চোখ উঠলে করণীয় কি? ঘরোয়া টোটকা ও ডাক্তারের পরামর্শে দ্রুত সারিয়ে তুলুন।
Key Takeaways
- চোখ ওঠা একটি সাধারণ সংক্রামক রোগ।
- পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা রোগ প্রতিরোধে জরুরি।
- প্রাকৃতিক উপায়েও চোখ ওঠা কমানো যায়।
- কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন তা জানুন।
- অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন।
চোখ ওঠা বা কনজাংটিভাইটিস (Conjunctivitis) একটি পরিচিত সমস্যা যা প্রায় সকল বয়সের মানুষের মধ্যেই দেখা যায়। হঠাৎ করেই চোখ লাল হয়ে যাওয়া, চুলকানি, পানি পড়া, অস্বস্তি– এসব সাধারণ লক্ষণ দেখে অনেকেই ঘাবড়ে যান। কিন্তু সঠিক তথ্য জানা থাকলে এবং কিছু নিয়ম মেনে চললে এই সমস্যা থেকে দ্রুত মুক্তি পাওয়া সম্ভব। চোখ উঠলে করণীয় কি, কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত এবং ঘরোয়াভাবে কীভাবে দ্রুত সেরে ওঠা যায়, তা নিয়ে আপনার মনে অনেক প্রশ্ন থাকতে পারে। এই গাইডটি আপনাকে ধাপে ধাপে সেই সব প্রশ্নের সহজ ও কার্যকর সমাধান দেবে, যাতে আপনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন।
Table of Contents
চোখ ওঠা কেন হয়? কারণগুলো জানুন
চোখ ওঠা বা কনজাংটিভাইটিস হওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে। কারণভেদে এর চিকিৎসা ও প্রতিরোধের উপায় ভিন্ন হয়। তাই প্রথমে এর মূল কারণগুলো জেনে নেওয়া জরুরি।
ব্যাকটেরিয়াল কনজাংটিভাইটিস (Bacterial Conjunctivitis)
এটি এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণে হয়। এই ধরণের চোখ ওঠায় চোখ থেকে ঘন পুঁজ বা হলুদাভ স্রাব বের হয়। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর চোখের পাতা জোড়া লেগে থাকতে পারে। এটি বেশ ছোঁয়াচে এবং সঠিক অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ বা মলম দিয়ে এর চিকিৎসা করা হয়।
ভাইরাল কনজাংটিভাইটিস (Viral Conjunctivitis)
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাধারণ ঠান্ডার ভাইরাসের (যেমন অ্যাডেনোভাইরাস) সংক্রমণের ফলে এটি হয়। এর প্রধান লক্ষণ হলো চোখ লাল হওয়া, চোখে জল পড়া এবং হালকা চুলকানি। অনেক সময় এটি এক চোখ থেকে অন্য চোখে ছড়িয়ে পড়ে।
অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিস (Allergic Conjunctivitis)
ধুলো, বালি, পশুর লোম, পরাগ রেণু বা কোনো নির্দিষ্ট রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে এলে চোখে অ্যালার্জি হতে পারে। এখানে চোখ লাল হওয়ার সাথে সাথে তীব্র চুলকানি এবং পানি পড়ার প্রবণতা বেশি থাকে। এটি সাধারণত ছোঁয়াচে নয়।
অন্যান্য কারণ
এছাড়াও, চোখে ধুলো বালি বা কোনো foreign body প্রবেশ করলে, চোখের পাতায় প্রদাহ (Blepharitis) হলে, অথবা জন্মগতভাবে কিছু সমস্যা থেকেও চোখ ওঠার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
চোখ উঠলে কি কি লক্ষণ দেখা যায়?
চোখ ওঠার লক্ষণগুলো একেকজনের ক্ষেত্রে একেক রকম হতে পারে, তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ প্রায় সবার মধ্যেই দেখা যায়। আপনি যদি নিচের লক্ষণগুলো খেয়াল করেন, তবে খুব সম্ভবত আপনার চোখ উঠেছে:
- চোখ লাল হয়ে যাওয়া (Redness)।
- চোখে চুলকানি বা অস্বস্তি (Itching or Discomfort)।
- চোখ থেকে জল পড়া (Watery Discharge)।
- চোখ থেকে পুঁজ বা ঘন স্রাব বের হওয়া (Pus-like Discharge)।
- চোখের পাতা ফুলে যাওয়া (Swollen Eyelids)।
- চোখের পাতা সকালে জোড়া লেগে থাকা (Crusting of Eyelids)।
- আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা (Photophobia)।
- চোখে কিছু একটা পড়ার অনুভূতি (Gritty Sensation)।
এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
চোখ উঠলে করণীয় কি: ধাপে ধাপে সমাধান
চোখ উঠলে ভয় না পেয়ে কিছু সহজ নিয়ম মেনে চললে এবং সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করলে দ্রুত আরোগ্য লাভ করা সম্ভব। নিচে চোখ উঠলে করণীয় কিছু জরুরি পদক্ষেপ আলোচনা করা হলো:
১. চোখ পরিষ্কার রাখুন
চোখ ওঠা অবস্থায় চোখ পরিষ্কার রাখা সবচেয়ে বেশি জরুরি। এতে সংক্রমণ ছড়াতে পারে না এবং চোখে আরাম পাওয়া যায়।
- একটি পরিষ্কার নরম কাপড় বা তুলার প্যাড নিন।
- পরিষ্কার গরম পানি (সহনীয় মাত্রায়) দিয়ে সেটি ভিজিয়ে নিন।
- আলতো করে চোখের পাতা মুছে নিন। চোখের কোণা থেকে শুরু করে বাইরের দিকে মুছুন।
- প্রতিবার ব্যবহারের জন্য আলাদা কাপড় বা প্যাড ব্যবহার করুন, অথবা তুলা ব্যবহার করলে প্রতিবার নতুন তুলা নিন।
- এক চোখ মোছার পর অন্য চোখ মোছার জন্য নতুন কাপড় বা তুলা ব্যবহার করুন।
২. চোখে হাত দেওয়া থেকে বিরত থাকুন
চোখ চুলকালে অনেকেই অজান্তেই চোখে হাত দিয়ে ফেলেন। এটি পুরোপুরি এড়িয়ে চলুন। চোখে হাত দিলে বা ঘষলে ইনফেকশন আরও ছড়াতে পারে এবং জটিলতা বাড়তে পারে।
৩. হাত ধোয়ার অভ্যাস করুন
চোখ ওঠা একটি ছোঁয়াচে রোগ। তাই নিজের এবং অন্যের সুরক্ষার জন্য ঘন ঘন হাত ধোয়া অত্যন্ত জরুরি। সাবান ও পানি দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোবেন, অথবা অ্যালকোহল-বেসড হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন।
৪. টাওয়েল, বালিশ ইত্যাদি আলাদা রাখুন
চোখ ওঠা অবস্থায় নিজের ব্যবহৃত তোয়ালে, রুমাল, বালিশের কভার, চশমা ইত্যাদি অন্যদের জিনিস থেকে আলাদা রাখুন। এটি পরিবারের অন্য সদস্যদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়ানো রোধ করবে।
৫. কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার বন্ধ করুন
আপনি যদি কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করেন, তবে চোখ ওঠা পুরোপুরি সেরে না যাওয়া পর্যন্ত এটি ব্যবহার করা বন্ধ করুন। কন্টাক্ট লেন্স চোখে পরলে তা চোখে আরও অস্বস্তি বাড়াতে পারে এবং সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। পুরনো লেন্স ফেলে দিন এবং নতুন লেন্স ব্যবহার শুরু করুন।
৬. মেকআপ এড়িয়ে চলুন
চোখ ওঠা অবস্থায় চোখের মেকআপ (যেমন কাজল, আইলাইনার, মাসকারা) ব্যবহার করা একেবারেই উচিত নয়। এতে চোখে আরও বেশি জ্বালাপোড়া হতে পারে এবং ইনফেকশন বাড়তে পারে। চোখ সেরে যাওয়ার পর পুরনো makeup products ফেলে দিয়ে নতুন makeup products ব্যবহার করা ভালো।
৭. ঠান্ডা বা গরম সেঁক দিন
চোখের অস্বস্তি ও ফোলা কমাতে ঠান্ডা বা গরম সেঁক কার্যকর হতে পারে।
- ঠান্ডা সেঁক: একটি পরিষ্কার কাপড়ে বরফ মুড়ে বা ঠান্ডা পানি ভিজিয়ে আলতো করে চোখে লাগান। এটি চুলকানি কমাতে সাহায্য করে।
- গরম সেঁক: হালকা গরম পানিতে কাপড় ভিজিয়ে আলতো করে চোখে লাগান। এটি চোখের পাতা খুলে দিতে এবং পুঁজ বের হতে সাহায্য করতে পারে, বিশেষ করে যদি ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হয়ে থাকে।
Pro Tip: ঠান্ডা বা গরম সেঁক দেওয়ার সময় অবশ্যই পরিষ্কার কাপড় ব্যবহার করুন এবং একেক চোখের জন্য আলাদা কাপড় নিন, যাতে সংক্রমণ ছড়িয়ে না পড়ে।
ঘরোয়া উপায়ে চোখ ওঠা সারানোর চেষ্টা
অনেক সময় সাধারণ ঘরোয়া উপায়েও চোখ ওঠা থেকে আরাম পাওয়া যায়, বিশেষ করে যদি তা অ্যালার্জির কারণে হয় বা খুব হালকা ইনফেকশন থাকে। তবে মনে রাখবেন, গুরুতর ক্ষেত্রে ঘরোয়া উপায় সবসময় যথেষ্ট নয়।
১. টি ব্যাগ ব্যবহার
ঠান্ডা করা টি ব্যাগ (বিশেষ করে গ্রিন টি বা ক্যামোমাইল টি) চোখে লাগালে তা প্রদাহ এবং চুলকানি কমাতে সাহায্য করে। টি ব্যাগে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান আরাম দেয়।
- প্রথমে একটি টি ব্যাগ গরম পানিতে ভিজিয়ে নিন।
- এরপর সেটি চেপে অতিরিক্ত পানি বের করে ঠান্ডা হতে দিন।
- ঠান্ডা টি ব্যাগটি বন্ধ চোখের উপর ১০-১৫ মিনিট রাখুন।
- সতর্কতা: টি ব্যাগ যেন চোখে সরাসরি না লাগে।
২. অ্যালোভেরা জেল
অ্যালোভেরার জেল প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল গুণ সম্পন্ন। এটি চোখে আরাম দিতে পারে।
- একটি তাজা অ্যালোভেরা পাতা থেকে জেল বের করে নিন।
- পরিষ্কার তুলার সাহায্যে খুব সাবধানে চোখের পাতার উপর লাগান (চোখের ভেতরে যেন না যায়)।
- ১৫-২০ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
৩. ক্যাস্টর অয়েল (Castor Oil)
ক্যাস্টর অয়েলের অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। তবে এটি ব্যবহারের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন, কারণ এটি সবার জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে।
- এক ফোঁটা ক্যাস্টর অয়েল নিন।
- একটি পরিষ্কার তুলার বার (cotton bud) দিয়ে চোখের পাপড়ির গোড়ায় সাবধানে লাগান।
- ব্যবহারের পর তুলার বারটি ফেলে দিন।
সতর্কতা: সরাসরি চোখে ক্যাস্টর অয়েল দেবেন না।
৪. মধু (Honey)
মধুর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ রয়েছে। তবে এটি সবসময় ব্যবহার না করাই ভালো, কারণ এতে অ্যালার্জির ঝুঁকি থাকতে পারে। যদি ব্যবহার করতে চান, তবে অবশ্যই শতভাগ খাঁটি মধু ব্যবহার করুন এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন?
অধিকাংশ ক্ষেত্রে চোখ ওঠা বা কনজাংটিভাইটিস নিজে থেকেই সেরে যায়। তবে কিছু লক্ষণে অবশ্যই দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
জরুরি ভিত্তিতে ডাক্তার দেখান যদি:
- চোখ ব্যথার সাথে চোখে দেখতে অসুবিধা হয়।
- আলোর দিকে তাকাতে খুব বেশি সমস্যা হয় (Photophobia)।
- দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে যায়।
- চোখ থেকে সবুজ বা হলুদাভ ঘন পুঁজ বের হয় এবং তা দিনে দিনে বাড়তে থাকে।
- শিশুদের চোখ ওঠে এবং তারা কান্নাকাটি করে বা অস্বস্তি বোধ করে।
- আপনার যদি আগে থেকেই চোখের কোনো রোগ থাকে (যেমন গ্লুকোমা, কর্নিয়াল আলসার)।
- চোখ ওঠা কয়েক দিনের মধ্যে না কমে বরং বাড়তে থাকে।
- চোখের পাতা অতিরিক্ত ফুলে যায় এবং চোখ খোলা মুশকিল হয়ে যায়।
এই লক্ষণগুলো গুরুতর ইনফেকশনের ইঙ্গিত দেয়, যার জন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ ও সঠিক চিকিৎসা প্রয়োজন।
চোখ ওঠার প্রকারভেদ ও চিকিৎসা
চোখ ওঠার কারণ ভেদে এর চিকিৎসাও ভিন্ন হয়ে থাকে। নিচে কিছু সাধারণ প্রকারভেদ ও তাদের চিকিৎসা আলোচনা করা হলো:
চোখ ওঠার প্রকারভেদ | সাধারণ লক্ষণ | চিকিৎসা পদ্ধতি | জরুরি অবস্থা |
---|---|---|---|
ভাইরাল কনজাংটিভাইটিস | চোখ লাল, পানি পড়া, হালকা চুলকানি। | সাধারণত নিজে থেকে সেরে যায়। চোখে আরামের জন্য ঠান্ডা সেঁক। প্রয়োজনে কৃত্রিম অশ্রু (artificial tears)। | যদি শ্বাসকষ্ট বা অন্য কোনো উপসর্গ দেখা দেয়। |
ব্যাকটেরিয়াল কনজাংটিভাইটিস | ঘন হলুদ বা সবুজ পুঁজ, সকালে পাতা লেগে থাকা। | অ্যান্টিবায়োটিক আই ড্রপ/মলম। চোখ পরিষ্কার রাখা। | যদি পুঁজ বের হওয়া না কমে বা দেখতে সমস্যা হয়। |
অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিস | তীব্র চুলকানি, পানি পড়া, উভয় চোখে একসাথে হয়। | অ্যান্টিহিস্টামিনিক আই ড্রপ, অ্যালার্জির ঔষধ। কারণ শনাক্ত করে এড়িয়ে চলা। | যদি চুলকানি বা ফোলা খুব বেশি হয় এবং সাধারণ ঔষধে না কমে। |
অন্যান্য কারণ (Foreign Body, Irritation) | নির্দিষ্ট কারণের উপর নির্ভর করে। | কারণ অনুযায়ী চিকিৎসা। চোখে কিছু ঢুকলে তা বের করে দেওয়া। | যদি চোখে আঘাত লাগে বা কোনো ধারালো জিনিস ঢোকে। |
কখন অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করবেন?
চোখ ওঠা যদি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণে হয়, তবেই ডাক্তার অ্যান্টিবায়োটিক আই ড্রপ বা মলম প্রেস্ক্রাইব করবেন। ভাইরাল কনজাংটিভাইটিসের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে না। তাই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা উচিত নয়।
কখন স্টেরয়েড ড্রপ ব্যবহার করা উচিত?
কিছু ক্ষেত্রে, বিশেষ করে অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিস বা গুরুতর প্রদাহের জন্য ডাক্তার স্টেরয়েড ড্রপ দিতে পারেন। তবে স্টেরয়েড ড্রপ ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন, কারণ এটি চোখের চাপ বাড়াতে পারে বা অন্য সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাই এটি অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শে এবং তত্ত্বাবধানে ব্যবহার করতে হবে।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য: চোখ ওঠা এবং প্রতিরোধ
চোখ ওঠা একটি সংক্রামক রোগ হওয়ায় এর প্রতিরোধ অত্যন্ত জরুরি। নিচে কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা দেওয়া হলো:
প্রতিরোধের উপায়
- নিয়মিত হাত ধোয়া: এটি সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
- চোখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকা: চোখে হাত দেওয়া বা ঘষা থেকে নিজেকে বাঁচান।
- ব্যক্তিগত জিনিস আলাদা রাখা: তোয়ালে, রুমাল, কসমেটিকস ইত্যাদি শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন।
- কন্টাক্ট লেন্সের সঠিক ব্যবহার: লেন্স ব্যবহারের নিয়ম মেনে চলুন এবং নোংরা লেন্স ব্যবহার করবেন না।
- অ্যালার্জেন এড়িয়ে চলা: যদি অ্যালার্জির কারণে চোখ ওঠে, তবে যে জিনিসপত্রে অ্যালার্জি হয় তা এড়িয়ে চলুন।
- শিশুদের সচেতন করা: শিশুদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব সম্পর্কে শেখান।
চোখ ওঠা সম্পর্কে কিছু ভুল ধারণা
অনেকের মধ্যেই চোখ ওঠা নিয়ে কিছু ভুল ধারণা প্রচলিত আছে, যেমন:
- সূর্যের আলোয় তাকালে বা মোবাইল/কম্পিউটার বেশি দেখলে চোখ ওঠে: এটি সম্পূর্ণ ভুল। চোখের উপর চাপ পড়লে অস্বস্তি হতে পারে, কিন্তু সরাসরি চোখ ওঠার কারণ নয়।
- কিছু বিশেষ ফল বা সবজি খেলে দ্রুত সেরে যায়: ঘরোয়া উপায়ে হালকা আরাম মিলতে পারে, কিন্তু মূল চিকিৎসা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ীই হওয়া উচিত।
- গরম পানি দিয়ে মুখ ধুলে চোখ ভালো হয়: এতে সাময়িক আরাম মিললেও, এটি স্থায়ী সমাধান নয়।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: শিশুদের চোখ ওঠা
শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় কম থাকে, তাই তাদের চোখ ওঠার সম্ভাবনা বেশি। শিশুদের চোখ উঠলে বিশেষ যত্ন নেওয়া দরকার।
- শিশুদের চোখ বেশি চুলকাতে পারে, তাই তাদের হাত বাঁধা বা শান্ত রাখার চেষ্টা করুন।
- বারবার তাদের হাত পরিষ্কার করে দিন।
- যদি শিশু স্কুলে যায়, তবে তাকে স্কুল থেকে ছুটি দিন যতক্ষণ না সে সেরে উঠছে, যাতে অন্যদের মধ্যে রোগ না ছড়ায়।
- শিশুদের জন্য ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ড্রপ বা ওষুধ ব্যবহার করবেন না।
উপসংহার
চোখ ওঠা একটি সাধারণ সমস্যা হলেও, এটিকে অবহেলা করা উচিত নয়। সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিলে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চললে এই সমস্যা থেকে দ্রুত মুক্তি পাওয়া সম্ভব। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, চোখে হাত না দেওয়া এবং প্রয়োজনে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া—এই নিয়মগুলো মেনে চললে আপনি নিজেও যেমন সুস্থ থাকতে পারবেন, তেমনই আপনার প্রিয়জনদেরও সুরক্ষিত রাখতে পারবেন। মনে রাখবেন, আপনার চোখের যত্ন আপনার নিজের হাতেই।
আরও জানতে:
FAQs: চোখ ওঠা নিয়ে কিছু সাধারণ প্রশ্ন
প্রশ্ন ১: চোখ ওঠা কি ছোঁয়াচে?
উত্তর: হ্যাঁ, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চোখ ওঠা (বিশেষ করে ভাইরাল ও ব্যাকটেরিয়াল কনজাংটিভাইটিস) অত্যন্ত ছোঁয়াচে। তাই আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকা এবং ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা জরুরি।
প্রশ্ন ২: কতদিন পর্যন্ত চোখ ওঠা সংক্রামক থাকে?
উত্তর: এটি নির্ভর করে চোখ ওঠার কারণের উপর। ভাইরাল কনজাংটিভাইটিস সাধারণত লক্ষণ দেখা দেওয়ার দিন থেকে শুরু করে ২-৩ সপ্তাহ পর্যন্ত সংক্রামক থাকতে পারে। ব্যাকটেরিয়াল ক্ষেত্রে, অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসা শুরু করার ২৪ ঘণ্টা পর থেকে সংক্রামক থাকে না। অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিস ছোঁয়াচে নয়।
প্রশ্ন ৩: চোখ ওঠার জন্য কি ঘরোয়া টোটকা ব্যবহার করা নিরাপদ?
উত্তর: হালকা ক্ষেত্রে ঘরোয়া টোটকা আরাম দিতে পারে। তবে, কোনো ঘরোয়া টোটকা ব্যবহার করার আগে সেটি নিরাপদ কিনা এবং আপনার চোখের জন্য উপযুক্ত কিনা, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া ভালো। চোখের ভেতরে কোনো কিছু সরাসরি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
প্রশ্ন ৪: আমি কি চোখে চশমা পরতে পারব যখন আমার চোখ উঠেছে?
উত্তর: হ্যাঁ, তবে চশমার ফ্রেম যেন পরিষ্কার থাকে তা নিশ্চিত করুন। চশমা নিয়মিত পরিষ্কার করুন এবং অন্য কারো সাথে শেয়ার করবেন না। স্পর্শকাতরতার কারণে কেউ কেউ এই সময় চশমা পরতে অস্বস্তি বোধ করতে পারেন।
প্রশ্ন ৫: শিশুদের চোখ ওঠা হলে কি স্কুলে পাঠানো উচিত?
উত্তর: না। যতক্ষণ পর্যন্ত শিশুর চোখ ওঠা সংক্রামক থাকবে, ততক্ষণ তাকে স্কুলে পাঠানো উচিত নয়। এটি ক্লাসের অন্য শিশুদের মধ্যে রোগ ছড়িয়ে পড়া রোধ করবে। ডাক্তার সাধারণত একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত স্কুলে না যাওয়ার পরামর্শ দেন।
প্রশ্ন ৬: চোখ ওঠা পুরোপুরি সারতে কত দিন সময় লাগে?
উত্তর: এটিও নির্ভর করে কারণের উপর। ভাইরাল কনজাংটিভাইটিস সাধারণত ১-৩ সপ্তাহের মধ্যে সেরে যায়। ব্যাকটেরিয়াল ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসায় কয়েক দিনের মধ্যে উন্নতি দেখা যায়। অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিস কারণ দূর করলে দ্রুত সেরে যায়।