হতে পারে। বিশেষ করে, ম্যাগনেসিয়াম (Magnesium) এবং পটাসিয়াম (Potassium)-এর মতো খনিজ উপাদানের অভাব পেশী সংকোচনকে প্রভাবিত করতে পারে। ভিটামিন বি১২ (Vitamin B12)-এর অভাবও অনেক সময় স্নায়বিক সমস্যা তৈরি করে যা Eyes Twitching-এর জন্য দায়ী হতে পারে।
৭. অ্যালার্জি
চোখের অ্যালার্জি হলে চোখ চুলকায়, লাল হয়ে যায় এবং জল পড়ে। এই চুলকানির কারণে আমরা প্রায়ই চোখ ডলে ফেলি, যা চোখের পাতায় প্রদাহ তৈরি করতে পারে। এই প্রদাহ বা অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া হিসেবেও ডান চোখ লাফালে কি হয়, তার উত্তর হতে পারে এই কারণটি।
৮. কিছু স্নায়বিক রোগ (বিরল ক্ষেত্রে)
খুব বিরল ক্ষেত্রে, কিছু স্নায়বিক রোগ যেমন – ব্লেফারোস্পাজম (Blepharospasm) বা হেমীফেশিয়াল স্পাজম (Hemifacial Spasm) Eyes Twitching-এর কারণ হতে পারে। তবে এই রোগগুলো অনেক বেশি গুরুতর এবং এদের সাথে চোখের পাতা বন্ধ হয়ে যাওয়া, মুখের পেশী অনৈচ্ছিক সংকোচন ইত্যাদি অন্যান্য উপসর্গও দেখা যায়।
ডান চোখ লাফালে কি হয়: লক্ষণ ও কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন
ডান চোখ লাফালে কি হয়, এর সাথে কিছু সাধারণ লক্ষণও জড়িত থাকে। নিচে কিছু সাধারণ লক্ষণ উল্লেখ করা হলো:
- চোখের পাতায় হালকা কাঁপুনি বা ঝাঁকুনি অনুভব করা।
- চোখের পাতা অনিয়ন্ত্রিতভাবে বন্ধ হয়ে আসা।
- চোখ দিয়ে জল পড়া বা হালকা চুলকানি।
- চোখ লাল হয়ে যাওয়া।
- চোখে কিছু পড়েছে এমন অস্বস্তি।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে, এই লক্ষণগুলো নিজে থেকেই চলে যায়। তবে, কিছু পরিস্থিতিতে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। যেমন:
- যদি চোখের পাতা লাফানো একাধারে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলতে থাকে।
- যদি চোখের পাতা লাফানোর ফলে আপনার চোখের পাতা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে আসে এবং আপনি চাইলেও খুলতে না পারেন।
- যদি আপনার চোখের পাতা লাফানোর সাথে সাথে মুখের অন্যান্য অংশের পেশীও লাফাতে শুরু করে।
- যদি আপনার মুখের একপাশ বেঁকে যায় বা আপনার চোখের পাতা ও মুখের ত্বকে লালচে ফুসকুড়ি দেখা দেয়।
- যদি আপনার চোখে কোনো অস্বাভাবিক স্রাব দেখা যায় বা চোখের পাতা লাফানোয় ব্যথা হয়।
এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে দেরি না করে একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ বা নিউরোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। তারা সঠিক রোগ নির্ণয় করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন।
ডান চোখ লাফালে কি হয়: ঘরোয়া প্রতিকার ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন
ডান চোখ লাফালে কি হয়, এই প্রশ্নের উত্তর যদি সাধারণ কারণগুলোর মধ্যে পড়ে, তবে কিছু ঘরোয়া উপায় অবলম্বনের মাধ্যমে আপনি স্বস্তি পেতে পারেন। এগুলো অনেকটাই আপনার জীবনযাত্রার পরিবর্তনের উপর নির্ভরশীল।
১. পর্যাপ্ত ঘুম
প্রতিদিন রাতে ৭-৮ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন ঘুম নিশ্চিত করুন। একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস গড়ে তুলুন। আরামদায়ক পরিবেশ ঘুমের জন্য সহায়ক।
২. মানসিক চাপ কমানো
মানসিক চাপ কমাতে যোগাসন, ধ্যান (meditation), গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম বা নিজের পছন্দের কোনো শখের চর্চা করতে পারেন। এমন কিছু করুন যা আপনাকে আনন্দ দেয় এবং মানসিক শান্তি এনে দেয়।
৩. ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল পরিহার
চা, কফি, কোলা এবং অন্যান্য ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় গ্রহণের পরিমাণ কমান। সম্ভব হলে এগুলো এড়িয়ে চলুন। একইভাবে, অ্যালকোহল পান থেকে বিরত থাকুন।
৪. চোখের বিশ্রাম
কম্পিউটার বা মোবাইল ব্যবহারের সময় প্রতি ২০ মিনিট পর পর ২০ সেকেন্ডের জন্য ২০ ফুট দূরের কোনো বস্তুর দিকে তাকিয়ে থাকুন (20-20-20 Rule)। এটি চোখের উপর চাপ কমাতে সাহায্য করে।
৫. চোখের শুষ্কতা মোকাবিলা
যদি চোখ শুষ্ক মনে হয়, তবে ডাক্তারের পরামর্শে আর্টিফিশিয়াল টিয়ার (Artificial Tears) বা চোখের ড্রপ ব্যবহার করতে পারেন। খুব বেশি গরম বা এসিযুক্ত পরিবেশে বেশিক্ষণ থাকবেন না।
৬. পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ
আপনার খাদ্যতালিকায় ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম এবং ভিটামিন বি সমৃদ্ধ খাবার যোগ করুন। সবুজ শাকসবজি, ফল, বাদাম, দই, এবং মাছ আপনার জন্য উপকারী হতে পারে।
৭. মাস্কিং (Masking)
যখন চোখ লাফানো শুরু হয়, তখন আলতোভাবে চোখের পাতা বন্ধ করে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিন। অথবা, খুব হালকা গরম বা ঠান্ডা কাপড় দিয়ে চোখ সেঁক দিতে পারেন।
Pro Tip: প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করুন (কমপক্ষে ৮ গ্লাস)। এটি শরীরের সার্বিক কার্যকারিতা বজায় রাখে এবং চোখের শুষ্কতা কমাতেও সাহায্য করে।
প্রতিকার ও চিকিৎসার বিকল্প
যদি ঘরোয়া উপায়ে সমস্যার সমাধান না হয়, তবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু চিকিৎসা পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে।
চিকিৎসার ধরন | বর্ণনা | উপকারিতা | সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া |
---|---|---|---|
ওষুধ (Medication) | ডাক্তার কিছু ক্ষেত্রে পেশী শিথিল করার জন্য বা স্নায়ু শান্ত করার জন্য ওষুধ দিতে পারেন। | দ্রুত আরাম পাওয়া যায়। | কিছু ওষুধে ঘুম ঘুম ভাব বা মাথা ঘোরা হতে পারে। |
বোটক্স ইনজেকশন (Botox Injection) | খুব গুরুতর ক্ষেত্রে, বোটক্স ইনজেকশন চোখের পেশীগুলোকে কিছু সময়ের জন্য শিথিল করে দেয়। | দীর্ঘস্থায়ী উপশম দেয়। | চোখ ফোলা বা সাময়িক দৃষ্টি ঝাপসা হতে পারে। |
সার্জারি (Surgery) | খুবই বিরল এবং গুরুতর ক্ষেত্রে, যখন অন্য কোনো চিকিৎসায় কাজ হয় না, তখন সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে। | সমস্যা স্থায়ীভাবে সমাধান হতে পারে। | অস্ত্রোপচারের ঝুঁকি থাকে। |
মনে রাখবেন, কোনো প্রকার ওষুধ বা চিকিৎসার আগে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
কখন আই টুইচিং গুরুতর হতে পারে?
অধিকাংশ ক্ষেত্রে আই টুইচিং একটি নিরীহ সমস্যা। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে এটি অন্য কোনো গুরুতর রোগের লক্ষণ হতে পারে। যদি নিচের উপসর্গগুলো দেখা দেয়, তবে সতর্ক হওয়া উচিত:
- চোখের পাতা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাওয়া: যদি আপনার চোখের পাতা এমনভাবে বন্ধ হয়ে যায় যে আপনি চাইলেও তা খুলতে পারছেন না, তবে এটি ব্লেফারোস্পাজমের লক্ষণ হতে পারে।
- ফেসিয়াল স্পাজম: যদি চোখের পাতার লাফানোর সাথে সাথে মুখের অন্য পেশীগুলোও অনৈচ্ছিক সংকোচন করে, তবে তা হেমীফেশিয়াল স্পাজমের ইঙ্গিত দেয়।
- চোখের লালচে ভাব, ফোলা বা ব্যথা: যদি চোখের লাফানোর সাথে চোখ লাল হয়ে যায়, ফুলে যায় বা ব্যথা হয়, তবে এটি চোখের কোনো ইনফেকশন বা অন্য গুরুতর সমস্যার কারণে হতে পারে।
- চোখের পাতা ঝুলে যাওয়া (Ptosis): কিছু স্নায়বিক রোগ চোখের পাতা ঝুলে যাওয়ার কারণ হতে পারে, যা চোখের দৃষ্টি আংশিকভাবে আড়াল করে দেয়।
- দৃষ্টির পরিবর্তন: যদি আপনি চোখের পাতা লাফানোর পাশাপাশি দৃষ্টিতে কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করেন, তবে দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
এই ধরনের উপসর্গগুলো উপেক্ষা করা উচিত নয়। সঠিক সময়ে ডাক্তারের পরামর্শ নিলে মারাত্মক রোগ থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব।
অতিরিক্ত তথ্যের জন্য কিছু রিসোর্স
চোখের স্বাস্থ্য ও আই টুইচিং সম্পর্কে আরও জানতে আপনি নিচের নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো দেখতে পারেন:
- National Eye Institute (NEI) – চোখের স্বাস্থ্য বিষয়ক একটি নির্ভরযোগ্য মার্কিন সরকারি সংস্থা।
- Mayo Clinic – একটি বিশ্ববিখ্যাত স্বাস্থ্য বিষয়ক ওয়েবসাইট।
- World Health Organization (WHO) – বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, যারা চক্ষু বিষয়ক বিভিন্ন তথ্যের নির্ভরযোগ্য উৎস।
প্রায়শ জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ)
প্রশ্ন ১: ডান চোখ লাফালে কি সত্যিই খারাপ কিছু হয়?
উত্তর: বেশিরভাগ সময় ডান চোখ লাফালে খারাপ কিছু হয় না। এটি সাধারণত ক্লান্তি, মানসিক চাপ বা জীবনযাত্রার অভ্যাসের ফল। তবে, যদি এটি দীর্ঘস্থায়ী হয় বা অন্য কোনো উপসর্গ দেখা দেয়, তবে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
প্রশ্ন ২: কতক্ষণ ধরে চোখ লাফানো স্বাভাবিক?
উত্তর: সাধারণত, চোখের পাতা লাফানো কয়েক সেকেন্ড থেকে কয়েক মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। যদি এটি কয়েক সপ্তাহ ধরে চলতে থাকে, তবে তা চিন্তার কারণ হতে পারে।
প্রশ্ন ৩: বাম চোখ লাফালে কি হয়?
উত্তর: বাম চোখ লাফালেও এর কারণ ও প্রতিকার ডান চোখ লাফানোর মতোই। কুসংস্কার অনুযায়ী বাম চোখ লাফালে খারাপ কিছু হওয়ার কথা বলা হলেও, বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এর কারণগুলো একই রকম।
প্রশ্ন ৪: ঘরোয়া কি কি উপায়ে চোখ লাফানো বন্ধ করা যায়?
উত্তর: পর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক চাপ কমানো, ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল পরিহার, চোখের বিশ্রাম, পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ এবং পর্যাপ্ত জল পান করার মাধ্যমে চোখ লাফানো কমানো যেতে পারে।
প্রশ্ন ৫: চোখ লাফানোর জন্য কি ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত?
উত্তর: যদি চোখের পাতা লাফানো স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় ধরে থাকে, এর সাথে অন্য কোনো উপসর্গ (যেমন – চোখের পাতা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়া, মুখের অন্য অংশ লাফানো, চোখে ব্যথা বা লাল হওয়া) দেখা দেয়, তবে ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত।
প্রশ্ন ৬: বাচ্চারা কেন বেশি লাফায়?
উত্তর: অনেক সময় ছোট বাচ্চাদের চোখের পাতা লাফানো সাধারণ ব্যাপার। তাদের চোখের পেশীগুলোও সংবেদনশীল থাকে। তবে, যদি তা অতিরিক্ত হয়, তবে শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।
উপসংহার
ডান চোখ লাফালে কি হয়, এই নিয়ে আমাদের মনে যে ভয় বা কৌতূহল থাকে, আশা করি তা কিছুটা হলেও দূর হয়েছে। মনে রাখবেন, এই সাধারণ সমস্যাটি আপনার জীবনযাত্রার কিছু ছোটখাটো পরিবর্তনের মাধ্যমেই মোকাবিলা করা সম্ভব। পর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক শান্তি, এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস আপনাকে এই অস্বস্তি থেকে মুক্তি দিতে পারে। যদি কখনো মনে হয় যে সমস্যাটি গুরুতর বা দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে, তবে দেরি না করে একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। নিজের চোখের খেয়াল রাখুন, সুস্থ থাকুন।