স্ক্যাবিস বা খোস-পাচড়া একটি অস্বস্তিকর ত্বকের সমস্যা যা চুলকানি এবং ফুসকুড়ির সৃষ্টি করে। এই ছোট পরজীবীটি ত্বকের নিচে বাসা বাঁধে এবং ডিম পাড়ে, যা অসহ্য চুলকানির কারণ হয়। প্রায়শই রাতে এই চুলকানি বেড়ে যায়, যা ঘুমকেও ব্যাহত করতে পারে। তবে আশার কথা হলো, সঠিক চিকিৎসা ও যত্নে স্ক্যাবিস থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। এই ব্লগ পোস্টে আমরা স্ক্যাবিস রোগের ঔষধের নাম এবং সেরা নিরাময়ের উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব, যাতে আপনি দ্রুত এই অস্বস্তি থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
স্ক্যাবিস একটি পরিচিত সমস্যা হলেও, অনেকেই এর সঠিক চিকিৎসা সম্পর্কে তেমন জানেন না। আসুন, আমরা সহজ ভাষায় জেনে নিই স্ক্যাবিস থেকে মুক্তি পাওয়ার কার্যকর উপায়গুলো।
Table of Contents
স্ক্যাবিস রোগ কী?
স্ক্যাবিস হলো এক ধরণের সংক্রমণ যা সারকোপটিস স্ক্যাবি (Sarcoptes scabiei) নামক একটি ক্ষুদ্র মাইট বা উকুন দ্বারা সৃষ্ট হয়। এই পরজীবীগুলো মানুষের ত্বকের উপরের স্তরের নিচে বাসা বাঁধে এবং ডিম পাড়ে। এরা সাধারণত আঙুলের ফাঁকে, কব্জিতে, কনুইয়ের ভাঁজে, বগলে, কোমর বা নিতম্বে বেশি দেখা যায়। এদের ডিম পাড়ার ফলে ত্বকে তীব্র চুলকানি ও ফুসকুড়ির মতো দেখতে চাকা তৈরি হয়। বিশেষ করে রাতে এই চুলকানি বেশি হয়, যা ঘুমকে ব্যাহত করে। এটি অত্যন্ত সংক্রামক এবং ঘনিষ্ঠ শারীরিক যোগাযোগের মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য: স্ক্যাবিস সরাসরি ত্বকের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের মধ্যে ছড়ায়। এটি পোশাক, বিছানার চাদর বা তোয়ালে ভাগাভাগি করার মাধ্যমেও ছড়াতে পারে।
স্ক্যাবিসের লক্ষণসমূহ
স্ক্যাবিসের লক্ষণগুলো খুবই কষ্টদায়ক হতে পারে। প্রাথমিক পর্যায়ে, সংক্রমণ হওয়ার কয়েক সপ্তাহ পর লক্ষণগুলি দেখা দেওয়া শুরু করে। প্রধান লক্ষণগুলো হলো:
- তীব্র চুলকানি: এটি স্ক্যাবিসের প্রধান লক্ষণ। চুলকানি সাধারণত রাতে বেশি হয়, যখন শরীরের তাপমাত্রা বাড়ে।
- ফুসকুড়ি: ত্বকে ছোট ছোট লাল ফুসকুড়ি দেখা যায়, অনেকটা ব্রণ বা পোকামাকড়ের কামড়ের মতো।
- খাঁজ বা রেখা: মাইটগুলো ত্বকের নিচে যে পথে চলাচল করে, সেখানে পাতলা, আঁকাবাঁকা রেখা বা খাঁজ দেখা যেতে পারে। এগুলো সাধারণত আঙুলের ফাঁকে, কব্জিতে বা কনুইয়ের ভাঁজে বেশি দেখা যায়।
- ফোস্কা: কিছু ক্ষেত্রে ত্বকে ছোট ছোট ফোস্কাও হতে পারে।
- ত্বক পুরু ও খসখসে হয়ে যাওয়া: দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণের ক্ষেত্রে আক্রান্ত স্থানটি পুরু ও খসখসে হয়ে যেতে পারে।
যদি আপনার বা আপনার পরিবারের কারও এই লক্ষণগুলো দেখা দেয়, তবে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
স্ক্যাবিস রোগের ঔষধের নাম ও চিকিৎসা
স্ক্যাবিস চিকিৎসার জন্য বেশ কিছু কার্যকর ঔষধ বাজারে পাওয়া যায়। সাধারণত ডাক্তাররা নিম্নলিখিত ঔষধগুলো প্রেসক্রাইব করে থাকেন। ঔষধ ব্যবহারের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত, কারণ আপনার ত্বকের ধরণ ও সংক্রমণের তীব্রতার উপর নির্ভর করে কোন ঔষধটি আপনার জন্য উপযুক্ত হবে।
১. পারমেথ্রিন (Permethrin)
পারমেথ্রিন হলো স্ক্যাবিস চিকিৎসার জন্য প্রথম সারির একটি ঔষধ। এটি একটি টপিকাল (ত্বকের উপর লাগানোর) ক্রিম বা লোশন যা মাইট এবং তাদের ডিমগুলোকে মেরে ফেলে। এটি সাধারণত ঘাড় থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত পুরো শরীরে ভালোভাবে মাখতে হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে মুখের উপরও লাগানো যেতে পারে, তবে চোখ ও মুখ এড়িয়ে চলতে হবে।
- ব্যবহারের নিয়ম: সাধারণত একবার ব্যবহার করলেই এটি কার্যকর হয়। তবে ডাক্তারের পরামর্শে ৭ দিন পর আবার এটি ব্যবহার করা লাগতে পারে।
- কার্যকারিতা: এটি অত্যন্ত কার্যকর এবং নিরাপদ বলে বিবেচিত হয়।
- পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কিছু ক্ষেত্রে ত্বকে হালকা জ্বালাপোড়া বা চুলকানি হতে পারে, যা সাধারণত কিছুদিন পর ঠিক হয়ে যায়।
আরও জানুন: পারমেথ্রিন ক্রিম সাধারণত ৫% ঘনত্বের হয়ে থাকে। এটি তৈরীর জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এর নির্দেশিকাও অনুসরণ করা হয়, যা এর কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। আপনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রয়োজনীয় ঔষধের তালিকা দেখতে পারেন, যেখানে স্ক্যাবিসের চিকিৎসায় পারমেথ্রিনের উল্লেখ রয়েছে।
২. সালফার মলম (Sulfur Ointment)
সালফার মলম স্ক্যাবিসের একটি পুরনো এবং কার্যকর চিকিৎসা। এটিও ত্বকের উপর লাগানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। কিছু ক্ষেত্রে এটি পারমেথ্রিনের চেয়ে কম কার্যকর হলেও, গর্ভবতী মহিলা এবং শিশুদের জন্য এটি একটি নিরাপদ বিকল্প হতে পারে।
- ব্যবহারের নিয়ম: এটি সাধারণত দিনে একবার বা দুবার, তিন দিন ধরে শরীরের নির্দিষ্ট অংশে লাগাতে হয়।
- কার্যকারিতা: মাইট এবং তাদের লার্ভা মারতে সহায়ক।
- পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: এর একটি তীব্র গন্ধ থাকতে পারে এবং এটি তৈলাক্ত হওয়ায় কাপড়ে দাগ লাগাতে পারে।
৩. ইভারমেকটিন (Ivermectin)
ইভারমেকটিন হলো একটি মুখে খাওয়ার ঔষধ যা স্ক্যাবিসের কঠিন ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। এটি টপিকাল ঔষধের চেয়ে বেশি শক্তিশালী এবং যখন ক্রিম ব্যবহার করে কাজ হয় না, তখন এটি ব্যবহার করা হয়।
- ব্যবহারের নিয়ম: সাধারণত নির্দিষ্ট ডোজে একবার বা দুইবার মুখে খেয়ে নিতে হয়।
- কার্যকারিতা: এটি মাইটদের স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে মেরে ফেলে।
- পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: এর ফলে মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব বা পেটের গোলমাল হতে পারে।
কখন ব্যবহার করবেন: যখন পারমেথ্রিন বা সালফার মলম যথেষ্ট কার্যকর হয় না, অথবা যখন শরীরের বেশিরভাগ অংশ আক্রান্ত থাকে, তখন ডাক্তার ইভারমেকটিন সেবনের পরামর্শ দিতে পারেন।
৪. বেঞ্জিল বেঞ্জোয়েট (Benzyl Benzoate)
বেঞ্জিল বেঞ্জোয়েট একটি টপিকাল দ্রবণ বা লোশন যা স্ক্যাবিস চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এটি মাইটদের মেরে ফেলে।
- ব্যবহারের নিয়ম: এটিও শরীরের উপর লাগাতে হয় এবং নির্দিষ্ট সময় পর ধুয়ে ফেলতে হয়।
- কার্যকারিতা: এটি কার্যকর হলেও, এর ফলে ত্বকে জ্বালাপোড়া বা চুলকানি বেশি হতে পারে।
- পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: ত্বকে জ্বালাপোড়া, লালচে ভাব এবং চুলকানি হতে পারে।
অন্যান্য টপিকাল ঔষধ
কিছু ক্ষেত্রে, ডাক্তাররা এগুলি ছাড়াও অন্যান্য টপিকাল ঔষধ যেমন কুথ্রিন (Kuthrin) বা লিনডেন (Lindane) লোশন ব্যবহার করার পরামর্শ দিতে পারেন। তবে লিনডেন লোশন সাধারণত অন্য ঔষধ কাজ না করলে বা বিশেষ পরিস্থিতিতে ব্যবহার করা হয়, কারণ এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে।
ঔষধ ব্যবহারের নির্দেশনা
স্ক্যাবিসের ঔষধ ব্যবহারের সময় কিছু নিয়ম মেনে চলা জরুরি:
- সম্পূর্ণ শরীর ঢেকে রাখা: ঔষধটি ঘাড় থেকে শুরু করে পায়ের পাতা পর্যন্ত সকল ত্বকে ভালোভাবে লাগাতে হবে। নখ, আঙুলের ফাঁক, এবং শরীরের ভাঁজগুলোয় বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।
- শিশুদের জন্য বিশেষ যত্ন: শিশুদের ক্ষেত্রে মুখের উপর এবং চুলের গোঁড়াতেও লাগানোর প্রয়োজন হতে পারে, তবে চোখ ও মুখের ভেতরের অংশ বাদ রাখতে হবে।
- নির্দেশিত সময় পর্যন্ত অপেক্ষা: ঔষধটি কতক্ষণ ত্বকে রাখতে হবে (যেমন ৮-১০ ঘন্টা বা ২৪ ঘন্টা), তা ঔষধের নির্দেশিকা বা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী মেনে চলতে হবে।
- পুনরায় ব্যবহার: অনেক সময় ৭ দিন পর ঔষধটি আবার ব্যবহার করার প্রয়োজন হতে পারে, কারণ প্রথমবার ব্যবহারের সময় ডিম থেকে নতুন মাইট বের হতে পারে।
- পরিচ্ছন্নতা: ঔষধ ব্যবহারের দিন জামাকাপড়, বিছানার চাদর, তোয়ালে ইত্যাদি গরম পানিতে ধুয়ে ফেলতে হবে এবং ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে।
গুরুত্বপূর্ণ: ঔষধ ব্যবহারের পর চুলকানি পুরোপুরি না যাওয়া পর্যন্ত এটি চালিয়ে যেতে হবে। তবে যদি চুলকানি খুব বেশি বেড়ে যায় বা ত্বকে কোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখা দেয়, তবে দ্রুত ডাক্তার দেখান।
ঔষধের নাম | ধরণ | কার্যকারিতা | প্রাপ্যতা |
---|---|---|---|
পারমেথ্রিন (Permethrin) | টপিকাল ক্রিম/লোশন | উচ্চ | প্রেসক্রিপশন এবং ওভার-দ্য-কাউন্টার (OTC) |
সালফার মলম (Sulfur Ointment) | টপিকাল মলম | মাঝারি | ওভার-দ্য-কাউন্টার (OTC) |
ইভারমেকটিন (Ivermectin) | মুখে খাওয়ার ঔষধ | উচ্চ | শুধুমাত্র প্রেসক্রিপশন |
বেঞ্জিল বেঞ্জোয়েট (Benzyl Benzoate) | টপিকাল লোশন/দ্রবণ | মাঝারি থেকে উচ্চ | প্রেসক্রিপশন |
প্রাকৃতিক নিরাময় ও ঘরোয়া পদ্ধতি
কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি স্ক্যাবিসের চুলকানি কমাতে এবং লক্ষণগুলো নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে, এগুলো মূল চিকিৎসার বিকল্প নয়, বরং সহায়ক।
- নিম তেল: নিমের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিভাইরাল গুণাবলী স্ক্যাবিসের মাইটদের মারতে সাহায্য করতে পারে। নিম পাতা সেদ্ধ পানি দিয়ে গোসল করা বা সরাসরি নিম তেল আক্রান্ত স্থানে লাগানো যেতে পারে।
- টি ট্রি অয়েল (Tea Tree Oil): টি ট্রি অয়েলের শক্তিশালী অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি নারকেল তেল বা অন্য কোনো বাহক তেলের সাথে মিশিয়ে আক্রান্ত স্থানে লাগাতে পারেন। তবে সরাসরি ব্যবহার করলে ত্বকে জ্বালাপোড়া হতে পারে।
- অ্যালোভেরা: অ্যালোভেরা ত্বকের জ্বালাপোড়া ও চুলকানি কমাতে সাহায্য করে। এটি স্ক্যাবিসের কারণে হওয়া প্রদাহ কমাতেও সহায়ক।
- ঠান্ডা সেঁক: ঠান্ডা পানি বা বরফ দিয়ে আক্রান্ত স্থান সেঁক দিলে চুলকানি থেকে সাময়িক মুক্তি পাওয়া যায়।
সাবধানতা: যেকোনো ঘরোয়া পদ্ধতি ব্যবহারের আগে নিশ্চিত হন যে আপনার ত্বকে এর কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া হচ্ছে না। সংবেদনশীল ত্বকের জন্য এটি ব্যবহার করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
স্ক্যাবিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ
স্ক্যাবিস একটি সংক্রামক রোগ হওয়ায় এটি প্রতিরোধ করা অত্যন্ত জরুরি। নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করে আপনি স্ক্যাবিস প্রতিরোধ করতে পারেন:
- ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা: নিয়মিত গোসল করা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা স্ক্যাবিস প্রতিরোধে সহায়ক।
- সংক্রমিত ব্যক্তির থেকে দূরত্ব: যদি আপনার পরিচিত কেউ স্ক্যাবিসে আক্রান্ত হন, তবে তার সাথে সরাসরি শারীরিক স্পর্শ এড়িয়ে চলুন।
- কাপড় ও বিছানাপত্র পরিষ্কার রাখা: আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত জামাকাপড়, তোয়ালে, বিছানার চাদর ইত্যাদি গরম পানিতে ভালো করে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে নিন। যা ধোয়া সম্ভব নয়, তা অন্তত ৭২ ঘন্টা একটি প্লাস্টিক ব্যাগে বন্ধ করে রাখুন।
- পরিবারের সকলের চিকিৎসা: যদি পরিবারের কেউ স্ক্যাবিসে আক্রান্ত হন, তবে লক্ষণ থাকুক বা না থাকুক, পরিবারের সকল সদস্যের একযোগে চিকিৎসা করানো উচিত।
- বাসস্থান পরিষ্কার রাখা: ঘর, মেঝে, আসবাবপত্র ইত্যাদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন।
পরিবেশগত নিয়ন্ত্রণ: স্ক্যাবিসের মাইটগুলো শরীরের বাইরে বেশি দিন বাঁচতে পারে না। তবেinfection ছড়ানো বন্ধ করতে, আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত সব জিনিস যেমন – জামাকাপড়, চাদর, তোয়ালে ইত্যাদি গরম জলে (কমপক্ষে ৫০°C বা ১২২°F) ধুয়ে ফেলতে হবে এবং ড্রায়ারে উচ্চ তাপে শুকাতে হবে। যা ধোয়া সম্ভব নয়, সেগুলোকে একটি বায়ুরোধী প্লাস্টিক ব্যাগে অন্তত ৩ দিন (৭২ ঘন্টা) বন্ধ করে রাখতে হবে। দামি আসবাবপত্র বা খেলনার ক্ষেত্রে, সেগুলোকে সম্পূর্ণভাবে সিল করা প্লাস্টিক ব্যাগে ভরে অন্তত ৭ দিন রেখে দিলে মাইটগুলো মারা যাবে।
কখন ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করবেন?
যদিও স্ক্যাবিসের অনেক ঔষধ OTC (ওভার-দ্য-কাউন্টার) পাওয়া যায়, কিছু পরিস্থিতিতে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি:
- ১ বছরের কম বয়সী শিশু: শিশুদের জন্য ঔষধ ব্যবহারের আগে অবশ্যই শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
- গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী মহিলা: গর্ভাবস্থায় বা শিশুকে দুধ খাওয়ানোর সময় যেকোনো ঔষধ ব্যবহারের আগে ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।
- টপিকাল ঔষধে উন্নতি না হলে: যদি ক্রিম বা লোশন ব্যবহারের পরেও চুলকানি বা ফুসকুড়ি না কমে, তবে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।
- সংক্রমণ বেশি হলে: যদি শরীরের বেশিরভাগ অংশ আক্রান্ত হয় বা ফুসকুড়ির সাথে অন্য কোনো ইনফেকশন দেখা দেয়।
- অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে: যদি আপনার কোনো দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে বা আপনি অন্য কোনো ঔষধ গ্রহণ করছেন, তাহলে স্ক্যাবিসের চিকিৎসা শুরু করার আগে ডাক্তারকে জানান।
বিশেষজ্ঞের মতামত: স্ক্যাবিসের চিকিৎসায় দেরি করলে তা গুরুতর রূপ নিতে পারে এবং ত্বকের অন্যান্য সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাই সন্দেহ হলে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ)
স্ক্যাবিস কি নিজে থেকে সেরে যায়?
না, স্ক্যাবিস নিজে থেকে সেরে যায় না। এটি একটি পরজীবী সংক্রমণ এবং এর চিকিৎসার জন্য নির্দিষ্ট ঔষধের প্রয়োজন হয়।
স্ক্যাবিসের ঔষধ কি সব বয়সের জন্য নিরাপদ?
পারমেথ্রিন এবং সালফার মলম সাধারণত শিশুদের এবং গর্ভবতী মহিলাদের জন্য নিরাপদ বলে বিবেচিত হয়, তবে এটি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করা উচিত। ইভারমেকটিন কেবলমাত্র প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য বা নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে শিশুদের জন্য ডাক্তারের পরামর্শে ব্যবহার করা হয়।
কতদিন ধরে স্ক্যাবিসের ঔষধ ব্যবহার করতে হবে?
সাধারণত, স্ক্যাবিসের চিকিৎসা একবারের জন্য দেওয়া হয়। তবে, কিছু ক্ষেত্রে, বিশেষ করে যদি লক্ষণগুলি অব্যাহত থাকে বা পুনরায় দেখা দেয়, তবে ডাক্তার ৭ দিন পর দ্বিতীয়বার ঔষধ ব্যবহারের পরামর্শ দিতে পারেন।
স্ক্যাবিসের চিকিৎসা কি ব্যয়বহুল?
স্ক্যাবিসের চিকিৎসার খরচ নির্ভর করে কোন ঔষধ ব্যবহার করা হচ্ছে এবং কোথায় চিকিৎসা গ্রহণ করা হচ্ছে তার উপর। কিছু টপিকাল ঔষধ এবং ঘরোয়া প্রতিকার তুলনামূলকভাবে সস্তা। তবে, গুরুতর ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শে মুখে খাওয়ার ঔষধ বা বিশেষ চিকিৎসার প্রয়োজন হলে খরচ কিছুটা বাড়তে পারে।
স্ক্যাবিস কি পুনরায় হতে পারে?
হ্যাঁ, স্ক্যাবিস পুনরায় হতে পারে যদি আপনি আবার সংক্রামিত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসেন বা আপনার ব্যবহৃত জিনিসপত্র সঠিকভাবে পরিষ্কার না করা হয়।
স্ক্যাবিস থেকে মুক্তি পেতে কত সময় লাগে?
চিকিৎসা শুরু করার পরে, চুলকানি কমে যেতে কয়েক দিন থেকে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে, কারণ ত্বকে মাইটগুলির প্রতি অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া থাকে। তবে, মাইটগুলো ধ্বংস হওয়ার সাথে সাথে সংক্রমণ সেরে যেতে শুরু করে।
স্ক্যাবিসের চুলকানি কমানোর জন্য কি কোনো স্প্রে বা ইনজেকশন আছে?
স্ক্যাবিসের জন্য সাধারণত টপিকাল ক্রিম, লোশন বা মুখে খাওয়ার ঔষধ ব্যবহার করা হয়। স্প্রে বা ইনজেকশন সরাসরি স্ক্যাবিসের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয় না, তবে কিছু ক্ষেত্রে ডাক্তার ত্বকের চুলকানি কমানোর জন্য অন্য ঔষধ দিতে পারেন।
উপসংহার
স্ক্যাবিস একটি কষ্টদায়ক চর্মরোগ হলেও, সঠিক ঔষধ এবং যত্নের মাধ্যমে এটি সম্পূর্ণরূপে নিরাময়যোগ্য। পারমেথ্রিন, সালফার মলম এবং ইভারমেকটিনের মতো ঔষধগুলি স্ক্যাবিস চিকিৎসায় অত্যন্ত কার্যকর। মনে রাখবেন, যেকোনো ঔষধ ব্যবহারের আগে অবশ্যই একজন যোগ্যতাসম্পন্ন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু করলে এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে আপনি এবং আপনার পরিবার স্ক্যাবিস থেকে সুরক্ষিত থাকতে পারবেন। নিজের যত্ন নিন এবং সুস্থ থাকুন!