এলার্জি কি খেলে ভালো হয়? জেনে নিন সহজ খাবার নির্দেশিকা
এলার্জি হলে কী খেলে আরাম পাবেন, তা অনেকেই জানেন না। এই নির্দেশিকা আপনাকে এলার্জি কমাতে সহায়ক খাবার ও এড়িয়ে চলার মতো খাবার সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেবে।
Table of Contents
- এলার্জি কেন হয় এবং কখন ডাক্তারের পরামর্শ প্রয়োজন?
- এলার্জি কি খেলে ভালো হয়: উপকারী খাবারের তালিকা
- এলার্জি কি খেলে বাড়ে? এড়িয়ে চলার মতো খাবার
- এলার্জি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক কিছু প্রাকৃতিক উপায়
- গবেষণার আলোকে কিছু তথ্য
- এলার্জি ব্যবস্থাপনার জন্য একটি নমুনা খাদ্যতালিকা (Sample Diet Plan for Allergy Management)
- প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ)
- উপসংহার
মূল বিষয়বস্তু
- এলার্জি উপশমে সহায়ক খাবারগুলো জানুন।
- কোন খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিত, তা শিখুন।
- প্রাকৃতিক উপায়ে এলার্জি নিয়ন্ত্রণের উপায় জানুন।
- স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন।
- চিকিৎসকের পরামর্শের গুরুত্ব বুঝুন।
এলার্জি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি সাধারণ সমস্যা। হঠাৎ করে চুলকানি, ফুসকুড়ি, হাঁচি বা শ্বাসকষ্ট – এলার্জির নানা রূপ। কিন্তু এলার্জি হলে কী খাবেন আর কী খাবেন না, এই নিয়ে অনেকের মনেই বেশ দ্বিধা থাকে। সঠিক খাবার বেছে নিতে পারলে এলার্জির প্রকোপ অনেকটাই কমানো সম্ভব। আবার কিছু খাবার এলার্জিকে বাড়িয়েও দিতে পারে। তাই এলার্জি কি খেলে ভালো হয়, এই প্রশ্নটির সঠিক উত্তর জানা খুব জরুরি। এই লেখায় আমরা সহজ ভাষায় এলার্জি-বান্ধব খাবার এবং এড়িয়ে চলার মতো খাবারগুলো নিয়ে আলোচনা করব, যাতে আপনি সুস্থ থাকতে পারেন। কোন খাবার আপনার জন্য উপযুক্ত, তা জানতে এই গাইডলাইনটি আপনাকে সাহায্য করবে।
এলার্জি কেন হয় এবং কখন ডাক্তারের পরামর্শ প্রয়োজন?
এলার্জি হলো আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার একটি অতি-প্রতিক্রিয়া। যখন শরীর কোনো সাধারণ উপাদান, যেমন – ধুলো, পরাগ, নির্দিষ্ট কিছু খাবার বা ওষুধের প্রতি অতিরিক্ত সংবেদনশীল হয়ে পড়ে, তখন এলার্জির সৃষ্টি হয়। এই উপাদানগুলোকে এলার্জেন (allergen) বলা হয়। রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভুল করে এই এলার্জেনগুলোকে ক্ষতিকর মনে করে এবং সেগুলোর বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করে। এর ফলে হিস্টামিন (histamine) নামক রাসায়নিক পদার্থ নিঃসৃত হয়, যা এলার্জির উপসর্গ সৃষ্টি করে।
এলার্জির সাধারণ উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- ত্বকে চুলকানি, লালচে ভাব বা ফুসকুড়ি (Rash)
- হাঁচি, নাক দিয়ে পানি পড়া বা নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া
- চোখ লাল হওয়া, চুলকানি বা পানি পড়া
- কাশ বা শ্বাসকষ্ট
- পেটে ব্যথা, বমি বা ডায়রিয়া (বিশেষ করে খাবারের এলার্জির ক্ষেত্রে)
কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন?
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এলার্জির উপসর্গ হালকা থাকে এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস বা ঘরোয়া উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে এলার্জি গুরুতর হতে পারে এবং জীবনঘাতীও হতে পারে। তাই নিচের লক্ষণগুলো দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত:
- শ্বাস নিতে মারাত্মক কষ্ট হওয়া
- মুখ, ঠোঁট, জিহ্বা বা গলা ফুলে যাওয়া
- মাথা ঘোরা বা জ্ঞান হারানো
- দ্রুত হৃদস্পন্দন
- অমিতব্যয়ী বমি বা ডায়রিয়া
- শরীরের বড় অংশে তীব্র চুলকানি ও ফুসকুড়ি
প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় এবং সঠিক চিকিৎসার জন্য একজন এলার্জি বিশেষজ্ঞ (Allergist) বা জেনারেল ফিজিশিয়ানের পরামর্শ নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। তারা এলার্জির কারণ খুঁজে বের করতে এবং উপযুক্ত চিকিৎসার নির্দেশনা দিতে পারেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) সূত্রে জানা যায়, এলার্জি বিশ্বব্যাপী একটি ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্য সমস্যা।
এলার্জি কি খেলে ভালো হয়: উপকারী খাবারের তালিকা
এলার্জি হলে কিছু খাবার আছে যা আপনার শরীরের প্রদাহ কমাতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। এই খাবারগুলো সাধারণত পুষ্টিকর এবং এলার্জি-বিরোধী গুণসম্পন্ন হয়ে থাকে।
১. ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার:
ভিটামিন সি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং হিস্টামিনের প্রভাব কমাতে সাহায্য করে।
- ফল: আমলকী, কমলা, লেবু, বাতাবি লেবু (grapefruit), স্ট্রবেরি, কিউই।
- সবজি: ব্রোকলি, ক্যাপসিকাম (বিশেষ করে লাল ও হলুদ), টমেটো, পালং শাক।
প্রো টিপ: প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় তাজা এক গ্লাস লেবুর পানি পান করুন। এটি শরীরকে ডিটক্সিফাই করে এবং ভিটামিন সি সরবরাহ করে।
২. ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার:
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড প্রদাহ কমাতে অত্যন্ত কার্যকর। এটি এলার্জির কারণে হওয়া প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া হ্রাস করতে সাহায্য করে।
- মাছ: স্যামন, ম্যাকেরেল, সার্ডিন, ইলিশ মাছ।
- অন্যান্য উৎস: ফ্ল্যাক্সসিড (তিসি বীজ), চিয়া বীজ, আখরোট (walnuts)।
৩. প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার:
অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো থাকলে তা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। প্রোবায়োটিক অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য বজায় রাখে।
- দুগ্ধজাত পণ্য: দই (টক দই), মাঠা।
- অন্যান্য: কিমচি (kimchi), সাওয়ারক্রাউট (sauerkraut), কিছু ফারমেন্টেড (fermented) খাবার।
প্রো টিপ: টক দই নিয়মিত খেলে তা হজমশক্তি বাড়ায় এবং অন্ত্রের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে সাহায্য করে।
৪. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার:
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের ফ্রি র্যাডিকেলসের (free radicals) বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং কোষের ক্ষতি কমায়। এলার্জির উপসর্গ কমাতেও এগুলো সহায়ক।
- সবুজ শাকসবজি: পালং শাক, কেল (kale), পুঁই শাক।
- ফল: বেরি জাতীয় ফল (ব্লুবেরি, রাস্পবেরি), আপেল, ডালিম (pomegranate)।
- অন্যান্য: গ্রিন টি, হলুদ, রসুন।
৫. ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার:
ফাইবার হজমতন্ত্রকে সুস্থ রাখে এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে।
- শস্য: ওats (ওটস), বার্লি, ব্রাউন রাইস।
- ফল ও সবজি: আপেল, কলা, বিভিন্ন ধরনের ডাল, মিষ্টি আলু।
৬. হাইড্রেটিং খাবার:
পর্যাপ্ত পানি পান শরীরকে সতেজ রাখে এবং শ্লেষ্মা পাতলা করতে সাহায্য করে, যা এলার্জির সময় স্বস্তি দেয়।
- পানি: প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করুন।
- অন্যান্য: তরমুজ, শসা, ডাবের পানি, ফলের রস (চিনি ছাড়া)।
এলার্জি কি খেলে বাড়ে? এড়িয়ে চলার মতো খাবার
কিছু খাবার আছে যা এলার্জির উপসর্গ বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাই এলার্জি প্রবণ ব্যক্তিদের এই খাবারগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকা উচিত এবং সম্ভব হলে এড়িয়ে চলা উচিত।
১. প্রক্রিয়াজাত খাবার (Processed Foods):
এগুলোতে প্রায়শই কৃত্রিম রং, প্রিজারভেটিভস এবং অতিরিক্ত চিনি বা লবণ থাকে, যা এলার্জিকে বাড়িয়ে দিতে পারে।
- প্যাকেটজাত স্ন্যাকস, ফাস্ট ফুড, চিনিযুক্ত পানীয়, ক্যানড ফুড।
২. অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার:
অতিরিক্ত চিনি শরীরের প্রদাহ বাড়াতে পারে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দিতে পারে।
- মিষ্টি, কেক, পেস্ট্রি, কোমল পানীয়।
৩. কিছু সাধারণ এলার্জেনিক খাবার:
ব্যক্তিভেদে এই খাবারগুলো এলার্জির কারণ হতে পারে। আপনার যদি নির্দিষ্ট কোনো খাবারে এলার্জি থাকে, তবে সেটি এড়িয়ে চলুন।
- ডিম: অনেকের, বিশেষ করে শিশুদের ডিমের এলার্জি থাকে।
- বাদাম: কাঠবাদাম, চিনাবাদাম, কাজুবাদাম ইত্যাদি।
- দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য: ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স বা মিল্ক প্রোটিন এলার্জি থাকলে।
- গম ও গ্লুটেন: গ্লুটেন সংবেদনশীলতা থাকলে।
- সয়াবিন: সয়া এলার্জি একটি সাধারণ সমস্যা।
- শেলফিশ: চিংড়ি, কাঁকড়া, শামুক ইত্যাদি।
- কিছু ফল: স্ট্রবেরি, সাইট্রাস ফল (কিছু ক্ষেত্রে)।
গুরুত্বপূর্ণ: আপনার যদি মনে হয় কোনো নির্দিষ্ট খাবারে আপনার এলার্জি হচ্ছে, তাহলে তা হঠাৎ করে বাদ না দিয়ে একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন। তিনি পরীক্ষা করে নিশ্চিত হবেন এবং সঠিক বিকল্প বাতলে দেবেন।
৪. মশলাদার খাবার:
অতিরিক্ত মশলাদার খাবার খেলে কিছু মানুষের শরীর গরম হতে পারে এবং এলার্জির সমস্যা (যেমন: চুলকানি) বাড়তে পারে।
৫. অ্যালকোহল ও ক্যাফেইন:
এই পানীয়গুলো শরীরের ডিহাইড্রেশন বাড়াতে পারে এবং কিছু মানুষের ক্ষেত্রে এলার্জির উপসর্গ বাড়িয়ে দেয়।
এলার্জি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক কিছু প্রাকৃতিক উপায়
খাবারের পাশাপাশি কিছু ঘরোয়া এবং প্রাকৃতিক উপায়ও এলার্জির উপসর্গ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
১. মধু:
স্থানীয় মধু (local honey) খেলে তা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং এলার্জির প্রতি সংবেদনশীলতা কমাতে সাহায্য করতে পারে। প্রতিদিন এক চামচ মধু খেলে উপকার পাওয়া যায়।
সতর্কতা: যারা মধু খেলেও এলার্জি অনুভব করেন, তাদের এটি এড়িয়ে চলা উচিত।
২. আদা:
আদায় রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি (anti-inflammatory) গুণ। এটি এলার্জির কারণে হওয়া প্রদাহ কমাতে খুব কার্যকর।
- শুধু আদা কুচি চিবিয়ে খেতে পারেন।
- আদা চা পান করতে পারেন।
৩. তুলসী পাতা:
তুলসী পাতায় অ্যান্টিভাইরাল (antiviral) এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল (antibacterial) গুণ ছাড়াও প্রদাহরোধী (anti-inflammatory) বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি এলার্জির উপসর্গ যেমন – কাশি, সর্দি কমাতে সাহায্য করে।
- কয়েকটি তাজা তুলসী পাতা চিবিয়ে খেতে পারেন।
- তুলসী পাতা দিয়ে চা বানিয়ে পান করতে পারেন।
৪. অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার:
এতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল গুণ রয়েছে, যা শরীরকে ডিটক্সিফাই করতে এবং এলার্জি সৃষ্টিকারী টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে।
- এক গ্লাস উষ্ণ পানিতে এক বা দুই চামচ অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার মিশিয়ে পান করুন।
প্রো টিপ: এলার্জি বাড়লে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। এটি শরীর থেকে জমে থাকা টক্সিন বের করে দিতে সাহায্য করে।
গবেষণার আলোকে কিছু তথ্য
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এলার্জির ঝুঁকি অনেকাংশে কমাতে পারে। বিশেষ করে, যেসব শিশু ছোটবেলা থেকে ফল, সবজি এবং ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার খায়, তাদের মধ্যে এলার্জি ও অ্যাজমা হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। একটি গবেষণায় (NCBI) দেখা গেছে, ভিটামিন ডি-এর অভাবও এলার্জির সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে। তাই রোদ পোহানো এবং ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করাও গুরুত্বপূর্ণ।
এলার্জি ব্যবস্থাপনার জন্য একটি নমুনা খাদ্যতালিকা (Sample Diet Plan for Allergy Management)
এখানে একটি নমুনা খাদ্যতালিকা দেওয়া হলো, যা এলার্জি রোগীদের জন্য সহায়ক হতে পারে। তবে মনে রাখবেন, এটি কেবল একটি উদাহরণ। আপনার ব্যক্তিগত প্রয়োজন ও এলার্জির ধরনের উপর নির্ভর করে এটি পরিবর্তনযোগ্য।
সকালের নাস্তা (Breakfast):
- ওটস (Oats) ফল ও বাদাম দিয়ে।
- অথবা, দুপুরের খাবারের মতো হালকা সবজির খিচুড়ি।
- অথবা, দুটি ডিম সেদ্ধ (যদি ডিমের এলার্জি না থাকে) সাথে এক টুকরো ব্রাউন ব্রেড।
দুপুরের খাবার (Lunch):
- এক বাটি সবজির খিচুড়ি (সবুজ শাকসবজি, ডাল ইত্যাদি সমৃদ্ধ)।
- অথবা, ব্রাউন রাইস সাথে মাছের ঝোল (তেল ও মশলা কম) এবং সবজি ভাজি।
- অথবা, মুরগির মাংসের হালকা ঝোল (skinless chicken)।
বিকালের নাস্তা (Snack):
- এক গ্লাস তাজা ফলের রস (যেমন: আমলকী, কমলা)।
- অথবা, এক বাটি টক দই।
- অথবা, কিছু বাদাম (যদি এলার্জি না থাকে)।
রাতের খাবার (Dinner):
- হালকা সবজির স্যুপ।
- অথবা, গ্রিলড ফিশ/চিকেন সাথে অল্প সবজি।
- অথবা, রুটি (আটা বা মাল্টিগ্রেইন) সাথে সবজি বা ডাল।
গুরুত্বপূর্ণ: ডায়েট প্ল্যানটি আপনার শরীরের প্রতিক্রিয়া অনুযায়ী সাজিয়ে নিন। কোনো খাবারে অস্বস্তি হলে সেটি বাদ দিন এবং ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।
এলার্জি-বান্ধব খাবার | এলার্জি-বাড়ানো খাবার (সম্ভাব্য) |
---|---|
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল (আমলকী, কমলা) | অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার (মিষ্টি, কোমল পানীয়) |
ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ মাছ (ইলিশ, স্যামন) | প্রক্রিয়াজাত খাবার (ফাস্ট ফুড, প্যাকেজড স্ন্যাকস) |
প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ দই | অতিরিক্ত মশলাদার খাবার |
সবুজ শাকসবজি (পালং শাক) | অ্যালকোহল ও ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় |
ফাইবার সমৃদ্ধ শস্য (ওটস) | নির্দিষ্ট এলার্জেনিক খাবার (যেমন: ডিম, বাদাম, দুধ – ব্যক্তিভেদে) |
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ)
প্রশ্ন ১: এলার্জি হলে কোন ফল খাওয়া উচিত?
উত্তর: এলার্জি হলে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল যেমন – আমলকী, কমলা, বাতাবি লেবু, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ বেরি জাতীয় ফল (ব্লুবেরি, স্ট্রবেরি) খাওয়া যেতে পারে। তবে কারো যদি নির্দিষ্ট কোনো ফলে এলার্জি থাকে, তবে সেটি এড়িয়ে চলতে হবে।
প্রশ্ন ২: এলার্জি কি সম্পূর্ণ নিরাময় যোগ্য?
উত্তর: এলার্জি সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য না হলেও, এটি ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং প্রয়োজনে ঔষধপত্রের মাধ্যমে এলার্জির উপসর্গগুলো নিয়ন্ত্রণ করে স্বাভাবিক জীবনযাপন করা যায়।
প্রশ্ন ৩: খাবারে এলার্জির প্রধান লক্ষণগুলো কী কী?
উত্তর: খাবারে এলার্জির প্রধান লক্ষণগুলো হলো – ত্বকে ফুসকুড়ি বা চুলকানি, মুখ বা গলা ফুলে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট, বমি, ডায়রিয়া, পেটে ব্যথা এবং কিছু ক্ষেত্রে অ্যানাফাইল্যাক্সিস (anaphylaxis) নামক জীবনঘাতী প্রতিক্রিয়া।
প্রশ্ন ৪: এলার্জি কমাতে কি গ্রিন টি পান করা উপকারী?
উত্তর: হ্যাঁ, গ্রিন টি-তে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এলার্জির উপসর্গ কমাতে এবং শরীরের প্রদাহ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে। এটি প্রদাহজনক রাসায়নিকের নিঃসরণ কমিয়ে এলার্জির প্রতিক্রিয়া কমাতে সাহায্য করে।
প্রশ্ন ৫: আমার শিশুর খাবারে এলার্জি আছে, আমি কী করব?
উত্তর: শিশুর খাবারে এলার্জি থাকলে দ্রুত একজন শিশু বিশেষজ্ঞ (Pediatrician) বা এলার্জি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। তিনি সঠিক কারণ নির্ণয় করে একটি সুনির্দিষ্ট খাদ্য পরিকল্পনা তৈরি করে দেবেন। নিজে থেকে কোনো খাবার বাদ দেওয়া বা খাওয়ানো থেকে বিরত থাকুন।
প্রশ্ন ৬: এলার্জি হলে শরীরকে হাইড্রেটেড রাখা কেন জরুরি?
উত্তর: পর্যাপ্ত পানি পান শরীরকে ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করে। এটি এলার্জির সময় জমে থাকা শ্লেষ্মা পাতলা করে বের করে দিতে এবং শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে, যা স্বস্তি দেয়।
উপসংহার
এলার্জি একটি পরিচিত স্বাস্থ্য সমস্যা হলেও, সঠিক জ্ঞান এবং সচেতনতা থাকলে এটি সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। “এলার্জি কি খেলে ভালো হয়” – এই প্রশ্নের সহজ উত্তর হলো, এমন খাবার বেছে নেওয়া যা আপনার শরীরের প্রদাহ কমায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরকে সুস্থ রাখে। ভিটামিন সি, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, প্রোবায়োটিক এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবারগুলো আপনার খাদ্যতালিকায় যোগ করুন। একই সাথে, প্রক্রিয়াজাত খাবার, অতিরিক্ত চিনি এবং যে খাবারগুলোতে আপনার এলার্জি হতে পারে, সেগুলো থেকে দূরে থাকুন। মনে রাখবেন, প্রতিটি মানুষের শরীর ভিন্ন, তাই আপনার জন্য কোন খাবারটি সবচেয়ে ভালো কাজ করছে, তা বোঝার জন্য খেয়াল রাখুন এবং প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন। একটি স্বাস্থ্যকর ও সুষম খাদ্যতালিকা আপনাকে এলার্জির বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং একটি সুস্থ জীবনযাপন করতে সাহায্য করবে।