মেনিনগোকক্কাল ইনফেকশন কি

Spread the love

Last updated on May 28th, 2024 at 10:19 am

মেনিনগোকক্কাল ইনফেকশন হচ্ছে Meningococcus ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট যে কোনো অসুস্থতা । এই ইনফেকশন এর ফলে মেনিনজাইটিস অথবা সেপ্টিসেমিয়া হতে পারে। মেনিনগোকক্কাল ইনফেকশন একটি গুরুতর ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ যা Neisseria meningitidis নামক ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়। আজকে আমরা মেনিনগোকক্কাল ইনফেকশন কি এই ব্যাপারে জানবো।

এই সংক্রমণ মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ডের চারপাশের আবরণ (মেনিনজেস) এবং রক্ত প্রবাহে সংক্রমণ ঘটাতে পারে। এটি দ্রুত এবং মারাত্মকভাবে ছড়াতে পারে, বিশেষত শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে।

মেনিনগোকক্কাল ইনফেকশন এর কারণ কি?

মেনিনগোকক্কাল ইনফেকশন মূলত নেইজেরিয়া মেনিনজাইটিডিস নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত হয়ে থাকে।

এই ইনফেকশনের ফলে সৃষ্ট রোগগুলো কি কি? এই ইনফেকশনের ফলে সৃষ্ট রোগগুলি হচ্ছেঃ-

মেনিনজাইটিস

মেনিনজাইটিস হছে মস্তিষ্কের মেমব্রেন এর প্রদাহ। এছাড়া এই ইনফেকশন সেরেব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড এবং কেন্দ্রীয়স্নায়ুতন্ত্রে সংক্রমিত হতে পারে। এর ফলে মস্তিষ্ক এবং স্পাইনাল কর্ড এর মারাত্বক ক্ষতি হতে পারে ।

মেনিনগোকক্কাসেমিয়া

মেনিনগোকক্কাসেমিয়া হচ্ছে রক্তের প্রদাহ যা থেকে ডিসেমিনেটেড ইন্ট্রাভাসকুলার কোয়াগুলেশন এর মত মারাত্বক অবস্থা সৃষ্ট হতে পারে ।

অন্যান্য

মেনিনগোকক্কাল ইনফেকশন হতে নিউমোনিয়া, মায়োকার্ডিটিস, পেরিকার্ডিটিস, কনজাংটিভাইটিস ইত্যাদি রোগ হতে পারে।

মেনিনগোকক্কাল ইনফেকশন কি

মেনিনগোকক্কাল রোগটি কাদের হতে পারে?

মেনিনগোকক্কাল রোগটি যে কারও হতে পারে। কিন্তু এই রোগের ঝুঁকিতে সবচেয়ে বেশি থাকে-

• স্কুল এবং কলেজের ছাত্ররা

• নবনিযুক্ত সৈনিক

• স্বাস্থ্য সেবায় নিযুক্ত লোকজন

• গবেষণা কাজে নিযুক্ত লোকজন

• কিছু রোগে আক্রান্ত লোকজন যেমনঃ-যাদের প্লীহা নেই

• যেসকল জায়গায়, মেনিনগোকক্কাল ইনফেকশন এর সংক্রমনের প্রবনতা অনেক বেশি, এমন জায়গায় ভ্রমন করলে

সংক্রমণের ধরন

মেনিনগোকক্কাল ইনফেকশন প্রধানত দুই ধরনের হতে পারে:

  1. মেনিনজাইটিস: মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ডের চারপাশের মেনিনজেসের সংক্রমণ।
  2. মেনিনগোকক্কেমিয়া: রক্ত প্রবাহের সংক্রমণ, যা সেপসিসের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

মেনিনগোকক্কাল রোগে আপনি কিভাবে আক্রান্ত হতে পারেন?

• আক্রান্ত ব্যাক্তির হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে

• আক্রান্ত ব্যাক্তির সংস্পর্শে আসলে একই সংগে বসবাস করলে একই গৃহস্থালী জিনিস পত্র ব্যবহার করলে

• মুখের লালার মাধ্যমে

• একই পাত্রে খাবার খেলে

মেনিনগোকক্কাল রোগের লক্ষণগুলি কি কি?

সাধারণ লক্ষণগুলো হলো-

• জ্বর হওয়া, তীব্র মাথাব্যথা, মাথা ঘোরানো, বমিবমি ভাব

• ঘার শক্ত হয়ে যাওয়া

• ফটোফোবিয়া

• অস্থিসন্ধিতে ব্যথা

• মনস্তাত্বিক পরিবর্তন

মেনিনগোকক্কাল রোগের চিকিৎসা

মেনিনগোকক্কাল ইনফেকশন একটি মেডিকেল জরুরি অবস্থা এবং দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন। সাধারণত, শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। সময়মতো চিকিৎসা না পেলে, এটি মস্তিষ্কের ক্ষতি, শ্রবণশক্তির ক্ষতি, অথবা মৃত্যু ঘটাতে পারে।

মেনিনগোকক্কাল রোগের প্রতিরোধ

মেনিনগোকক্কাল ইনফেকশন প্রতিরোধের জন্য ভ্যাকসিন উপলব্ধ। এই ভ্যাকসিনগুলো সাধারণত কিশোর-কিশোরী এবং উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের দেওয়া হয়। এছাড়াও, সংক্রামিত ব্যক্তিদের থেকে দূরে থাকা এবং ভালো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা গুরুত্বপূর্ণ।

মেনিনগোকক্কাল ইনফেকশন গুরুতর হতে পারে, তবে সময়মতো সঠিক চিকিৎসা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে এর ঝুঁকি কমানো যায়।

কত দ্রুত উপসর্গগুলো দেখা যায়?

সংক্রমনের ২-৩ দিনের মধ্যে রোগের লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়, সাধারনত ৫ দিনের মধ্যে দেখা যেতে পারে।

মেনিনগোকক্কাল রোগ সম্পর্কে আপনার জানা দরকার কেন?

প্রতি বছর এ রোগে আক্রান্ত রোগীর ১০% রোগী মারা যায় এবং যারা বেচে থাকে, তাদের ২০% রোগী স্থায়ী ভাবে নানা রকম শারীরিক অক্ষমতায় ভোগে ।

মেনিনগোকক্কাল রোগটির কোন চিকিৎসা আছে কি?

প্রাথমিক অবস্থায় রোগটি নির্ণয় করা গেলে, উপযুক্ত এন্টিবায়োটিক এর মাধ্যমে চিকিৎসা সম্ভব। তবে এই চিকিৎসা ব্যয়বহুল এবং সময় সাপেক্ষ।

মেনিনগোকক্কাল রোগটি প্রতিরোধের উপায় কি?

ভ্যাকসিন নেয়ার মাধ্যমে, মেনিনগোকক্কাল ইনফেকশন প্রতিরোধ করা যায়।

মেনিনগোকক্কাল ভ্যাকসিন কি নিরাপদ?

মেনিনগোকক্কাল ভ্যাকসিন নিরাপদ এবং কার্যকরী । সব ভ্যাকসিনের মতই সামান্য পরিমান সমস্যা থাকতে পারে। এর মধ্যে ইনজেকশনের জায়গায় ব্যথা, লাল হয়ে যাওয়া অথবা ১-২ দিন অল্প পরিমান জ্বর থাকতে পারে। অ্যালার্জির মত তীব্র ক্ষতিকারক প্রভাব খুবই কম।

ইনসেপ্‌টা বাংলাদেশে নিয়ে এল, মেনিনগোকক্কাল মেনিনজাইটিস প্রতিরোধে- ইনগোভ্যাক্স

মেনিনগোকক্কাল মেনিনজাইটিস প্রতিরোধে একটি কার্যকরী ভ্যাকসিন।

এই ভ্যাকসিন এর ডোজ কয়টি? কত দিন পর এই ভ্যাকসিন পুনরায় নিতে হয়?

২ বছরের ঊর্দ্ধে ০.৫ মি.লি. এর শুধু মাত্র একটি ডোজ, যেকোন দিন। ৩ বছর পর একটি বুস্টার ডোজ নিতে হবে, যদি পুনরায় ইনফেকশনের ঝুঁকি থাকে।

গর্ভাবস্থা এবং স্তন্যদানকালে কি এই ভ্যাকসিন নেয়া যায়?

গর্ভাবস্থায় এবং স্তন্যদানকালে মেনিনগোকক্কাল মেনিনজাইটিস এর ভ্যাকসিন নেওয়ার পর্যাপ্ত তথ্য জানা নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী গর্ভাবস্থায় এবং স্তন্যদানকালে এই ভ্যাকসিন নেওয়া যেতে পারে।


Spread the love

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *