বাংলাদেশে প্রতি বছর বিভিন্ন ক্যান্সারে প্রায় ২ লাখ মানুষ আক্রান্ত হন, এর মধ্যে শুধু স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন প্রায় ২২ হাজার মহিলা। যার মধ্যে বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন প্রায় ১৫ হাজার, অর্থাৎ চিকিৎসার অভাবে স্তন ক্যান্সারে মৃত্যু বরণ করছেন শতকরা প্রায় ৭০ ভাগ। Breast Cancer Information and Overview, details about breast cancer.
প্রাথমিক পর্যায়ে যথাযথ রােগ নির্ণয় ও উপযুক্ত চিকিৎসায় এই সমস্ত রােগ নিরাময়ের সম্ভাবনা প্রায় ১০০ ভাগ। কিন্তু চিকিৎসা না করালে মৃত্যুর ঝুঁকিও শত ভাগ।।
বৃহৎ আকৃতির স্তন সম্পন্ন মহিলাগণ আশংকা করেন যে, তাদের স্তনে টিস্যু বা কলার পরিমাণ বেশি, যা স্তন রােগের জন্য উচ্চ মাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণ। এ ধরনের কোন প্রমাণ নেই, যদিও বৃহৎ আকৃতির স্তন সম্পন্ন মহিলাদের অনেকেই স্তন রােগে আক্রান্ত হয়েছেন।
স্তন বৃন্তের চারপাশের রঞ্জক এলাকার নাম এরিওলা। যদি স্তন বৃন্তের এরিওলা কিংবা স্তনের যে কোন অংশ বাইরের দিকে ঠেলে উঠে অথবা এ সময়ে ভেতরের দিকে ফুলে উঠে, তখন অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। স্তন বৃন্ত থেকে স্বল্প পরিমাণ তরল পদার্থ নিঃসৃত হলে সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু ক্ষরণের রং যদি লালচে বাদামি হয় তাহলে দেরি না করে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
ব্রেস্ট ক্যান্সার বা স্তন ক্যানসার কি ও কেন হয়?
স্তনের বেশির ভাগ পিন্ড বা চাকাগুলাে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ নয়। দুধ উৎপাদন কোষ ও নালিকা উভয় স্তনে সুবিন্যস্ত অবস্থায় থাকে। মাসিক চক্রের সময় তা বেড়ে যায়। এ সময়ে হরমােনের ওঠানামা এবং স্তন টিস্যু সমূহ ফুলে যাওয়ায় ব্যথা অনুভব হয়। এই অবস্থাকে বলে ফাইব্রোসিসটিক স্তন রােগ। সিস্ট এবং ফাইব্রোএডেনােমা এ দু‘ধরনের পিন্ড বা চাকা প্রাণঘাতী নয়।
এটাকে বিনাইন বলা চলে অর্থাৎ ঝুঁকিপূর্ণ নয়। মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ বা প্রাণঘাতি পিন্ড বা চাকাসমূহ শক্ত ধরনের এবং তা এ জায়গায় স্থায়ী থাকে। পক্ষান্তরে সিস্ট বা ফ্রাইব্রোএডেনােমায় চাকাগুলাে চারপাশ নড়াচড়া করতে পারে এবং তা তুলতুলে হতে পারে। এ জন্য স্তনে কোন ধরনের লাম্প বা চাকা দেখা দিলে তা দেরি না করে চিকিৎসককে দেখাতে হবে।
এক সময়ে গবেষণায় বলা হতাে যে, স্তন রােগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ যা কিছু আছে, তার সবই আসে গর্ভনিরােধক বড়ি থেকে। কিন্তু কালের আবর্তে এ ধারণা পরিবর্তিত হয়েছে। বর্তমানে গবেষকগণ স্তন রােগের ক্ষেত্রে পারিবারিক ইতিহাসকে বেশি গুরুত্ব দেন।
যে সকল মহিলা নিয়মিত ব্যায়াম করেন ও পরিমিত পানাহার করে থাকেন তাদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কম।
যে সকল মহিলা নিজেদের সন্তানদের বুকের দুধ খাওয়ান, তাদেরও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকাংশে কম ।
Breast Cancer Information and Overview
আমেরিকান ক্যান্সার সােসাইটি ও ন্যাশনাল ক্যান্সার ইন্সটিটিউট দ্রুত ও প্রাথমিক অবস্থায় স্তন ক্যান্সার শনাক্তকরণের জন্য নিন্মােক্ত সুপারিশ করেন :
- ১৯/২০ বৎসর বয়স থেকে প্রত্যেক মহিলারই মাসে অন্তত একবার
নিজে নিজে স্তন পরীক্ষা করা উচিত।
- ৩৫–৪০ বৎসর বয়সে প্রত্যেক মহিলারই অন্তত একবার Baseline ম্যামােগ্রাম করানাে উচিত, যাতে পরবর্তী সময়ে কোন সমস্যা দেখা দিলে এর সাথে তুলনা করা যায়।
- যাদের বয়স ৪০–৪৯ বৎসরের মধ্যে তাদের প্রত্যেকের অন্তত ২ বৎসর পরপর একবার ম্যামােগ্রাম করানাে কর্তব্য।
- ৫০ বৎসরের উর্ধ্বে প্রত্যেক মহিলার বছরে একবার অবশ্যই ম্যামােগ্রাম করানাে উচিত।
- স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়া মানেই মৃত্যু নয়। এর চিকিৎসা আমাদের দেশেই আছে। কেবল নিজে সতর্ক থাকুন এবং প্রাথমিক অবস্থায়ই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।